মোহাম্মদ ইকবাল'র ৫টি কবিতা
মোহাম্মদ ইকবাল'র ৫টি কবিতা

কবি : মোহাম্মদ ইকবাল

কবি পরিচিতি মোহাম্মদ ইকবাল বাবা- মোহাম্মদ আব্দুল গনি (অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর) মা-জয়তুন নাহার বেগম (গৃহিণী) জন্ম-২৯শে মে ১৯৬২ ইং মৌলভীবাজার বৃহত্তর সিলেট জেলা। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ১৯৯৪ ইং থেকে স্থায়ী ভাবে বিলেতে বসবাসরত লেখালেখির পাশাপাশি নিজ ব্যবসা দেখাশুনা করে আসছেন। email :- mohammed-iqbal1@hotmail.co.uk Facebook ID মোহাম্মদ ইকবাল। গ্রন্থ তালিকাঃ- স্রষ্টার শৈল্পিক হাত (কবিতা ২০১৬) নিরংসু ক্ষপায় (কবিতা ২০১৬) ইস্কাপনের বউ, (কবিতা ২০১৭) জাফরানি মৌচাক (কবিতা ২০১৮) যৌথ গ্রন্থ পঙতিস্বজন (কবিতা ২০১৬) প্রবাসী কবিদের নির্বাচিত প্রেমের কবিতা (কবিতা ২০১৭) সংহতি নির্বাচিত কাব্য সংকলন -৩ (কবিতা ২০১৭) পদাবলির যাত্রা (কবিতা ২০১৮) বসন্ত বিন্যাস প্রকাশিতব্য ( কবিতা ২০১৯)

বৃক্ষ এবং নারী


বিস্বাদের তিক্ততা যখন আকাশে গিয়েই ঠেকে
ঠিক তখন থেকেই কী নিসর্গের চাতাল উলঙ্গ করে বাহরি পত্র পল্লব ঝরাতে থাকো?
ছিন্ন করো দেহের বাকল?
অন্তহীন অভিমানে!

দৃশ্যের অদৃশ্য বেদনায় কুঁকড়ে গেলেও পুণঃ আবির্ভাব নিশ্চিত যেনে মনে স্বস্তি,
সময়টা তোমাদের যৌবনবতী হলে আবারও নতুন ফুল সবুজ পাতা!
রঙ রস ঘ্রাণে প্রকৃতি আবারও সেই বৃন্দাবন সাজে!

নারীর সময় যৌবনবতী হলে একাদশির চাঁদ ওঠে তাঁর শরীরময়,
ফোটে সুঘ্রাণে অজস্র সুবাসিত গোলাপ।
ভালোবেসে তাঁর সুবাস কেউ হয়তো তোলে রাখে যতনে হৃদয়ের সিন্দুকে,
দৈবাৎ সিন্দুকটি হারিয়ে গেলে শুভ্র বসনের আচ্ছাদন তলে নির্বাসিত হয় নারীর সবটুকু রঙ!
বর্ণহীন হয়ে পড়ে তাঁর পৃথিবী!

সিন্দুক হারা নারী বৃক্ষের মত আবারও সবুজ হতে পারেনা।
বৃক্ষ নিয়ন্ত্রিত হয় প্রাকৃতিক নিয়মে,
আর নারী?
সেতো সমাজ, সামাজিক রীতিনীতি, আইন, কিংবা ধর্মে!
যার প্রণেতা পুরুষগণের স্বার্থের চাপাতি তলে বলি নারীর সবটুকু জ্যোৎস্না নন্দিত সুবাস!

আঁধার বন্দনা

পরদা টেনে দাও সবকটি জানালায়, দরজার কপাটেও খিল!
আকাশ বাতাস নদী,পৌরুষহীন শহর গ্রাম।
ঢেকে দাও অরণ্য পর্বত সমুদ্র,
ঢাকো সূর্য চন্দ্র নক্ষত্র গুলিও।
আসুক ধেয়ে বিভীষিকাময় ঘোর অমানিশা,
উলঙ্গ চোখের চাতালে নগ্ন আলোর নিচে মঞ্চস্থ হতে দেখি মানবতার বলাৎকার উৎসব।
আর কত?
ক্ষমতাধরদের ভর করে আছে অসুরের অশরীরি আত্মা!
খাবার টেবিলে মানবতার ঝলসানো শরীর,
শয্যায় বিবস্ত্র রেশমী কোমল মানবতা!
রক্তের হোলিতে অসুরগুলি উন্মত্ত হলে;
তাঁদের হাড়েই শান দেব কলমের নিব।
হাড়ের ফসফরাসেই ঘটুক মানবতার বিস্ফোরণ!
তার আলোয় দুরীভূত হোক অন্ধকারের বিভীষিকা!
মানবতার গলিত শব আর যেন না ভেসে ওঠে ;
মিসিসিপি,নাইজার,দানিউব,ফোরাত,সিন্ধু,গঙ্গা, নাফ কিংবা শীতলক্ষার জলে!

বিলবোর্ড

হাসিটা একটু বিস্তৃত হলেই বিলবোর্ডটি প্যানেল সুদ্ধ পুড়ে ভস্মিভূত হতো।
স্ফীত বক্ষ কিংবা নিতম্বের মাংসের বাহুল্যে শরীরের প্রতিটি বাঁকই রীতিমত কাব্যিক
অত্যাধুনিক ফিগার চৈতন্যের পরিপন্থী যদিও সেটা!
পরনের শাড়ীই উলঙ্গ করে ঢেকে আছে শরীর!
বিজ্ঞাপনের পণ্য কোনটি?
শরীর?
না কি বিজ্ঞাপন চিত্রে আবছা প্রদর্শিত বস্তুটি?
প্রতি ভোরে ফ্লাইওভার পার হতে বিলবোর্ডে স্মিত হাসির রমণীকে দেখি!
এখন তিনি আর কোনো নারী নন!
তাঁর সময়, যাপিত জীবন এবং হৃদয়ের নন্দন হতে সুবাসিত নিশিগন্ধা নির্বাসিত!
শরীর ভাঁজে ভেট ফুলের মত ফুটে থাকতে দেখি কড়কড়ে টাকার নোটের ফুল!

ভয়

কবর গুলোও আজকাল নিরাপদ নয়
কবরের ছাদে ঝুলে থাকে চেনা সেই মুখগুলি,
বার্নিশ করা মুখের আড়ালে এ কী অদ্ভুত মুখচ্ছবি ?
বারংবার ভুলই করেছি।
প্রথমে বুকের পাঁজরের হাড় ভেঙ্গেই ওদের ভয় দেখিয়ে যেতাম,
এখন ওরা রীতিমত ভয়হীন!
মাকড়সার মত দেহের পাঁচিল বেয়ে সরাসরি নেমে আসে কলিজায়!
খামচে ধরে ষোল আগুলে কলিজার বুনন
পালিয়ে শ্মশান ঘাটের চিতার আগুনে আশ্রয় নিলেও সেখানে তাড়া করে মুখগুলি!
শ্মশানে চিতার আগুনই শেষ কৃত্য ,
বানিজ্য সেখানেও!
ঐ চিরচেনা মুখ ,মাড়ওয়ারি আলখেল্লা ,
পৈতা, টিকি কপালে চন্দন তিলক, হাতে-
পিতলের লুটায় ভর্তি রক্তে পিপাসা মেটায়!
লাশের পিঠ থেকেও তুলে মুনাফা
সেটা হউক কবর, কিংবা চিতা!

জলপ্রপাত ও নারী

দর্শনের সৌরভে কথার শরীর যৌবনবতী
নায়েগ্রা দেখার বিস্ময় কাটার পূর্বেই বলে উঠলে;
কী দুরন্ত প্রিয়ংবদ জলধি!
চড়াই উৎরাই পরাভূত করে প্রিয়ার পায়ে আছড়ে পড়াই যেন প্রণয় পূর্ণতা!
প্রকৃতির জরায়ুর আর্দ্রতায় কোরক মেলে ধরে দল
যেমন আর্দ্র নারীও প্রণয় জলে
বন্ধ কামরা রাতের আঁধারে উর্বর হলে নারীর কান্তির শরীর ভাঁজে ফুটে অজস্র নিশিগন্ধা।
ফসলের সুঘ্রাণ ও দুগ্ধবতী স্তনের বোটায় শিরদাঁড়া সোজা করে উঠে দাড়ায় চতুর্থ প্রজন্মের পৃথিবী!


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান