কবিবিধ্বংসী কবিতার উপাখ্যান
(প্রিয় কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ও কবি মুনিরা চৌধুরী স্মরণে)
কবিতা পরজীবী সর্বভুক!
নিরন্তর গ্রাস করে কবির মগজ, অস্থি মজ্জা হৃৎপিণ্ড
কেড়ে নেয় তাঁর স্ত্রী পুত্র সংসার
কখনও কবিকেও ছাড়িয়ে যায় কবিতার প্ররাক্রম!
কবিতা অতিক্রম করে সমস্ত ভৌগলিক সীমারেখার কাঁটাতার।
তৃণভোজী কবিকে গিলে ফেললে কবিতারাও হয়ে ওঠে মাংসাশী।
কখনও কবিতা নিজেই কবির জীবন 'ভোগ আরতিতে' চেয়ে বসে।
ক্যানসারের নীল খামে কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুও পেয়ে যান জীবন অর্ঘ্যে সমর্পনের ভোগ আরতির চাহিদাপত্র।
মেহেকানন্দ তাঁর একান্ত নদীতে ভেসে আসে কবি মুনিরা চৌধুরীর পয়গামও।
আমরা পাথর হই!
হৃদয়ের উনুনে দাউদাউ জ্বলে চিত্ত পোড়া আগুন
নগ্ন চোখের সামনে পুড়ে খাক মেহেকানন্দ নদী!
বজ্রাহত বিদ্যুতের বাগান!
দুচোখ বেয়ে নামে কাচ শীতল মঞ্জুময় পদ্যের ধারা,
মথুরানন্দায় মুনিরানামার শোক!
বুকের ভেতর গোপনে দাফন করি নিজ লাশ!
খুঁজি ভোগ আরতির তালিকা শীর্ষে কে? মোহাম্মদ ইকবাল না কি অন্য কেউ?
তবে কেউ কেউ অবশ্য লিখি কবিবিধ্বংসী কবিতার উপাখ্যান।
স্তব
অগনিত আলোক বর্ষ দূরের অহল্যা প্রেমী
ভালোবাসার এ কেমন সম্মোহনী মায়া
চির অদেখা অস্পর্শিত
তারপরও চোখের রেটিনাতে এঁকে যাই তাঁর রূপের দ্যুতির ক্যালিগ্রাফি
হৃদয় ক্যানভাসে ভালোবাসার সুনিপুণ পোট্রেট
সে থেকে চোখ অন্ধ হৃদয় বধির দেখে না শুনে না পৃথিবীর অন্য কোনো রঙ রূপ আলো
বাঁশির সুর নদীর কলতান পাখিদের গান
কেবলই নেশাগ্রস্ত হই ডুবে থাকি আজন্ম নেশায় চির তৃষ্ণাতুর
তোমাতেই মরণ হোক আমার সুপ্রিয়...........
শ্মশানে পুড়ে সভ্যতার চিতা
শ্মশানের শেষ চিতাটিও পুড়ে ছাই
খানিক আগেও একটুআধটু ধোঁয়া উঠছিলো,
শ্মশান ঘাটে নেমে এসেছে বধির সন্ধ্যা
ধুসর আকাশে তামাটে হলুদ বিমর্ষ মেঘ
পুরো তল্লাটই যেনো ইট-পাথরের তৈরি কবর বহুতল বিশিষ্ট আকাশচুম্বি শ্মশান
উড়াল সেতু হাইওয়ে সবই যেনো শেষ
বেক টু স্কোয়ার ওয়ানে
পথ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ফের দাঁড় করিয়ে দেয় বাড়ির দরজাতেই
কাদা মাটি জল শুকিয়ে কাঠ
মানুষ পশুপাখি জানোয়ারের ধাতব হৃৎপিণ্ড, ধাতব প্রাণ,
বারংবার হোঁচট খেয়ে রক্তাক্ত পাথুরে এপিটাফে স্কাইকিসিং এপিটাফ
পত্র পল্লবহীন উলঙ্গ বৃক্ষরাজি
ডালে বসা পিতলের পাখি চোখ থেকে ঝরাচ্ছে আগুনের বৃষ্টি,
বিকলাঙ্গ মাছের পেট থেকে ভেসে ওঠে প্রতিবন্ধী সমুদ্রের বিবর্ণ ঢেউ
অতিকষ্টে প্লাস্টিকের পানি তটরেখায় আঁচড়ে পড়ে
জরায়ুতে দুরারোগ্য ক্যান্সারের গভীর ক্ষত নিয়ে পৃথিবী বোবা আর্তনাদ,
মানুষ,তোমরা তোমাদের ভালোবাসো, প্রকৃতিকে ভালোবাসো,হৃদয়ে হৃদয় রাখো মানুষ,
বাঁচাও পৃথিবী!
নগদ প্রত্যাশী কিছু মানুষের জন্যে আমি যে তোমাদের বসবাস উপযোগী থাকতে পারছিনা
ভাব জগতের প্রেমিক
ভাবের চৌকাঠে সিঁদুরের কৌটা হাতে দাঁড়িয়ে পলকহীন বোবা দৃষ্টিতে কী খুঁজো?
তোমার মত আমিও যে ভাব জগতের নগন্য তাপস
বাস্তবে কবরের কফিনবন্ধি লাশ বৈ কিছুই নই
কবরের লাশ কী কেউ ছুঁয়েও দেখতে পারে?
তারপরও যদি সিঁদুর রঙে রাঙাতে চাও হৃদয়
চলো আমরণ ভাব জগতের প্রেমিক হই আমারা....