কবি - মোহাম্মদ ইকবাল
ভয়
চাঁদ সূর্যকে পাহারায় বসিয়েছি
তারাগুলো ছড়িয়ে দিয়েছি পাহাড় নদী অরণ্যে
শতভাগ নিশ্ছিদ্র ভালোবাসার ঘর
মা মনসা ক্ষমা করো,
আমিতো কেবলই রূপ যৌবনের এক নগণ্য ধ্রূপদী তাপস
বাসর পালঙ্কে যখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনে বেহুলা
আমি ধার ধারিনা স্বর্গ নরক কিংবা পৃথিবীর!
অর্থহীন মনে হয় হাবিয়ার ভয়াল রূপ!
ভালোবাসার পাত্রে নিমিষেই পান করি ছোবলের ভয় সাপের বিষ!
সমান্তরাল জীবন
চিতায় চড়েই দেহের অস্তিত্ব খুইয়েছি!
যদিও মাথার খুলি অক্ষতই পড়েছিল চিতার বেদিতে,
অর্জুনগাছের পাতার নিচে সেটা চাপা পড়ে আছে কতো কাল!
সময়ের ছোবলে বিবর্ণ ওটা,
কেউ কেউ অবশ্য রেসের মৃত ঘোড়ার পিঠে আমার অস্তিত্বহীন শবদেহ চড়িয়ে চরম সুখ অনুভব করেন!
ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে,
ওটি একটি জীবনের যবনিকা পাত দৃশ্য হতেই পারতো, তবে বাধ সেধেছে আছে অন্যখানে!
আজকাল আলোর এক চঞ্চল প্রজাপতি প্রায়শ খুলির উপর উড়ে বসে শুনিয়ে যায় তাঁর ভালোবাসার কথা!
কেনো জাগাতে চাও?
সুপ্রিয় আলোর প্রজাপতি তুমি কি মানবী হবে?
শ্মশান ঘাটের পরিত্যক্ত মন্দিরকেই মথুরা বৃন্দাবন বানাবো?
জেগে উঠবো অন্য এক জনমে!
তুমি কি আরেকটি সমান্তরাল জীবনে আমার রাধা হবে?
বিরহী আষাঢ়
ঢাকার আকাশের মতো আজ পহেলা আষাঢ়ে অঝোরে ঝরে গেছে লন্ডনের বিরহী আকাশ!
সড়কদ্বীপের সোডিয়াম বাতিগুলোর আলো কদম ফুলের মতোই ফুটে আছে!
ঝমঝম বৃষ্টিতে রাতে জলঘুমে তলিয়ে গেছে গোটা নগর।
জলঘুমে তলিয়ে গেছে নৈশব্দের শব্দগুলোও!
ফ্লাটের পাশদিয়ে বয়ে চলা ক্যানেলে আমাজন লিলির বৃহৎ পাতায় একজোড়া জলময়ূর মূর্তির মতো স্থবির-এবং ঘুমে!
একপায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে একটি শ্বেত পেলিক্যান,
মেঘের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এসে শুক্লা নবমীর চাঁদ জানান দেয় ; সেও আমার মতো নির্ঘুম!
বিষন্নতায় জানালায় চোখ রাখলে আকাশের আয়নায় ফুটে ওঠে প্রিয় সুপ্রিয় তোমার মুখচ্ছবি,
দৃশ্যটি ফ্রেমবন্দি করার চেষ্টা করতেই উষ্ণ মোমের মত গলে পড়ে আকাশের আয়না!
আষাঢ়ে তবে কি শুধুই বিরহেরই ছবি আঁকা হবে!
স্বাক্ষর
রাত নিশুতি যৌবনবতী হতে থাকলে আমার না লেখা কবিতাগুলো ক্রমে নেশাগ্রস্ত হয়ে ওঠে!
আঁধারে ওগুলো তারার পদচিহ্ন ফেলে রাখা পথ মাড়িয়ে তোমার বাড়ির দিকেই এগোয়!
তোমার ভালোবাসায় ওগুলো সিক্ত নিষিক্ত হয়ে যে ক'টা বাড়ি ফেরে তাদের তুলে রাখি মোবাইল ফোনের নোটপ্যাডে,
শেষে ওগুলোই যে কবিতার পাণ্ডুলিপি হয়ে ওঠে-সেতো তোমার ভালোই জানা,
তারপরও বারংবার প্রশ্ন,
কতবার ঐ ঠোঁট অন্য কাকে ছুঁয়েছে?
কতবার অন্য রমণীর নিকনো আঙিনা ছুঁয়ে এসেছো?
কারো বকুল তলা থেকে কি মুঠো ভরা বকুলের সুঘ্রাণ বুকপকেটে তুলে রেখেছো?
নৌকৌ তোমার কেনো ভিড়ে নতুন কিংবা পুরোনো ঘাটে?
হৃদয়ের গভীরে অসংখ্য দরখাস্ত ভালোবাসাহীন পড়ে আছে,
এসো অন্য সব ভুলে ভালোবাসার স্বাক্ষর দিয়ে ওগুলোর অনুমোদন দেই।