মোহাম্মদ ইকবাল এর কবিতাগুচ্ছ
মোহাম্মদ ইকবাল এর কবিতাগুচ্ছ
মানুষ
কসমোপলিটান নগরের দরজায় কখনও উঁকি দিতে দেখিনা প্রতিক্ষারত কোনো শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ।
মুখাবয়ব ঠাহর করা যন্ত্রই স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে দেয় অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটের ফটক!
ইলিশের স্বাদ সেই কবে খুন হয়ে গেছে হাইব্রিড খাবারের চাকচিক্যময় বিলাসে
গোলাপের খোশবু গিলে খেয়েছে জাগতিক সুগন্ধি প্রসাধন
ঈদ দীপাবলি কার্নিভালে নিরুত্তাপ থাকলেও উত্তাপ ছড়ায়,ভাইরাল হয়, অটোচার্জ মুঠোফোনের খবর।
মানুষের অনুসঙ্গ বায়োনিক বায়োমেট্রিক রোবট,
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মানুষ এখন যান্ত্রিক,
যন্ত্র মানব!
তারপরও কেউ কেউ মানুষ
হ্যা পুরোপুরি রক্ত মাংসের মানুষ...

বিরহী আষাঢ়
ঢাকার আকাশের মতো আজ পহেলা আষাঢ়ে অঝোরে ঝরেছে লন্ডনের বিরহী আকাশ,
সড়কদ্বীপের সোডিয়াম বাতিগুলোর আলো কদম ফুলের মতোই ফুটে আছে,
ঝমঝম বৃষ্টিতে রাতে জলঘুমে তলিয়েছে গোটা নগর,তলিয়েছে নৈশব্দের শব্দগুলোও।
ফ্লাটের পাশদিয়ে বয়ে চলা ক্যানেলে আমাজন লিলির বৃহৎ পাতায় একজোড়া জলময়ূর মূর্তির মতো স্থবির-এবং ওরা ঘুমে
একপায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে একটি শ্বেত পেলিক্যান,
মেঘের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এসে শুক্লা নবমীর চাঁদ জানান দেয় ; সেও আমার মতো নির্ঘুম!
বিষন্নতায় জানালায় চোখ রাখলে আকাশের আয়নায় ফুটে ওঠে সুপ্রিয় তোমার মুখচ্ছবি,
দৃশ্যটি ফ্রেমবন্দি করার চেষ্টা করতেই উষ্ণ মোমের মত গলে পড়ে আকাশের আয়না,
আষাঢ়ে তবে কি শুধুই বিরহেরই ছবি আঁকা হবে...

অলিক প্রেমের বিশুদ্ধ বসত
জন্মান্তরের প্রমিক
প্রতিনিয়ত প্রভাত ও সায়হ্ন প্রেমের আবিরে দিগন্ত রাঙিয়ে ক্লান্তিহীন পথচলা
তারপরও সাক্ষাৎ ঘটেনা কখনওই
এক পৃথিবীর বাসিন্দা অথচ দুই চোখের মতো কাছাকাছি থেকেও অদেখা অধরা
আকর্ষণের তীব্রতা কেউ কাউকে ছাড়িয়ে নয়
বৃত্তাকার কক্ষপথে সমগতির চিরাচরিত অন্বেষণ।
ভালোবাসার গণিত শেখো প্রেমী
আজন্ম তৃষ্ণাকাতর অতৃপ্তির উপচ্ছায়া গ্রাস করে রাখবে হৃদয়
আবর্তিতই থাকবে অনন্তকাল।
বিষম ভালোবাসা ও বিপ্রতীপ গতিতে বৃত্ত ছাড়ো
মেশো সরলরৈখিক সমীকরণের সুত্রে
এ সঙ্গম রুখে সাধ্য কার?
সরলরেখার অসম কোনো বিন্দুতেই দাঁড়িয়ে যাবে অলিক প্রেমের বিশুদ্ধ বসত......

লাগাম ছেঁড়া আয়ুর ঘোড়া
(একষট্টিতম জন্মদিনের কবিতা)
বয়স একটি সংখ্যা বৈ কিছুই না
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একমুখী সফর।
খেপা সফর।
লাগাম ছেঁড়া আয়ুর ঘোড়া।
সফরের ট্র্যাকের একষট্টিটি হার্ডেলস ইতোমধ্যে টপকানো শেষ,
দিনটা বিশেষ বলাই যেতে পারে।
বিশেষ বিশেষ দিনে অচৈতন্যে হৃৎপিণ্ডের অলিন্দে মোচড় দিয়ে উঠে কষ্টনীল শোণিতধারা,
হৃদয়ের অন্তঃ কুঠিরে বারবার উঁকি দেয় মা-বাবার প্রিয় মুখাচ্ছবি।
উল্টোরথে চড়াও হয় স্মৃতি-অন্বেষী মন,
প্রতিটি প্লাটফর্মেই থামে রথের চাকা,
শৈশব, কৈশোর, কিংবা দুরন্ত যৌবন।
দিক বিপ্রতীপ গতি, কিন্তু একমুখো ছুটে আয়ুর ঘোড়া, স্মৃতির রথ।
তারপরও বিরামহীন ছুট।
ভালোবাসো তাই অনন্তকাল দ্বিধাহীন অজস্র হার্ডলস টপকানোর ঝুঁকি হৃদয় নেবেই,
বেঁচে থাকা ভালোবাসারই জন্য
বেঁচে থাকা অনন্তকাল...


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান