যমজ নীরবতা
এক.
পাহাড়ি ঝরনার পাশে পাথর-নুড়ি বন
নির্বাচিত নৈঃশব্দ্যগুলো কুড়িয়ে এনেছি;
বহুদিন কথা বলেছি আমরা। এখন নির্বাক।
নীরবতাই আমাদের ইশারাভাষা। এই যে
বন্ধ দরোজা, নিরুত্তর প্রশ্নের দাপাদাপি—
এসবের পশ্চাদভূমি আর ইতিহাস রয়েছে;
পাথরের ইতিহাস আছে। ইতিহাস আছে
নৈঃশব্দ্যের ভেতর মুখ গুঁজে থাকার; স্তূপীকৃত
পাথরের তলদেশ থেকে বেরিয়ে আসছে
গ্রীষ্মকালীন হিম; সংক্ষিপ্ত এবং খণ্ড খণ্ড
যুদ্ধের পর, আমরা বারবার ফিরে আসছি
বন্ধ দুয়ার ও স্তূপীকৃত পাথরের কাছে
নৈঃশব্দ্যের শিখায় সেঁকে নিচ্ছি হাতের তালু;
পাথরের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা বাতাসই
আজ প্রশান্তি দিক আমাদের অস্থিরতাকে। ভয়,
আমাদের চারপাশে নির্মাণ করছে— দেয়াল,
কোনও শব্দ করবো না। নীরবতাও পারে
দেয়াল ভেদ করে, চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে
দুই.
বরফের স্তূপ জমা বিস্তীর্ণ মাঠে জ্যোৎস্না পড়লে
রাত্রি যে-বর্ণ ধারণ করে— তার সাথে
উন্মোচিত গণকবরের আত্মীয়তা রয়েছে
সাইবেরিয়ান পূর্ণিমার বিবরণ তুলে ধরছো তুমি
আর আমি তাকিয়ে আছি ন্যাটো বাহিনীর
পুষ্পপ্রীতির দিকে— মধ্যপ্রাচ্যে যেসব ফুলবাগান
তৈরি করেছে ওরা, তার বর্ধনশীলতায়
মানুষের রক্ত-মাংস এবং অস্থিগুলোরই অবদান বেশি
এসব ঘটনার ভেতর দিয়ে, আমরা শুধুই
মানুষের মৃত্যু এবং মাটির অভ্যন্তরে
নীরব হয়ে থাকা কঙ্কালের ধারণা পাই
স্বদেশ-বিদেশ, যে ভঙ্গিতেই দেখো না কেন,
গুপ্তহত্যা ও মৃত্যু-সংবাদ মুছে ফেলবার মহিমাই
সম্রাটদের সুখ-সাচ্ছন্দ্য। ওগুলোই তাদের বিজয়
.
যমজ ঢেউ
এক.
যাতনামুহূর্তে কেন দাঁড়ালে না
বসলে না আর্দ্রতম নয়নসম্মুখে
কেন শোকবন্দিকরা বুকে
ওভাবে পালালে— উর্ধ্বশ্বাসে!
অন্তহীন প্যাঁচের সমন নিয়ে আসে
হতাশায় পুষ্ট অজগর;
মন ভাঙে, মুড়মুড় ভাঙ্গে হাড়গোড়,
আকাশবাণীর মতো অস্ফুট স্বর
এখন শ্রবণে ভাসে, শ্রাবণে-আকাশে
জেগে ওঠে— লোহিতপ্রতিমা।
তবু এই দুঃখচোর রাত্রির ভিতর
জ্যোৎস্নার ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসে
আনন্দিত; এঁকে যাচ্ছো জীবনের পাশে
অন্য কোনও জীবনের নির্লিপ্ত ভঙ্গিমা।
দুই
আকাশ, তুমি আকাশপথে উড়ে গিয়েছিলে
দূরের আকাশ চেয়ে—
আকাশ, তুমি পাথরগড়া মেয়ে!
তোমার চুলের মেঘেরা কোনখানে?
এই যে এমন খরায় পোড়া দীল-এ
দিনরাত্রি কাঁদছি ঘেমে-নেয়ে
মমতাজল সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে ফিরে
তোমার, মন-মেঘেরা জানে?
বন-বনানী, সাহারা মাঠ কিংবা হাওয়ার গানে
থামতে হবে তৃষ্ণানদীতীরে
আকাশ, তোমার ছিন্নহিয়ার টানে
ফিরতে হবে— মন-মেদিনী জানে!
.
.