❑ বৈকল্যবিস্ময়
অন্ধের নিকট আলোর কি দায় কিংবা আসমানের নিকট অগণন নক্ষত্রের? ধারকের সাজা নিয়ে চলছে পথিক, পথের নির্মাতা তবে কোন জাল আঁকে?
গোলার্ধ তালুতে নিয়ে যে ড্রিবলিং, ফাঁকে ফাঁকে তার ফোঁসে ওঠা কসরতের হিমেল মৌনত্রাস। ফুল ও পাতার জগতেই রয়েছে বৃন্তচ্যুতির দায়। বিয়ারিং চিঠিরা ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে তাই মুছে ফেলে একদিন প্রেরিত ও প্রাপকের অভিধান।
উত্তুরে বাতাস চিনে গেলে অচেনা হরফ, দখিন দুয়ারে পুষ্পজন্ম লিখে রাখে ফলের নিয়ম। স্বর্ণলতা তবু পরের আশ্রয়ে পরমতা খোঁজে!
❑ অধরা চাঁদের আলো— ৬
চাতুরিবিদ্যা জানি না বলে
পাখির ডানার শব্দ বুকে নিয়ে ডাকি—
ও ভোর আমার, সূর্যবান্ধব চোখ, হে ঋতসখি,
অঙ্গের মুখোশ নিভে গেলে
অধরা চাঁদের আলোটুকু রেখো নিঃসঙ্গ রোদনে,
জীর্ণ ছনঘরে
আত্মরতির শীৎকারে আরো একবার
সেঁটে দিয়ে যাবো
স্বতঃমুচলেকা আর ছিন্ন শ্বাসগ্রাফ,
এসব বাণিজ্য প্রহরের
অভিজাত বর্ণরেখা ছেড়ে।
আচমকা নেচে না উঠলে
যুগল পা ভুলে যাবে পথের প্রণয়,
স্যাঁতারোদে উঁকি দেবে ধুতুরার ফুল,
বোহেমিয়ান ছত্রাক-বায়ু
সেঁতুর ওপারে
ডেকে নেবে অজানা সিডর।
স্বরচিহ্নের উঠোনে জিরিয়ে নেবার পিঁড়ি নেই,
ডুমুরজীবন নিয়ে তাই অন্ধমিস্ত্রি
কখনো দেখে নি
বিন্যস্ত পরাগায়ণে কী রকম পুষ্পশিল্পকাম
সঙ ছুঁয়ে সার করে তোলে
কালপুরুষের উপবন;
তবু একদিন বুননবিদুষী গায়—
'মিলন হবে কতদিনে...'
চাতুরিবিদ্যা জানি না বলে
পাখির ডানার শব্দ বুকে নিয়ে বলি—
সাঁইজি হে, ত্রিদিব চাতক, কী সেই 'বিরলে কিরণ উদয়...?'
তুমিই তো জানো—
একমাত্র নদীর কাছেই পথের মধুর পরাজয়!
❑ ত্রিনয়না সাইরেন
হাঁপিয়ে উঠার পর গাছই আপন
ছায়ায় মায়ায়;
পাতার আড়ালে ওত পেতে থাকা সাপ
হিসহিস করে, তারও প্রচণ্ড খিদে,
পাখিরা নীড়ের মায়া ফেলে উড়ে গেছে
মানুষের ঘরে
মেঘ না চাইতে জলে ভাসে
খাদকের জিভ, তৃপ্তির ভোজের পর
আমরাই সাধু জীবের দয়ার ঘুমে
দীর্ঘ চুল ও দাড়িতে ধূর্ত জট—বলে ওরা— মূর্খ প্রাণায়াম;
ও সাঁইজি, গান গাই আর কান্দি, বলো—
বিবিধ পোশাক
লালসালু রঙে কারা আঁকে
গোপন রসদে?
❑ অধরা চাঁদের আলো—৫
যবনিকার আগেই
দৃশ্যকল্প চিনে নিয়ো প্রতিটি শুরুর,
ঘুম ভেঙে
চোখেরা যেমন
নিত্যাকার ছন্দে হাঁটে
শরীর ও সংহারের যূথচারী পথে।
স্টেশন মানেই বহুবর্ণের প্রত্যাবর্তন
অথচ প্রত্যেকে
পায়ের বেড়ির কাছে কত অসহায়!
দিনরাত্রি
তবু বাক্য-প্রকরণ সূর্য মাখে নমিত অক্ষরে
যখন প্রতিটা বগি জোড়া দিলে
আস্ত রেলগাড়ি হয়ে যায়।
অভিনয় শেষ হলে গ্রিনরুমে পড়ে থাকে
দরিদ্র মেকাপ
আর মঞ্চের অদূরে হাড়িমুখ সিট,
ভুল করে ফেলে যাওয়া স্মৃতির রুমালে
বেভুল জোসনা এঁকে যায়
কোনো আদুরে হাতের
বাদামের খোসা।
❑ কাজকাম
কাজে গিয়ে দেখি—
পৃথিবী কামের দোকান খুলেছে।
হাঁটুর ওপরে ওঠে
মুকুট অনেক দূর— কর্তা ভাঁড় হয়ে গেছে।
কাজকাম গাঁটছড়া
এক রঙিন চশমা— খোলাচোখ থেকে
অসংখ্য বক্রতা লুকিয়েছে।