রাশিদা তিথি । চারটি কবিতা
দেয়াল
নিত্যকার সব রজ্জু ধরে
সত্তায় কেউ টান তো দিলো না!
নিয়তি, এই ভেবে কাটিয়ে দিলাম দিব্যি,
কাঁটা গাছে রক্তিম সুবাসিত কুসুম
সেও তার ঐশ্বর্য দেখিয়ে
সাহসী করে তুলতে পারলো না আজো;
হেসে ওঠা আকাশ দেখার সাথে সাথেই
আঁধারের কথা মনে পড়ে যায় কেনো!
নদীটি যেই ফুলে ফেঁপে বেগবান হয়
বন্যার দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না;
খাঁচা খুলে দিলে প্রথম
শঙ্কা উড়তে পারবো কি আর?
বৃক্ষের কেমন শাখা এ ভার সইতে পারে !
নিয়তি,ভাগ্য, বাঁধা, দেয়াল
প্রাণধারায় হানা দেয়,
উল্লসিত প্রপাত থেমে যায় অবেলায়
শুধু শুস্ক পাথর পরে থাকে একা।
কুশলের জবাবে
অনেকদিন পর যদি দেখা হয়
কুশলের জবাবে স্বল্প স্বরে বলবে জানি, 'ভালো আছি',
হয়তো তাই আছো, হয়তো-বা নেই!
এখন দূরত্ব ব্যথাহীন ক্ষতচিহ্ন মাত্র
গভীরে নেমে দেখা হবে না সেই কাদামাটি
জানা হবে না কেমন আছো এখন।
ইদানিং আমি আলাদা করতে পারি না
ভোর আর সন্ধ্যার আলো
আলাদা করতে পারি না
টগর আর গন্ধরাজের অনুপম বীথির শরীর!
এখন আমার শহরের আবহাওয়া বদলে গেছে
একমাত্র মাঘের হিমেল বাতাস রয়ে গেছে
সবপাতা ঝরে গিয়ে গাছগুলো
যেন মুণ্ডিতকেশ শ্মশানচারী,
এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন,
দিনকে যে যেতেই হয়
চলে গেছে আমাদের প্রিয় কথাবার্তা
শুকিয়ে গেছে কালীগঙ্গা,
চলে গেছে আমাদের স্রোতবহা সময়,
একদিন দু'জনে ফিরে গিয়েছিলাম
হয়তো তুমি একা ফিরেছিলে বা আমি,
দুজনে আছি সুখ আর বেদনার ভগ্নাংশ নিয়ে
কেউ কাউকে দুষছি না,
সঞ্চিত অসুখ ভাগ করে নিতে মিলছিও না।
এই বিকেলে এক পথে দেখা হয় যদি
শুধু, এইটুকু ভাবছি।
হারিয়ে ফেলা হাসি
গতরাতে আমার হারিয়ে ফেলা হাসি
স্বপ্নে খুঁজে পেলাম কুয়াশার পথে
বহুদূর দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল একা
তার ক্লান্ত মুখের পাশে কানপাশা
বেয়ে ফোঁটাফোঁটা ঘাম ঝরে পড়ছিল।
তখন নদীর ওপারে ফসলাক্রান্ত মাঠ জুড়ে
আধো আঁধার আর বাতাসের সঙ্গম
কোথাও যেন একটা শব্দ হলো একবার
কুঁড়ি ঝরে পড়ার,
ভাঙনের শব্দগুলো সব একরকম হয়
যেন যমজ বোন!
তার ক্লান্ত দুটিঠোঁট কী-এক অভিমানে কাঁপতে থাকে
তারপর আবেদন শুন্য দৃষ্টিতে
জড়িয়ে নিলো আমার সমুদয় দৃষ্টির বিস্ময়
অনির্ধারিত পথে অনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে
সান্ত্বনারেখা ধরে সে ছুটছে।
মোড় ঘুরে প্রিয়তম হাসিটি আবার হেসে উঠল ধীরে
ঝুঁকে তার মুখের কাছে মুখ নিতেই,
দেখি ক্ষত থেকে তীব্র বেগে জল নেমে আসছে নিচে
অবিকল হারিয়ে ফেলা হাসির শব্দে।
যা কিছু প্রিয়
ফিরে যদি যেতে চাও, যাও
হবো না দিশেহারা
যেমন থাকে চন্দ্র সূর্য তারা,
কোথাও রাখিনি কিছু
ফিরিয়ে দিয়ে জগৎ সংসার
হয়েছি নির্ভার।
আবার হয়তো ফিরে আসবো
জন্মের প্রথম প্রহরে
জলের অনেক নিচে
খেলে যাবো শর্তহীন
যেখানে সৌজন্যের সুখ-দুঃখ নেই।
হয় হোক নিঃসঙ্গ সাঁতার
তবু পাড়ি দেবো অনেক দূর,
যদি বুদবুদ ওঠে বাষ্পাকুল চোখে
মুছে নেবো নিজ হাতে,
সেখানে মুকমাছেদের সাথে
হবে আমার ভাবের বিনিময়।
সেখানে থাকবে না
ভালোবাসা ও ভালোবাসা ভাঙা খেলা,
ভঙ্গুর গৃহের চেয়ে
ধ্বংস আমার ঢের বেশি প্রিয়।