বিস্মৃতি থেকে উঠে আসে স্মৃতিরা যখন
আহারে আমার কৈশর তোরে খুব মনে পড়ে ,
বিস্মৃতির স্মৃতিতে তুই কেবলই ধোঁয়ার উদ্গিরণ
আগুন নিভে গেলে যেমন কয়লা থেকে বঙ্কিম ধোঁয়া নিঃসৃত হয় ;
দীর্ঘশ্বাসে উড়ে যায় সেই হাফপ্যান্ট পরা গোল্লাচুট সকাল
ডাঙুলি দুপুর আর দাড়িয়াবান্ধা স্মৃতিময় বিকেল গুলো !
যৌবনটারেও পারিনি বাঁধিতে আমি
সেও চলে গলো অজান্তে শুধু স্মৃতিটুকু রেখে ।
মনের আয়নায় এখনও সেদিন দেখি
খুব শখ করে যেদিন গলির টং-দোকান থেকে
প্রথম সিগারেট আগুন,
দু একটা শৌখিন কাশি ,মা বকুনি দিবেন বলে-
লেবুর পাতা চিবিয়ে ঘরে ফেরা ,
আহ্ কী আনন্দ আর ভয়ার্ত শিহরণ !
তারপর ধীরে ধীরে সিগারেটখুর হয়ে ওঠা
নিজেকে পুরুষ পুরুষ ভাবাটা কী যে এডভ্যাঞ্চার ছিলো
তা মনে হলে আজও পুলকিত হয় একাকিত্বের নিঃসঙ্গ রাত ;
যখন নিদ্রাহীন রাত্রিতে এপাশ ওপাশ করি
বিস্মৃতির অতল থেকে ভেসে উঠে ফ্ল্যাসব্যাকে
যৌবনের উত্তাল দিনগুলি ,আমি আবার
আটারো বছরের যুবক হয়ে উঠি মনের অজান্তে !
কিন্তু এও কি আর সম্ভব ?
এখন কেবলই স্মৃতির রোমন্থনে রোমাঞ্চিত হওয়া
আর প্রকৃতির সাথে মিশে তার সুন্দরের সৌন্দর্য উপভোগ
যেমন বিম্বিত আকাশ ,দিঘির স্বচ্ছ জলে
খণ্ড খণ্ড মেঘের উদরে মাছের লুকোচুরি ।
স্বপ্নের সারথি
আমি এখনও স্বস্থানে দাঁড়িয়ে আছি স্ট্রিটলাইটের স্তম্ভের মতো
আলোর সমুদ্রের পাড়ে এক মাটির প্রদীপ ;
অমাবস্যাকে শিথানে রাখি পৈথানে কষ্টের নদী
পৃথিবীকে আলিঙ্গন করে ঘুমিয়ে পড়ি ক্লান্তিতে যখন
তুমি রোজ এসে প্রকট হও সুদীপ্ত আলো নিয়ে ঘুমোঘোরে আমার ;
কে তুমি আগন্তুক ,তুমি কি আলোর পাখি ?
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভেজা আপাদমস্তক তোমার
অথচ জ্বলজ্বল করছো ধ্রুবতারার মতো
এক সমুদ্র তৃষ্ণা নিয়ে পৃথিবীর ছায়াপথে ,
চোখে আকাশ ছোঁয়া আবেগ
মনে হলো যেনো এইমাত্র সপ্তঋষির কপালে -
এঁকে দেবে চন্দন তিলক !
কন্ঠে কবিতার আনকোরা পংক্তিমালা,তোমার-
আবৃত্তিতে দোলে ওঠে ইন্দ্রনীলের নীলিমার আঁচল ,
আমি এপাশ ওপাশ করে জেগে দেখি কিছু নেই
তুমি উধাও,এখনও যেনো আলোর রেশটুকু
লেগে আছে চোখে ,হাত উষ্ণ ঘামে সিক্ত ,
সেও এক অভিজ্ঞতা আলোকে ছুঁয়ে দেখার
তাপহীন ,পুড়ে যাবার ভয় হয়না স্বপ্নের হাঁটে !
তোমার আবেগের সুঁতোয় আমায় একটু বাঁধো
আমিও তোমার মতো ভেসে যাই কোনো কবির স্বপ্ন মন্দিরে --
কবিতার অদৃশ্য মুখ
লজ্জাহীন আমি দিকচিহ্নহীনও বটে
হাঁটু গেড়ে বসে আছি কবিতার সামনে
আর ঐদিকে ডুবে যাচ্ছে আমার সমস্ত শরীর
তৃষ্ণার সাগরে ,কোনো সাঁতার না’জানা -
ডুবুরির মতো ! সন্তরণভুলা ;
হাবুডুবু খাচ্ছি আর ভুলে যাচ্ছি যতো বন্ধন ,
হারানো মুখচ্ছবির মতো তোমার তুমি অস্পষ্ট কবিতা
মাঘের কুয়াশায় মোড়ানো তোমার শরীর
তাই তোমাকে স্পর্শ করা যায়না ,
অদৃশ্য থেকেও তুমি শুদ্ধতার প্রতীক
আর আমি অশুদ্ধ বলেই শুদ্ধ হতে তোমাকে খুঁজি ,
আমি কুয়াশার দুর্বোধ্য দেয়াল ভেদ করতে চাই ,
অন্ধকার রাতের জোনাকির তাপহীন আলোর মতো
যদিও ক্ষীণ প্রচেষ্টা
এরপরও হাল ছাড়িনি ,
যে বোধ আকড়ে ধরে বেঁচে আছি আজও
প্রত্যয়ের সুদৃঢ় চেতনা নিয়ে
কঠোরের প্রচ্ছন্নে আঁকতে চাই
তোমার নির্মল মুখচ্ছবি ;
স্মৃতিতে বিস্মৃতি আসতে নেই ,
স্মৃতির অলিন্দে পায়চারি করতে করতে
বড্ড ক্লান্ত আমি
কতো শরৎ কতো বসন্ত গেলো
দেখা না-দেখার দোলাচলে
আর কতো ?