শিল্পী মাহমুদা এর কবিতাগুচ্ছ
কবি - শিল্পী মাহমুদা
মনোমহিনী রাত
ও চাঁদ দেখো তুমি ,
বিসন্ন বিকাল কাটিয়ে
সোনালি সন্ধ্যা গড়িয়ে
বিমুগ্ধ মনোমহিনী রাত এসেছে ।
দেখেছো কি এই রাত ?
যার পরতে পরতে রয়েছে প্রনয়ের অমৃত সুখ ,
বাসরকক্ষে বাজিয়ে কিঙ্কিণী জোনাকি দিয়ে করেছি আলোকিত
জানালার পাশে ফুটে আছে হাসনাহেনা
চোখকে করিনি কখনো দেখতে মানা,
আরও ফুটেছে সপ্তর্ষী আলোকে থোকায় থোকায় সন্ধ্যামালতী
ও চাঁদ দেখো তুমি ,
পশ্চিম পবন হানি কৃষ্ণচুড়ার আড়ালে লুকায়
অপেক্ষার উত্তেজনাতে মুখ ঢাকে নিশ্চুপ সোনালুরের থোকায়
বিষন্ন মুখে হয়তো অন্যরকম আলোয় দেখেছো সদৃশ্য ঝুলন্ত ফ্রেম
যাকে আমি ভাবি অনিদ্রার প্রলোভনী প্রেম।
সৃষ্টিশীলতা দিন দিন করছে নিজেকে আরো নিবিড়
প্রত্যয় কাছে আসার, ভালাবাসার
বিচিত্র স্পর্শে ডুবে যাওয়া
ক্লান্ত পাখির কিচিরমিচির আর জোনাক আলোয় তাকে পাওয়া।।।
সময় বুঝি বসন্ত উৎসব
এসো
সময়ে অসময়ে ভালবাসা এসো
সযতনে মানো
সন্তর্পনে এসো
প্রকান্ড নিথর জলাশয় ওষ্ঠাচাপের মধ্য দিয়ে এসো ।
তোমার আবিষ্কার নুতন আমি
চির সবুজ করেছো তুমি ,
চির অতীত
সাঝবেলার গীত ।
মনে সব সময় বসন্ত উৎসব হয় ,
আকুন্ঠ তৃষ্ণা অবিরত
কবিতার কাছে ঋনি শত শত ।
কোন এক গোধূলি বেলায় এসে
বিস্ময়ে আমি হতবাক ভালোবাসায় ভালবেসে ।
এ যেন অস্পষ্ট স্বপ্নে ছোঁয়া ,
নির্জনতায় স্বর্গ আলোর ধোঁয়া ।
বিস্মীত যতবার টানো টানে ,
নক্ষত্রের আলোকিত স্মৃতি ম্লানে ।
এতো টা ভালবেসে ফেলেছি কেন! !
এ শুধু স্বপ্নের অনিদ্রা যেনো ॥
প্রতি মুহুর্তের নুতন সম্মোহন ,
কুহেলিকা ময় জীবনে তোমার আগমন॥
আমার প্রতিচ্ছবি আসবেই
আমি আসবো – কোন এক ক্লান্ত চাকরিজীবী যেভাবে ফেরে ঘরে,
আমি আসবো – কোন এক মুসাফির জিরায় যেভাবে গাছের ছায়ায়,
আমি আসবো – কোন এক স্রষ্টাপ্রেমি ঘুরতে থাকে যেভাবে মসজিদ, মন্দির, গির্জায়
আমি আসবো – কোন এক গভীর রাতে, যেভাবে রাধা যেত বৃন্দাবনে,
আমি আসবো -- যেভাবে সদ্য বিবাহিত বালিকা প্রবেশ করে বাসর ঘরে।
আমি আসবো – যেভাবে চাঁদরাতে হাতে মেহেদীর রঙ আসে।
আমি আসবো -- যেভাবে শীর্ষ-সুখের যন্ত্রণায় প্রেমিকার গলা ফাটা চিৎকার আসে।
আমি আসবো -- তোমার ভিতর আসবো – অনবরত, অক্লান্ত, অটল,
আমি চিরকাল আসতেই থাকবো।
যেন, আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও তুমি দেখতে থাকো - আমি আসছি,
একটানা বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় আকাশ থেকে – আমি নামছি,
জানালা দিয়ে চিলতে রোদ ঘরে ঢুকলে ভাববে – আমি আসছি,
দূর পাহাড়ের গায়ে মেঘ এসে বসলে জানবে – আমি আসছি,
পরিচিত খাবার হোটেল ,পরিচিত পার্ক ,পরিচিত সেই ঘর --যে ঘরে আমার পদচিহ্ন আছে ---- আমি আসতেই থাকবো...
অবিরত, অনিবার - অনন্তকাল।
অস্তিত্বে এক পশলা বৃষ্টি
অস্তিত্বে আজ কোন বিষাদ নেই ,
অনেক আগেই যে হারিয়েছি খেই ।
নিরবতায় আজ আর আমার উৎকন্ঠা নেই ,
ধাবমান বাহনে যেতে যেতে জীবনের দৃশ্যপটে পরিবর্তন বুঝি এই ।
এক পশলা বৃষ্টির মতো কখনো ছুঁয়ে দাও ,
আবার উপেক্ষা দিয়ে হাসি টুকুও কেড়ে নাও ।
তখন ক্লান্তিহীন বৃষ্টির স্নান হয় আমার চোখে ,
হৃদয়ে অনুভবের অস্তিত্ব ডানা মেলে কিন্তু স্বপ্ন কি কখনও রোখে ?
আকাঙ্ক্ষাই জীবনের ভাইব্রেসন ,
আমার আকাঙ্খার চৌকাঠে স্বপ্ন থাকে এমন ।
আকাশের চাঁদ সে তো বিরহী চিরকাল ,
জোৎস্নাত রাতেও তাই হয় চোখ রক্ত জবার লাল ।
দিনে দিনে একই আমি আছি তো সেই মুগ্ধ ব্যাকুলতায়
যা প্রকাশ পায় কখনো আচরণে কখনো কথায়,
আমার শব্দের কুলধনি
যেখানে অসংখ্য একাকী ভোরবেলা গুনি
দেখি অনি:শ্বেষ বসন্তকাল
সবই আমার একচ্ছত্র একান্তএকাল ॥
স্বচকিত ক্যানভাস
তুমি নিয়েছো আমায় নীলনদী তট থেকে উপত্যকা
যেখানে মনের ক্যানভাসে আছে স্বপ্ন আঁকা ,
নানা শতাব্দীর সূর্যসেনা তারা
যেখানে দেখি অন্ধকার সাম্রাজ্য ছেড়ে শুধুই আলোকঝর্ণা ধারা ।
আমায় দেখে স্বচকিত হয় তারা
সাজো সাজো অলিখিত আদেশে দিই নিজেই ধরা ,
গাঢ় কুজ্ঝটিকা এসে দেয় তুফান তোলা হুঙ্কার
ম্লান শতাব্দীর প্রহর তাড়িয়ে এনে দিলে তুমি আনন্দের ঝঙ্কার ।
অসংখ্য ঠোঁটে আসে প্রস্নের জোয়ার
হাসি দিয়ে দখিনা সমীরণে খুলে দাও ভালবাসার দুয়ার ,
বর্ষা মঙল গান তোমাকেই মানায়
প্রাণের মন্দিরা তো বাজে সেই সানায় ॥
ভালবেসে প্রিয় রেখেছি সেই মাটির সিঁথানে হৃদয়
হোক তবে জয় সেই অঙ্গীকারের জয় ॥