সুনীল শৈশবের গুচ্ছকবিতা
সুনীল শৈশবের গুচ্ছকবিতা

একটি ঝড়ের রাত ও আমরা
---------------------------

উন্মত্ত ঝড়ের ভেতর  একটি রাত।দির্ঘ গানের সুর শরীর জড়ায়।আমি জলছাপে আড়ষ্ট হয়ে শুয়ে পড়ি শাঁ শাঁ শব্দ ঘোরে।হাতের কাছে সমুদ্র।পড়শী শত শত উদ্বাস্তু,রাতটাকে কোনক্রমে ঘুম পাড়ানো যায়না।বলছিলাম- শংঙ্কার কথা।প্রিয়তমার চুলের কাঁটা হারিয়ে যাবার ভয়ে জিন্স পকেটে রাখি।মানুষের ফিসফিসানি,হাওয়ার শন শন শব্দ;আফিম জিগির।তবু আতংক লুকানো যায়না।আমার পাশে কোন জানলা ছিলনা,ছিল শামুক ছানার বাক্স,ভয়ের জস্পেশ পাহারা।গা ভর্তি ধু ধু বালু,কাটার উপস্থিতি বুঝি যখন শরীর জ্বলে।এখানে কোন স্থাপত্য নেই,আছে কপোত- কপোতির জড়িয়ে থাকা ভালোবাসার জলাশয়।
কিছু আতংকিত চোখ ঝিমোতে থাকে,শরীর থেকে ভেসে আসে সুগন্ধির পঁচা গন্ধ।কারা যেন রাতটাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়;বাইরে তখনো উন্মত্ত ঝড়,দির্ঘ গান...

স্ফুলিং
----------

আগুন রহস্যে মিশে থাকে ধোঁয়ার কুন্ডলি।তোমার স্পর্শ বুঝে শরীরে উমকেলি।গভীর কূয়োতে যেমন থাকে রহস্যের খাদ।অন্তর্দৃষ্টি জানে এ আকুলতা কতটা নিখাদ।আমার প্রান্তিক জুড়ে হৃদয় মহল্লায়।একমাত্র তুমি,তোমাকেই দেখা যায়।বাতাসের কানকথা হাওয়ার কূহরে। বৃষ্টির স্ফুলিঙ্গ পুরো শরীর জুড়ে। আগুন পৃথিবী জ্বলে কোথাও না কোথায়।ছন্দ বিবাগি চোখ বিপদসীমায়।নরক ছেয়েছে পথ স্বর্গের রাস্তায়।স্থির বিন্দু স্নায়ুশিরা উদ্বেগ সুষমায়।কাছে এলে ভোর খোলে দিও দ্বার।কাটাতে জমানো তাবৎ অন্ধকার।

আলো অথবা অন্ধকার
---------------------
তোমার দুচোখ বিষাদসিন্ধু আলো অন্ধকারে লোকালয়হীন। উচ্ছাস নেই, ঢেউ নেই, গাঢ় গল্প নেই। যেন মাটির প্রতিমা  প্রাণপ্রতিষ্টার জ্বর নেই। তবু তোমায় জড়িয়ে থাকি।যেমন করে অমবস্যায় মেঘকে জড়িয়ে রাখে হাওয়া।এখানে সম্পর্ক সাঁকোর মতো,স্থায়িত্বকাল অনিশ্চিত।তবু বুনন,প্রজননকাল নকশা বন্দি সময়ের সাথে।

চেকপোস্ট
------------
যারা পৃথিবীকে ভেবেছিল সবুজ গ্রাম তারা এক সময় বোবা হয়ে যায়।কাঁটাতার,সীমান্ত পিলার,তত্ত্ব কথায়  আর পেরে উঠেনি।সকলে আটকা পড়ে মৃত্যূ অধ্যূষিত চেকপোস্টে।

জীবন তৈরী করে

                       একেকজন প্রহরী

                                    যারা পাহারা বসায় গৃহে...

ফসল
-------------

তোমার বাগান জুড়ে উপসনার ফুল
আমার পুড়ে যাওয়া মাটির দোঁহায়
ছাঁই হওয়া পীতাম্বরের  ভুল;

লেবুফুলের সুঘ্রাণে থাকে প্রসব ব্যাথা
জন্মিবার ক্রন্দন,বয়ঃসন্ধির আচ্ছাদন
মহাপ্রলয়ে হারায়না কুল।

আমলকি হাওয়ায় নিশিন্দারাতে
রিপু লতানো নাগপাশে
কেউ ফলায় মৌসুমি ফসল।

বিপ্লব

মৃত্যূর দেশে আকাশে দেখা দিল নিলজ্জ চাঁদ।আলোয় লাশের ঘ্রান ঘুমোয় প্রতিবাদ। এখানে মৃত্যূ খুবই সাধারণ সহজপাঠ। এবার মিছিল যাবে তুমি ,তুমি থাকো নেমে আটঘাট।আবরণ দাও খুলে ধূসর ছবির।পাঠ্য হোক কবিতা বিপ্লবী কবির।ভুলে গেছ শ্লোগানের পথ? শিরদাঁড় উচু করে নিও শপথ।পাখির ডানার মতো উদ্বেলিত করো দু'হাত।শরীরে দ্রুত জমুক কঠিন পারদ করুক অাঘাত। এ জীবন যাপন পতিত গলিত ফাঁনুস।জেনে রেখো,ঈশ্বরের স্তম্ভমূল থেকে নামবে মানুষ।

চিড়িয়াখানা
------------------

রোদ্দুর গোপন রাখা যায়না
মিরপুর নয় সারাদেশ চিড়িয়াখানা!

অক্সিজেন
---------
পাখিরা জল ভালোবাসে
জলের পরক্রিয়া  সমুদ্র মোহনায়
পাখিদের গান আমাদের তরে
আমাদের গ্রামে তবু পাখি কেনাবেঁচা হয়
সুর-তাল রক্তে মাটিতে শুকায়!

পাখিরা পর্যটক,পাহাড় টিলা,জঙ্গলে একা একা ঘুরে,আকাশের মেঘে দোল খায়
পাখিরা পথিকেরও অধিক।পাখিদের বাসা আত্নহত্যার জন্য চিহ্নিত গাছের মগডালে,সেখানে ডিমগুলো সুরক্ষিত থাকে।পাখিরা বৃক্ষেই জন্মেছে।বৃক্ষই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে...

মঙ্গলা
---------

কার্ত্তিকের মধ্যরাত দোহারে ঈশ্বরের স্তুুতি কির্ত্তনে ।ডানাখোলা জানলা বসে থাকে গানের ধ্যানে।ভোরের সূর্য পোষাক পাল্টায় রাগ-রাগিনীর সুরে।তারে আমি দেখেছিলাম এমন এক ভোরে।শৈশবের স্মৃতিপটের সেই স্মৃতি ভাসে।ঘড়ুয়া বিপণীর মেয়ে আজ কি তেমনি হাসে।
কার্ত্তিকের কির্ত্তন'রে  বলে মঙ্গলা। হুনিনা সে গান  হয়ে আত্নভোলা।পয়লা প্রেমের অনুররনে তখন শিহরিত খুব।শরীরে মননে তাতে দিতাম ডুব।শীতের শরীর থেকে খসে যেত পাতার জল।একমাসের মঙ্গলায় আমি ছিলাম দুর্বল।
দৃশ্যবানে রঙচড়া শীতঋতু কুয়াশা প্রবণ।ঈশ্বর নাকি তার জন্য ছুঁটতো মন।
গরম খিচুরী আলু ভাঁজা ডালনার সোয়াদ।তৃপ্তির ঢেঁকুরে নয়নে সাম্যবাদ।এখনো গ্রামে গ্রামে হয় মঙ্গলা।আকুল আরতিতে কতজন হয় আত্নভোলা।

দহন
--------
কৃষ্ণপক্ষ পার করি অন্ধ বিভাসে
এমন ভাবনায় দু'চোখ বুজে;

কেউ পুড়ে,কেউ পুড়ায়
পুরো জীবন দহন নামতায়
                  পুড়ে যেথে দেখে কারো সুখ-

আগুনে লেখা থাকে জলের কলরব

জলভেজা কাঠ, শুষ্ক হৃদয়
সবই পুড়ে যায়,ছাই পরিনত কয়লায়

পুড়ে যায় সবি,পুড়ে যায়
অসীমের পথে অনুতপ্ত জীবন।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান