প্রস্থান
চারপাশে যাকিছু -এই জীবন?
নিস্পৃহ মন, নিস্তরঙ্গ নদী
বিবর্ণ দিগন্ত, প্রেয়সীর মলিন মুখ
এসব জীবন হলে প্রস্থান চাই।
পাখির কূজনে মেশে তোমার উচ্ছ্বাস
সেই সাথে গেয়ে ওঠে মায়াবী আকাশ
নানা রঙে বর্ণিল আলোর মিছিল
ছুঁয়ে গেলে ভোরের নরম রোদ
জীবন জাগে -
অথচ সন্ধ্যা নামে ঘন আঁধারে
বদ্ধ বাতাস কেমন শ্বাসরোধ করে,
সীমাবদ্ধ দৃষ্টিরেখায় তোমার ছায়াও নেই
ঝরাপাতা ফেলে গেছে শেষ নিঃশ্বাস
আমাকে করে গেছে ইশারা-
সেই তবে ভালো - এবার প্রস্থান চাই
নবরূপে জ্বেলে যাই আলো
নিঃসঙ্গ মনোভূমি অতীতের স্মৃতি
ভস্মস্তূপ থেকে সুখ তুলে আনে।
অপরিকল্পিত
ছেড়ে দেই বাতাসের কানে, কিছু গোপন মন্ত্রণা
কিছু মৃত্যুর শোক, অগোছালো জীবন গ্রন্থনা।
কেটে যায় সুবর্ণ সময়, তবু পাওয়া হয়না সব
কিছু অতৃপ্তি নিয়েই বুঝি সাঙ্গ একজীবন
কেউ কেউ দেখে, যন্ত্রণাবিদ্ধ রক্তাক্ত শরীর, মন
তুমি কেন দেখেও দেখোনা?
চেয়েছি টেনে নিতে এই শেষের অল্প পথ টুকু
তীরে এসে যদি তরী ডুবে যায়,
ভেবে নিও সে আমার দায়-
জেনে রেখো ছিল না উপায়
আমি এক অক্ষম পরাজিত
জীবনের পথ যার অপরিকল্পিত।
নিঃসঙ্গ এই দহন বেলা, শেষ করি যাতনার খেলা।
মহামিলন
স্বর্গের বেদী মূলে আলোকের মালা জ্বেলে অপেক্ষা করো,
কলুষিত ভুবনের নিঃসঙ্গ মনোভূমি ছেড়ে আমি আসছি
আমি আসছি সেই মহামিলনের অমর ক্ষণে।
আমি ধরবো তোমার হাত, যে হাত ছুঁয়েছে কষ্টের মিনার
আমি ধরবো সেই ওষ্ঠ, শুকিয়েছে যা ভর্ৎসনায়
আমি শুষে নেবো সেই নীল বেদনা, যা প্রতি ক্ষণে
পুড়িয়েছে তোমার সোনালী তনুর উজ্জ্বলতা।
এখানে আজ দুষিত বাতাস, আমিও দগ্ধ হই পলে পলে
এখানে আজ দুষিত শব্দমালা, তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা বিদ্ধ করে।
অতিষ্ঠ আমি তাই নিঃশব্দে ফিরে যাই তোমার সন্ধানে
তুমি স্বর্গের চুড়ায় বসে ইশারা পাঠাও, হে প্রিয়!
এই মাঠে আবার এসো
একদিন এইমাঠ বরষায় জল-মগ্ন ছিল,
আদিগন্ত ভরা ছিল সবুজাভ ধানের সোপান
পানকৌড়ি ডুব দিয়ে তুলে নিত জীবনের ঘ্রাণ
শরতের মেঘমালা ভেসে ভেসে খেলত উড়াল।
একদিন এইমাঠে নাও বেয়ে তুমি আর আমি,
প্রকৃতির রুপ দেখে কাটিয়েছি কত মধুক্ষণ
আজ সেই মাঠ যেন প্রাণহীন, নিকোনো উঠোন
দিনভর খেলে যায় বাতাসের কত হাহাকার।
আমি তবু বসে আছি, এইমাঠে দেখব আবার,
লকলকে ধানের ডগায় স্বচ্ছ জলের জোয়ার
তোমার প্রতীক্ষায় রব নাও বেঁধে হিজলের ঘাটে
তুমি এলে ভাসিব দুজন জোছনা জোয়ারে রাতে
মায়াবিনী রাতের আকাশে একা জেগে রবে চাঁদ
এইমাঠে আবার এসো, গড়ব প্রেমের প্রাসাদ।