হাসান সাব্বির এর কবিতাগুচ্ছ
হাসান সাব্বির এর কবিতাগুচ্ছ

আত্মপ্রতারণা

১৯
অনুভূতিতে আঁচড় কাটছে ‍অক্ষরেরা
কথা বলছে নীরবতায় অথচ তার কোন মনোযোগ নেই!

কম্পনজনিত শব্দ মুহূর্তেই কম্পোজ হয়ে যাচ্ছে...। আর
আমার চশমার ‘চোখ’ হারানোর গল্পটা যখন মুদ্রিত হতে
চলেছে কালের পৃষ্ঠায় তখন তার ঘুম পাচ্ছে খুব!

২০
অযাচিত এই পঙক্তি_
অনভিপ্রেত অনধিকার চর্চা।

জানি জেনে গেছ বড় সস্তা এই প্রেম!

২১
নেশাও হযেছিল ভীষণ_ সুরে ও সুরায় যখন
চোখের তারায় সংগীতার পারফরমেন্স...

এখন এই ভোর যদি প্রমোদ-ভ্রমনে যায়_
জরের বিহারে মেতে ওঠে ‍অবলীলায়_ একটুখানি হেসে নিও
অবজ্ঞা_ অবহেলার। হাসতে হাসতে নিও প্রতিশোধ!

২২
তোমাকে চিনি না
তবুও তোমার সাথেই প্রেম
স্বপ্ন দেখা মিথ্যে মিথ্যে

২৩
ইদানিং শুধুই পোড়াচ্ছি
কাগজ ও মন দুই-ই।পুড়তে
ও পোড়াতেই জীবনের যতো সুখ_

...পোড়ামুখ!

২৪
দারুণ দেখাচ্ছে তোকে
দেখছি_ দেখছি তোকেই
যেন দেখিনি কোনদিন_ কোনকালে

দেখছি তোকে_ চতুরতা...
তুইতো এই আত্মারই প্রতিচ্ছবি!

এমনই হয় রূপকথা

সুদীর্ঘকালের বিরতি!

এক মহূর্তে তিল পরিমাণ হাড় থেকে বেজে উঠল ঘন্টা_
হৃদস্পন্দন। তন্তুুর মতো একটা শেকড় বের হলো। দিনে দিনে
মূল শিকড়টা ভেতরে রেখে বৃত্তের প্রতিটি বিন্দু থেকে সহস্র শিকড়
নির্জনতার মধ্যে জড়াজড়ি করে বেড়ে উঠতে লাগল।
নির্দিষ্ট রেখার উপরেও বৃদ্ধি_ নিচেও বৃদ্ধি। দু'টো অংশ একটা আলো
ও অন্ধকারে চব্বিশ ঘন্টা আর একটা অংশ শুধুই অন্ধকারে। বৃক্ষের
রূপকথা একদিন মানুষ হলো_ মানুষের গল্প হলো_ ... বইয়ের পৃষ্ঠায়
সেই গল্প মুদ্রিত হলো ছাপার অক্ষরে।

অলীক স্পর্শে অক্ষরের অনেক আকার-আকৃতি_ একদিন অবচেতনে
অক্ষরগুলো নিজেরাই নিজেদের রূপচর্চা শিখে নিয়ে নির্মাণ করলো
প্রার্থনা-ঘর।
এক একটা মানুষ এক একটা অক্ষর!
অক্ষর যুক্ত হয়ে নতুন নতুন আরও অনেক শব্দ_ শব্দ থেকে বাক্য_
বাক্য থেকে রচনা। রচনা থেকে শুরু হলো নতুন এক সভ্যতার!

মাটির উপরে রূপকথা_
মাটির নিচে রূপকথা! রূপকথা নিয়ে কত রূপচর্চা?!
মূল শিকড় বন্দী হয়ে এখন অজ্ঞাত অস্তিত্ব। কিছু চতুরতা ও হিংস্রতা
মূল শিকরের অস্তিত্বের সন্ধান জেনেও সাধারণ-এর সাথে প্রতারণা
করে। অদৃশ্য মূল শিকড়কে কেন্দ্র করেই বিভাজন আর বিভাজন_
রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য আরও কত রকম-সকম!

রূপকথার গল্প এমনই হয়_ এমনই হয় রূপকথা।

কবিতা না-হয়ে ওঠা কথাগুলো


কিছু ভাইরাস ঘুমিয়ে আছে
যখন জেগে ওঠে তখন জ্বর হয়!

তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ঘুম অথবা জাগরণ,
কমান্ডচালিত ভাইরাসগুলোর মৃত্যু নেই, ইশারায়
তারা নীরব ভূমিকা পালন করে।

ঢেউ হয়ে ঢেউয়ে মিলিয়ে যায়
তোমরা শুধু সত্য বোঝ
কোন কোন ভুল প্রথম প্রথম সত্যি দেখায়!

...বিষথলি সম্পর্কে জানতে পারবেন শ্রীঘই!


তারায় তারায় সুর
একতারা
দোতারা...

সুর- স্বর থেমে যেতেই
মৃত্যু হয়েছিল করুণ, পাখিদের!

তারে তারে সুর...


পড়তেও ভাল লাগে
মনে হয় না কখনও পুরোনÑ
কিছু কথার কণ্ঠে রহস্যের পথ!
বার বার পড়ি লেখা শব্দগুলো...

এক-দুই-তিন-চার...
একটাই চিঠি!

এখন আর পড়ি না!


রুটি ঝুলিয়ে রেখে
খাঁচার মধ্যে ফাঁদ পেতে রেখে অপেক্ষা করি
মাঝে মাঝে নিজেই শিকার হযে যাই!

ভ্রমণ

চোখে এসে এসে ফিরে যায় দৃশ্যগুলো
টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া বোধের কাঁচগুলোতে
লেগে থাকে রক্ত, অস্থির মুহূর্তরা অনুভূতির মধ্যে রেখে যায় সূর্যের আগুন,
গভীরে পোড়া হয় তখন!

টীকা-টিপ্পনী বুঝি না, রসের ইশারা-ইংগীতও
জীবনকে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর মতো দুঃসহ স্বপ্নের মধ্যে
ঘুরে ঘুরে কেবলই তীর্থ ভ্রমণ,
মন-এর মতো তীর্থ আর নাই,
সেখানে পৌছাতে পারে ক’জন?

আপন হয়ে অনেক দূরে আলোর আত্মীয়-স্বজন!

পাঠক

পড়ার জন্য তোমার মুখটা ভীষণ সুন্দর
অবশ্য বেশীক্ষণ পড়া যায় না, ভাষাটা ক্রমশ
জটিল...। চোখের যেন লুকিয়ে দশ হাজার শতাব্দী!
ঠোঁটের ভাঁজেও অনেক আলো-অন্ধকারে উত্থান-পতন,
টান-টান হয়ে থাকা চিবুকে আকাশ ও সমুদ্রের মিলিত যোগফল,
হয়তো একশো পৃথিবীর রহস্য!

সুতো কেটে যেতেই ঘুড়িটা হারালাম! চুম্বক আকর্ষন...
ভব্যতার মাত্রা ছাড়িয়ে চোখে চেয়ে দেখি যখন যেমন।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান