ফুয়াদ হাসান-এর কবিতাগুচ্ছ
কফিনসমগ্র
১.
চিঠিরা গোপন সিন্দুক কফিনে অনেক বছর,
স্মৃতির মিনার বানানো হয়নি দিয়েছি কবর।
অনন্তসবুজ হলুদ পাতারা,
খামের জীবাশ্ম দেবে কি পাহারা?
খুঁজছে ও-গোরে কলঙ্ক-কঙ্কাল বংশ-নধর!
২.
কফিনের ঘুণপোকারা
মৃত্যুভয়ে একমুহূর্তও ঘুমাতে যায় না
শুধু কাজ করে যায়...
অনন্তজীবন
৩.
কফিনবন্দি হলে
বাকি কবিতাগুলোর কাজে
মনঃসংযোগ দেয়া যাবে
৪.
কাফনের রঙ লালচে কেন
মৃত্যুসনদ বানাতে বসে
জানা গেল অন্য এক গল্প
কাফনের গা সেলানো দেখি
তার সুরতহাল করতে গিয়ে
বের হয়ে এলো ভিন্ন কিছু
কাফনের গিট সব খোলা
তা ময়নাতদন্ত করতে নেমে
মড়িঘরে নানান রহস্য
কাফন-কফিনে বন্দি শব
শেষ মাটির পেরেক ঠুকে
অমর তয়খানা বিনির্মাণ
৫.
ধূপকাঠি জ্বলে-পুড়ে ছাই
রেয়ালের পাশে
কেউ বসে নাই
কলেমাপাঠের অবকাশে
পচা গলা ক্ষত
ঘ্রাণ অবিরত
মুখে লাগে একঝাপটায়
ধুনো পোড়া ভস্মছায়ায়
কফিনের জ্বালামুখে
কি সুপ্ত অগ্নুৎপাত
ধোঁয়ামেঘ লাভাংশ ঢুকে
শবেরও নাকে হাত
হাজাম
★
দুঃস্বপ্নের
ভেতর দেখতে পাচ্ছি কে আমার গলা কেটে নিচ্ছে! মরাকালো রক্তে ভিজে যাচ্ছে
পুরানো কাপড়, ছাইভস্ম কী-সব যতসব মেখে লাগানোর পরও জবাই শেষের মুরগির আদলে
ফিনকি দেয়া রঙ অজ্ঞাতের মুখে, ভিজে উঠছে তাঁর সাদা কোর্তা লালচে ঘামে,
নিস্তেজ ধড়কে রেখে তিনি দিগ্বিদিক দৌঁড়াচ্ছেন, সঙ্গে শুধু টিকটিকির ছিন্ন
লেজ হয়ে ছটফট করা ঐ মাথা
★
দলবেঁধে
ডাকা হয়েছিল তাদের। এমনিতে একসাথে থাকার অভ্যাস রয়েছে -- মক্তব,
স্কুলঘর-মাঠ, আইসক্রিমের কাঠি কুড়ানো, সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বানানো তাসের
সংগ্রহশালা, মার্বেল টুর্নামেন্ট শেষে সন্ধ্যার বাড়ি ফেরা ; কিংবা টিকা
দেয়ার খবর পেয়ে যেমনটি পালিয়ে যেত ভাঙা দেয়াল টপকে, ছিলনবিল পেরিয়ে...
নাড়ায় কেটে যাওয়া পা বা রক্তাভ বন্ধুকে বনলতাচিকিৎসা।
ঘুমঘুম
ভোরবেলা কী-হবে এদেরকে নিয়ে তা ভাবার আগেই কোরবানের গরুর মতো বিশেষ কায়দায়
ধরে-বেঁধে জবাই করা হচ্ছিল। বীভৎস চিৎকার, গালিগালাজ, অসহায় হাত-পা
ছোড়াছুড়ি ; কিছু করতে না পেরে একজন লালপ্রস্রাব ছড়িয়ে দিয়েছিল নুরানি
চেহারায়!
★
কঞ্চি-খুর-ছুরি-কাচি-দা-বটি-চাপাতি-খড়গ-তলোয়ার...
সবই আছে কোষাগারে, নিয়মিত রক্তছোঁয়া পায় বলে মরিচা ধরে না, সান দেয়া
ছাড়া কী-দারুণ ধার; প্রয়োজন হতে হাজির -- খেপাটে পরশুরাম!
ভদ্রলোকজন তাঁকে কি ভয় পায় নাকি সম্মান করে তা ঠিক বোঝা গেলো না।
এই লাশ
এ লাশ সতেজ, এ লাশ জ্যান্ত
এ লাশ বাসি না তরতাজা
এ লাশ টাটকা ও জীবিত
বুঝি সদ্য তেলে ভাজা
ছুঁয়ে দেখ কেমন গরম
জলজ্যান্ত লাশ -- আজকের
অর্বাচীন এ লাশটি সজীব
মনে হবে না মৃত একজন মানুষের