আরিফুর রহমান এর কবিতাগুচ্ছ
সেই ধ্রুবতারাটি আজও খুঁজি,
আরিফুর রহমান
জন্ম ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ শে মে, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে, তার নানা বাড়িতে। পৈত্রিক বসতবাড়ি ছিল ইসলামপুরের রায়েরপাড়া গ্রামে। যমুনার গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে সেই গ্রাম এবং তার শৈশব-কৈশোর!
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম বই, গল্পগ্রন্থ 'অনুভবে জল কোলাহল'। এরপর এসেছে কবিতার বই 'উর্বশী রোদের ছায়াবাজি'। প্রকাশিতব্য উপন্যাস 'পরিচয়', 'মায়াবন বিহারিণী' এবং 'চৈত্রে দেখা সর্বনাশ'।
একান্ত নিজস্ব জীবন দর্শনে এবং যাপনের আনন্দে ও দুঃখবোধে তার হাতে নির্মিত হচ্ছে এক একটি গল্প, উপন্যাস, কবিতা।
কবিতাসংসারী
মেঠোপথ ধরে
বিবাহ রঙের গোধূলি গায়ে মেখে
বাড়ি ফিরছে মানুষটি
সংসারের টানে!
সঙ্গে ফিরছে, লম্বা ছায়াটির মত, তার লম্বাটে জীবন;
ক্ষণে ক্ষণে পালটানো শেপের
কিন্তু ক্ষণকাল ব্যতীত কখনও উল্লম্ব নয়!
কেবল চিরস্থায়ী আনুভূমিক বৈশিষ্ট্য যার
সে জানে, মুখ তুললেও মাথা তোলা হবে না আর
তাই তো নিজের ছায়াকে মাড়িয়ে
দীর্ঘ জীবনের বৈচিত্র্যময় বোধে চলে
তার নিঃসঙ্গ কবিতাসংসার!
তাকে ফিরতে হয় গোধূলি পথে
বর্ণহীন চৌকাঠ পেরিয়ে নিজস্ব কৌমার্য সত্তায়,
যদিও কবিতায় 'গোধূলি, বিবাহরং'!
গোরস্থান
নৈঃশব্দ্য থমকে আছে এইখানে! কে রুয়েছে পুঁই অমন সবুজ সিথানে?
কে দিয়েছে আলগা মাটির বাঁধ—
তাতে পুকুর ফেরত শীতল জল?
জানি কোনো পথিকের হয়নি সে-সাধ!
অথচ এইখানে হাওয়া উড়ে এলে
জাপটে ধরে বাঁশঝাড়, নামিয়ে আনে—
কার যেন অতৃপ্ত বুকে ছোঁয়াবে বলে!
এই মধ্য বরষায় যে সবুজ প্রাণ
নিজের রং ছড়িয়ে নিলো প্রস্থান,
তার ব্যথায় ওড়ে মেঘেদের বাড়ি
আকাশ শোক জানায় বৃষ্টি বয়ানে!
আমরা অবুঝ পান্থ ছুটি পড়িমরি,
অথচ পুঁই ডগায় নৈঃশব্দ্য এখানে!
চেনা গন্তব্যের পথিক পরান
নিশ্চুপ নির্ঘুম রাতের সঙ্গী ছিল আমার।
সেই ধ্রুবতারাটি আজও খুঁজি,
পথ বন্ধ ছিল দুজনেরই, জীবন রেখে পালাবার!
তবু কীভাবে যেন টুপ করে একদিন
তারাটি নিভে গেল
জীবনটা রেখে গেল জানালায় ঝুলিয়ে
যার মুখজুড়ে শোধ না করে যাওয়া সহস্র কথাঋণ!
প্রতিবেশী জানালা থেকে পাওয়া
সেই ঋণের ভার
এখন একান্ত আমার।
তাই তো বকছি ভীষণ, নিজের ও তার!
শুনছ প্রলাপ? শোনো,
আমাদের চুপকথাদের ডানা মেলা শেষে
এমনই কোনো শীতের বেজন্মা হিম হওয়ায়
তার কাছে হেঁটে চলে যাব একদিন
বাকি সব রেখে যাব পুঁজিপতিদের খপ্পরে
কেবল নিয়ে যাব সাড়ে তিন হাত জমিন।
দাগহীন চিহ্নগুলো
(ক) স্মৃতি
ধুলোপড়া আয়নায় ভাঙাচুরা মুখ দেখে পালানো দীর্ঘশ্বাস।আটপৌরে প্রেমে কুরে কুরে খাওয়া হৃদয় দরজায় বসন্ত বাতাস।মেঝে থেকে নেমে যাওয়া বানভাসি জলের চিত্রকলাও ভুলে না বয়সী মন।(খ) চাহিদা
গ্রাফ কাগজে ডানে উর্ধ্বগামী তিরে গাঁথা যাপিত জীবন।আবডালে গিলে খায় দু'দশটা লাজুক দুপুর।পথের কাগজে ছাপানো সে গল্প খুঁজে পাঠক সমাবেশ।(গ) প্রেম
ভাবলেশহীন সিঁড়ি হেঁটে যায় একতলা থেকে দু'তলায় তারপর ক্রমশ... চিলেকোঠা।স্বপ্ন দেখানো চোখ ইচ্ছের ইশারায় পুড়ে খাক।তবু মনের দূর্বা'পথ এখনো সইতে চায় সেই দু'টো পদভার।
—০–