(কবি মলয় রায়চৌধুরীর মুখোমুখি হয়েছিলেন সাহিত্যবার্তা সম্পাদক আরিফুল ইসলাম)।
(কবি মলয় রায়চৌধুরীর  মুখোমুখি হয়েছিলেন সাহিত্যবার্তা সম্পাদক আরিফুল ইসলাম)।

সম্পাদক: আপনার লেখা লেখির শুরুটা কিভাবে ?

মলয় রায়চৌধুরী: আমাদের বাড়িতে আমার প্রজন্মের আগে কেউ স্কুলে পড়েননি । পাটনায় যে ইমলিতলার বস্তিতে আমরা থাকতুম তা ছিল দুসাধ, মুসহর, চামার, কোইরি, কাহার, কুর্মি অধ্যুষিত, যারা চুরি ডাকাত পকেটমারি ইত্যাদি করে জীবন কাটাতো । পাটনার সংস্কৃতিমান বাঙালিরা পাড়াটাকে বলতেন ছোটোলোকদের এলাকা, তাই বাবা-জেঠা-কাকাদের বন্ধুরা বড়ো একটা আসতেন না আমাদের বাড়ি। বলতে গেলে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে বহিষ্কৃত ছিলুম। আমার লেখালিখির শুরু ওই বঙ্গসংস্কৃতিতে প্রবেশের চেষ্টায় রামমোহন রায় সেমিনারিতে, যে স্কুলে পড়তুম, সেখানকার গ্রন্থাগারিক নমিতাদি আমাকে বইয়ের জগতে নিয়ে যান । কোন বই পড়া উচিত তার পরামর্শ দিতেন। উনি ছিলেন আমার প্রথম ক্রাশ। ওনার ওস্কানিতেই আমি লেখালিখি শুরু করি। আমার 'রাহুকেতু' উপন্যাসে ওনার কথা লিখেছি।

সম্পাদক: আপনি একজন কবি, আর কবি হিসেবে কবিতার সংজ্ঞা কি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ।

মলয় রায়চৌধুরী: কবিতা হল যোনি । যোনির সংজ্ঞা হয় না ।

সম্পাদক: কবিতা বিজ্ঞানকে আপনি কিভাবে সংজ্ঞায়িত করেন ? কবিতা কি যন্ত্রকুশলতাকে ধারণ করে ?

মলয় রায়চৌধুরী: বললুম তো কবিতা হল যোনি । যোনি সম্পর্কিত বিজ্ঞানের কথা তুললে, তা কবিতা থেকে বেরিয়ে অ্যানাটমির ব্যাপার হয়ে যাবে। যন্ত্রকুশলতাকে ধারণ করে কিনা বলতে পারব না ।

সম্পাদক: বাংলাদেশে বর্তমান কবিতা চর্চার বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি ?

মলয় রায়চৌধুরী: বাংলাদেশে মানে ওপার বাংলায়? বই-পত্রিকা তো বড়ো একটা পাইনা, ডাকমাশুলের কারণে । যেটুকু পড়ি তা ইনটারনেটে; তা থেকে ধারণা করা কঠিন, কেননা বেশিরভাগই প্রতিষ্ঠিত কবিদের রচনা পোস্ট হয়। এপার বাংলায় অসাধারণ কাজ করছেন তরুণ আর অতিতরুণরা, বিশেষকরে তরুণীরা । যশোধরা রায়চোধুরী, মিতুল দত্ত, বহতা অংশুমালী, রাকা দাশগুপ্ত, শ্রীদশিনী চক্রবর্তী, বিদিশা সরকার, অনুপম মুখোপাধ্যায়, প্রমুখ চোখে পড়ার মতো বাঁকবদল এনেছেন ।

সম্পাদক: বলা হচ্ছে, বাংলা কবিতার পাঠক দিন-দিন কমছে। কেন ?

মলয় রায়চৌধুরী: তা-ই কি? আমার বইগুলো তাহলে কারা কিনছেন? আমি তো কমার্শিয়াল পত্রিকায় লিখি না, তবু পাঠকরা কেনেন। হয়তো কবিরাই কেনেন, কেননা এপার বাংলায় কবির সংখ্যা, ডায়রেকটরি অনুযায়ী, প্রায় চার হাজার। ওপার বাংলায় আরও বেশি হবে বলে অনুমান করি ।

সম্পাদক: বাংলা সাহিত্য ও বিশ্বসাহিত্যের নিরিখে আপনার তুলনা মূলক ধারণা কি?

মলয় রায়চৌধুরী: আরেব্বাপ; আমার পড়াশোনা অমন অগাধ নয় মিয়াঁ যে বিশ্বসাহিত্যের আসরে নাক ঢোকাবার সাহস দেখাবো !

সম্পাদক: কবিতার জগতে দশক ভিত্তিক কোনো সংজ্ঞা আছে কি? যদি থাকে, আশি থেকে শূন্য দশকের সংজ্ঞাগুলো কি-কি বলে আপনি মনে করেন?

মলয় রায়চৌধুরী: আসলে কবিদের সংখ্যা এতো বেশি হবার কারণে দশক বিভাজন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ দশকের কবিরা নিজেরাই বাধ্য হচ্ছেন নিজেদের বৈশিষ্ট্য চিহ্ণিত করতে। কালক্রমে অধিকাংশ কবি ঝরে যাবার পর ছবিটা স্পষ্ট হবে ।

সম্পাদক: একজন কবির লেখালিখির পূর্বপ্রস্তুতি কি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

মলয় রায়চৌধুরী: কবিরা যখন নির্ণয় নেন যে কবিতা লিখবেন তখন নানারকম অনুশীলনের মাধ্যমেই তা করেন । কেউই বোধহয় প্রথম কয়েকটা কবিতা লিখে দুম করে ছাপতে পাঠান না


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান