চাঁদটা গড়িয়ে পড়বে নাকি এখনই? ঝোপের ভেতরে ফুটে আছে জোনাকির রাতফুল। আলোগুলো ঝিঁঝিঁর মতো ডাকছে। ঝুপ ঝুপ ঝুপ! শব্দ হচ্ছে পাহাড়ের নীচে। দুজন মানুষ মাটি কাটছে। ঝুপ ঝুপ ঝুপ।
আসু দ্যাখসো, কবরখান বেশ বড়ো হইসে। কেউ কথা বলল তাদের মধ্যে, তারপর আর কথা নেই। ঝুপ ঝুপ ঝুপ ঝুপ শব্দ আর ঝিঁঝির গান। খানিক পর উত্তর এলো, হ মাধব, আমাগো দোনো পরিবারের জাগা হইবো। তুমি কাইল একখান অস্তর যোগাড় কইরো, হাত দিয়া আর কত কাটবা মাটি!
দিনের উদাসীন আলো এসে আবার সব মুছে দেয়। তখন নির্জন পাহাড়ি বনে হাওয়ার মর্মর। দিন ফুরোলেই আবার জোনাকির ফুল, আলোর ঝিঁঝিঁডাক, ঝুপঝুপ কোদালের শব্দ। প্রতিদিন মানুষ বাড়ে একজন, দুজন। কবর বড়ো হয়। কেউ কথা বলে, মাস্টার হুইনছনি, কাল নেতায় আইয়া কইসে আমাগো নাকি সমস্যা নাই। কাগজ নাই তো কী হইসে কোম্পানিরা নাকি আমাগোরে কাজ দিবার চায়!
পাহাড়ের মাথার উপর থেকে পেঁচার ডাক ভেসে আসে। উড়ে যায় প্রবীণ বাদুড়। আবার সব চুপ হয়ে যায়। ঝুপ ঝুপ শব্দ ভাসে। জোনাকির ঝিঁঝিগান উড়ে বেড়ায়। কবরটা দিনে দিনে বড়ো থেকে আরো বড়ো হয়। আবার কেউ কথা বলে ওঠে, আসুদ্দিন, কোম্পানিরা ক্যান কাজ দিবার চায় বুঝলানা? দ্যাশ নাইদের কাজ দিবার চায় ক্যান? স্যাজের নাম শুনছ? স্যাজের লগে নার্সির পিরীত বুঝলা না মাধব!
স্যাজ কী মাস্টার?
চোষণের কারখানা। বেতন নাই, সময়ের সীমা নাই, বারো ঘন্টা, চৌদ্দ ঘন্টা, আঠারো..
যাদের কাগজ নাই তাদের চাকরি ক্যামনে?
তাতেই তো সুবিধা আসুদ্দিন। জিব্বার বারণ নাই বুইজ্জোনি!
ওরা আমাগো দ্যাশহীন কইরা দাস বানাইতে চায়?
আবার সব চুপচাপ। আবার ঝুপঝুপ ঝুপঝুপ। জোনাকির ঝিঁঝিঁডাক। বুড়ি চাঁদ পাথরে গড়ায়।
কবর অনেক বড়ো হইসে মাস্টার। আমাগো মাটি থ্যাইকা সরাইতে পারব না আর। হ, একখান গোটা দ্যাশের মাইনসের জাগা হইব। ঝুপঝুপ ঝুপঝুপ।
রাত গিয়ে দিনের উদাসীন আলো এসে আবার সব ঢেকে দেয়। পাহাড়ি হাওয়ায় তখন পাতার মর্মর।