অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে ভালো করে ভাবতে হবে ।। নাসরিন সুলতানা
অমর
একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন। একজন প্রবাসী লেখক দেশে আসার
ছুটিটা ভাষার মাসে নেন। কারণ তার নতুন বইটা তিনি হাতে ধরে দেখবেন। বই লিখে
আর্থিক কোনো লাভ হবে না জেনেও মানুষ দিনের পর দিন কষ্ট করে একটা পাণ্ডুলিপি
প্রকাশকের হাতে তুলে দেন। সেই মেলার পরিবেশ যখন খারাপ হয়ে যায় তখন প্রকৃত
লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের অনেক কষ্ট হয়।
কিছু
মানুষ যদি নিজের দেশের ক্ষতি করতে চায় তা হলে তারা প্রাথমিকভাবে কী কী
ধ্বংস করার চেষ্টা করে? সাহিত্য কি সেগুলোর মধ্যে থাকে? সাহিত্য কীভাবে
ধ্বংস করা যায়?
মেধা
হচ্ছে বোঝার ক্ষমতা। স্মৃতিশক্তি হচ্ছে মনে রাখার ক্ষমতা। প্রতিভা হচ্ছে
নতুন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা। সাহিত্য সৃষ্টি করার জন্য এগুলো দরকার।
এগুলো কিনতে পাওয়া যায় না। কেউ যদি বিশ্বের সব সাহিত্য পড়ে শেষ করে ফেলে
তবুও তার মধ্যে এক রত্তি মেধা, স্মৃতিশক্তি বা প্রতিভা সৃষ্টি হবে না। একজন
সাহিত্যিক এগুলো নিয়ে পৃথিবীতে আসে। তার দরকার সাহিত্য লেখার নিয়ম ও
ভাষাটা ঠিকমতো জানা। সাহিত্যের কয়েকটা শাখা আছে। প্রতিটা শাখার নিয়মকানুন
আলাদা। উপন্যাস লেখার নিয়ম জেনে কবিতা লেখা যায় না। কবিতা লেখার নিয়ম জেনে
শিশুসাহিত্য লেখা যায় না।
প্রথম
শ্রেণির সাহিত্যিক কারা? যাদের মেধা, স্মৃতিশক্তি ও প্রতিভা আছে তারা যদি
শুদ্ধ ভাষায় নিয়ম অনুযায়ী সাহিত্য রচনা করেন তা হলে তারাই প্রথম শ্রেণির
সাহিত্যিক।
যারা সাহিত্যিক
নয় কিন্তু বই বের করে তারা সাহিত্য ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। এই কাজে
প্রকাশক ও ক্রেতা সরাসরি জড়িত।এসব লেখকের বই নিয়ে অনেক প্রচারণা চালানো হয়।
তার মধ্যে অনেক রকম মিথ্যাচার থাকে।
অমর
একুশে গ্রন্থমেলায় অনেক মানুষ আসে। সবাই লেখক, চিত্রশিল্পী, পাঠক বা
প্রকাশক নয়। অনেকে আসে বিকেল কাটাতে। এদের যন্ত্রণায় লেখক আর ক্রেতারা
অতিষ্ঠ হয়ে যান। এ বছর শত শত ছেলেরা দল বেঁধে এসেছে কয়েকজন লেখককে মেলা
থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। তাদেরকে কেউ কিছু বলল না। লেখকরা বের হয়ে যেতে
বাধ্য হলেন। তাদের মধ্যে বই লেখার ইচ্ছেটা এলো কোত্থেকে? এক ভদ্রলোক ছোটো
একটা মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এটা কি সাক্ষাৎকার নেওয়ার মতো কোনো বিষয়? তার
সাক্ষাৎকার থেকে মানুষ কী শিখবে? মেলার মধ্যে একজন লেখককে প্রশ্ন করা
হয়েছে বইমেলা কবে থেকে শুরু হয়েছে, কে কীভাবে এটা শুরু করেছেন। তিনি এটা
প্রচার করতে নিষেধ করেছেন। তার অনুরোধ কেন রাখা হলো না? এসব মানুষকে
নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
যে বই সাহিত্যের নিয়ম অনুযায়ী রচনা করা হয়নি এবং ভাষাও সাবলীল নয় সে বই যাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসতে না পারে এবং
মেলার
পরিবেশ যাতে খারাপ না হয় এসব নিয়ে আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এক দল
বলবে, কিচ্ছু করার নেই। তারা সাহিত্যের শত্রু। সাহিত্যের ক্ষতি মানে দেশের
ক্ষতি। এটা এখন গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।