হে প্রভূ
হে জন্মান্ধ ঈশ্বর,
কাক চক্ষুর জলরাশি বিহীন
মত্ত আঁধারে নিমজ্জিত ঘনঘোর বিবমিষা আক্রান্ত পীযুষ
হাল ভাঙ্গা নাবিকের অমর্ষ প্রলাপ তুমি,
অথচ তবুও রাজদন্ড হাতে নিয়ে বসে আছো কী অসভ্য নির্বিকার!
তবুও পূর্ণ অঞ্জলীপুট ভরি যাঞ্চা কর বিপুল উপঢৌকন,
আমাদেরই কাছে;
অসভ্যের হাট থেকে কিনে নাও তুমি
রঙ্গিন বেশ্যা
কামনা যাপিত হলে বিকিয়ে দাও
আবার সভ্যের মেলায়;
কী অসভ্য ঈশ্বর তুমি----!!
তবুও উৎচক্ষু তোমার লালসার দৃষ্টিবান
আমাদের ললাট লিখনে
এঁকে চলে বারবার, অবিরাম ভাগ্যের মানচিত্রে আমাদের
উদ্বাহু কঙ্কাল-নর্তনের হা-হাকার
শ্রবনে বিদ্ধ হয় না তোমার; কেবলই নির্দেশ আসে
তোমার দাস থেকে ক্রীতদাস হবার
আর তোমার আন্দোলিত তীব্র আনন্দাকাক্সক্ষা পূরণে
ভিক্ষাভাণ্ড ধরি তোমার পায়ের নখের করুণা পাবার,
উড়ন্ত পঙ্খির মতো পঙ্খিনীর উষ্ণ পুচ্ছ-নিচের যৌবনের স্বাদ
আমাদেরই কাছে লজ্জাহীনের মতো;
আমাদেরকেও প্রদান করতে বাধ্য হতে হয়
বাকহীন অসার বৃদ্ধের জড়তা নিয়ে
তোমারই প্রনতি করে তোমার করুণার,
কী যে ত্রস্ত আমরা বিমর্ষ তিতির
চেয়ে থাকি তোমার মুখের দিকে হে অক্ষম পুরুষ
ক্রীতদাসের হাসির শব্দে ডুবে যাও তুমি
হে অসভ্য ঈশ্বর
অথচ তোমার অহঙ্কার বিদ্ধ করে আমাদের প্রাণের বীজ,
উচ্চারিত হয় আমাদের মর্ম দীর্ণ করে
হে মহাপ্রভূ,
আমাকে বৃক্ষের সৌন্দর্য দাও
আমাকে বৃষ্টির স্নিগ্ধতা দাও
আমাকে নীলিমার স্বাধীনতা দাও
আমাকে মৃত্তিকার পেলবতা দাও
আমাকে শষ্যদানা জন্মাবার সক্ষমতা দাও।
আমাকে দান করো সেই মহান সহিষ্ণুতা
যা আমাকে উত্তুঙ্গ অগ্নির উচ্ছৃত দহন থেকে বাঁচিয়ে রাখবে,
যা আমাকে অস্পৃশ্য ‘ অনঙ্গ-কন্যা‘র রিরংসিত প্লাবনের
অভ্রান্ত বাধভাঙ্গা কামনার সর্পিল বাহুপাশ থেকে রক্ষা করবে,
যা আমার অস্তিত্বের অনুসন্ধানকে লক্ষ বছর দান করবে
আর যে অনুসন্ধান বিঘ্নের প্রতিটি গ্রন্থি ভেঙ্গে ভেঙ্গে
তোমার অস্তিত্বের অনুভবকে
আমার হৃৎপিন্ডের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেবে।
তোমার নিঃসীম নিঃশ্বাসের অসংবৃত আলিঙ্গন-স্পর্শে
আমি হয়ে উঠবো অমৃতের সন্তান
মৃত্যুহীন, চিরঞ্জীব,
অনাগত মানবকুলের শ্বেত-শুভ্র মুক্তির অসামান্য মেঘদুত।
প্রলম্ব-প্রান্তর জুড়ে সৃষ্টি করবো আমি
আত্মার্থ না হয়ে কেবলই সজীব শষ্যদানা
জন্ম থেকে জন্মান্তরে
শুধু তোমার আত্মজা
অযুত নিযুত নিপীড়িত নির্যাতীত
নিগৃহীত সন্তানদের জন্যে।
পারবে কি দিতে তুমি হে অসভ্য ঈশ্বর??