বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জন্মদিন আজ ।
তিনি ১৯৩৬ সালের এই দিনে বিক্রমপুর উপজেলার বাড়ৈখালীতে জন্মলাভ করেন। বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব কেটেছে রাজশাহীতে ও কলকাতায়।
তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, নটর ডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের লিডস্ ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৫৭ সালে। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।
অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক। ইংরেজির ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করলেও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গদ্যশিল্পী, মননশীল লেখক হিসেবে পরিচিত তিনি। তিনি একাধারে একজন সফল শিক্ষক, মৌলিক চিন্তাবিদ, মননশীল লেখক, সম্পাদক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা।
যেকোনো অনাচারে বিবেকবান মানুষের কণ্ঠস্বর, দেশ ও জাতিকে পথ দেখিয়েছেন নানা ক্রান্তিকালে। আশ্চর্য হলেও সত্যি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কর্তৃক দুবার উপাচার্য হওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু তিনি সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আজন্ম পথাবিরোধি ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কালে মাসিক পরিক্রমা (১৯৬০-৬২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা (১৯৭২), ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র (১৯৮৪) ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন, বর্তমানে তিনি ‘নতুনদিগন্ত’ নামে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি ‘সমাজ রূপায়ন অধ্যয়ন কেন্দ্র’ নামের একটি প্রাগ্রসর প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।
তিনি তারুণ্যের সাথে যুক্ত। প্রায় চল্লিশটির মতো সৃষ্টিশীল ও মননশীল গ্রন্থের প্রণেতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমাদের পশ্চাদপদ সমাজকে এগিয়ে নেয়ার বাতিঘর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থ তালিকায় আছে ‘ছোটদের শেক্সপিয়ার’, ‘অন্বেষণ’, ‘বুনো হাঁস’, ‘কাব্যের স্বভাব’, ‘ইনট্রোডিউসিং নজরুল ইসলাম’, ‘দ্বিতীয় ভুবন’, ‘এরিস্টোটালের কাব্য’, ‘তাকিয়ে দেখা’, ‘নিরাশ্রয় গৃহী’, ‘আরণ্যক দৃশ্যাবলি’, ‘শরৎচন্দ্র ও সামন্তবাদ’, ‘কুমুর বন্ধন’, ‘বঙ্কিমচন্দ্রের জমিদার ও কৃষক’, ‘আমার পিতার মুখ’, ‘স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি’, ‘দরজাটা খোলা’, ‘উনিশ শতকের বাংলা পদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ’, ‘উপর কাঠামোর ভিতরেই’, ‘হোমারের ওডেসি’, ‘আশির দশকের বাংলাদেশের সমাজ’, ‘বেকনের মৌমাছিরা’, ‘লিও টলস্টয়: অনেক প্রসঙ্গের কয়েকটি’, ‘মুখ ও মুখশ্রী’, ‘শ্রেণি, সময় ও সাহিত্য’, ‘বাঙালি কাকে বলি’, ‘স্বাধীনতার স্পৃহা’, ‘বৃত্তের ভাঙাগড়া’, ‘ভালো মানুষের জগৎ’, ‘রাষ্ট্র ও কল্পলোক’, ‘দুই যাত্রায় এক যাত্রী’, ‘উদ্যান এবং উদ্যানের বাইরে’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলা একাডেমি স্বর্ণপদক’, ‘বিচারপতি ইব্রাহিম পুরস্কার’, ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার’, ‘বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুবুল্লাহ ফাউন্ডেশন পুরস্কার’ সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।