দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
তিনি যে জলটুকুও গড়িয়ে খান না, স্ত্রীর পাশে বসে কবুল করতে অকপট ৩৯ বছরের মফস্সলি বাঙালি।
গিন্নিরও সস্নেহ প্রশ্রয়: আহা, ঘরের কাজে ওঁর সময় কই! তাঁর শুধু দুশ্চিন্তা: তেতলা বাড়ির সব ঘর, ওঁর কোচিং ক্লাসের জায়গায় ঠাসা বই। চাকদহের ‘ডিসি স্যর’, ইংরেজি শিক্ষক দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় লাজুক হাসেন, বিছানাতেও ৩০-৪০টা বই সঙ্গী। বইমেলার উদ্যোক্তাদের কাছেও তিনি এক মূর্তিমান আবিষ্কার। রবিবার দু’লক্ষ ৪২ হাজার বই কেনা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সোমবার মেলা শেষে অঙ্কটা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়েছে। তবু দেবব্রতবাবুর আফসোস, ‘‘অন্য দিন চাকদহ থেকে দু’টো গাড়ি আনি। একটায় শুধু বই বোঝাই করে ফিরি। গাড়ি একটা কম থাকায় মেলার শেষ দিনে কিনে সাধ মিটল না।’’
কাফকা-কামু থেকে গীতা-উপনিষদ— ছুতমার্গহীন সঞ্চার দেবব্রতবাবুর। ছাত্র সুভাষ রায় বলেন, ‘‘স্যরের দুর্গা পুজো-সরস্বতী পুজো-বড়দিন— সবই বইমেলা!’’
‘‘তবে বছরে এক বার বেড়াতে নিয়ে যায়! চেরাপুঞ্জির রামকৃষ্ণ মিশন থেকেও দু’ব্যাগ বই কিনল। বিমানে বাড়তি মালপত্রের ভাড়া গুনাগার,’’ বললেন দেবব্রত-পত্নী সুপ্তাদেবী। অক্লান্ত পাঠক দেবব্রতবাবু কথা বলেন থেমে থেমে: ‘‘স্কুলের চাকরিটা ছেড়েই দিলাম। ৮০০ ছেলে পড়াই। বই পড়ার জন্য পাচ্ছি বাড়তি ৭-৮ ঘণ্টা। স্মার্টফোন ছুঁই না। লোকে বলে, ফেসবুকটুকে পড়ার সময় নষ্ট হয়।’’
বেথুন কলেজের পিছনের বই বিক্রেতার ফোন আসে, বিদেশি প্রকাশনার এনসাইক্লোপিডিয়া অব লিটারেচার হাতে এসেছে। ‘‘হবে ৫০ হাজার খরচ,’’ মাস্টারমশাই নির্বিকার। বই কেনার টানে নদিয়ার বগুলায় একদা দু’চার বিঘে পারিবারিক ধানি জমিও বেচে দিয়েছিলেন, দেবব্রতবাবু। খোলাখুলিই বললেন, ‘‘বাবা সরকারি চাকরি করেছেন। পৈতৃক বাড়িতে থাকতে পাই, এইটে রক্ষে! বইয়ের যত্ন বড় ঝক্কি। দু’চার বছরে একটা আস্ত লাইব্রেরি-বাড়ি তৈরির চেষ্টায় আছি!’’
গিল্ড-কর্তাদের মতে, এমন পাঠক আছেন বলেই বারবার ঠাঁইনাড়া হয়েও বইমেলার গরিমা অটুট। দেবব্রতবাবুর একটাই আফসোস, বসে বসে বই পড়ে ওজন বেড়ে যাচ্ছে। সুগারও ধরেছে। ওটা ঠিক করতে হবে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা