‘বামিহাল’ শিল্প—সাহিত্যের ছোটোকাগজ। সূক্ষ্ম চিন্তার খসড়া যার মটো। সম্পাদক তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল লেখক রনি বর্মন। বগুড়ার সবুজ শ্যামল মায়াময় ‘বামিহাল’ গ্রামের নাম থেকেই এর নাম। বামিহাল প্রতিবছর সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে থাকে।এতে বাংলাভাষী অনেক কবি-সাহিত্যিক অংশ গ্রহণ করে থাকে।গত বছর থেকে এ উৎসবের একটি পর্বে সাহিত্য পুরস্কার প্রদান প্রবর্তন করেছে।বাংলাসাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ক্রেস্ট, উত্তরীয়, মানপত্রও নগদ অর্থ প্রদান করে থাকে।প্রথমবার পুরস্কারেই তারা নিরপেক্ষতা-সেবা-যথার্থতার সম্মান কুড়িয়েছে ।এবছর২০২৩সালে "গবেষণা-প্রবন্ধ" শাখায়আমাকেপুরস্কারপাচ্ছেন আবু সাঈদ তুলু।
আবু সাঈদ তুলু সাহিত্য জগতে অতি পরিচিত নাম। তিনি ১৯৭৯ সালে জামালপুর জেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম- আলহাজ আবদুর রহমান মাস্টার ও মাতার নাম সারা বেগম। ভাইবোনদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। গ্রামের গড়-বনভূমির সঙ্গে শহরঘেঁষা নদী উদারতার প্রাকৃতিক পরিবেশে তার বেড়ে উঠা। শৈশব থেকেই সাহিত্য-শিল্পের প্রতি অনুরাগী। শৈশব কৈশোরে কবিতা-অভিনয়ের প্রতি বেশি ঝোঁক থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়াকালীন গল্প-উপন্যাস লেখার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। এ সময় ‘ভালোবাসার পৃথিবী’ শিরোনামে উপন্যাস রচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবস্থায় কবিতা, গল্প ও মঞ্চনাটকের প্রতি ঘোর ও মায়াচ্ছন্ন আবেগে ভেসে বেড়াতে থাকেন। অসংখ্য মঞ্চনাটক-টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে তার গল্প-কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর অ্যাকাডেমিক শিক্ষাগ্রহণ ছাড়াও থিয়েটার স্কুল থেকে একবছর মেয়াদি নাট্যবিষয়ক পাঠ, বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে লেখালেখি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র থেকে গবেষণা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রথম ‘লিপির উদ্ভব, ক্রমবিবর্তন ও বাংলা লিপির পরিণত পর্যায়’ শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সাল থেকে বাংলা ভাষার শীর্ষস্থানীয় সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’এ নিয়মিত লিখতে থাকেন। সাথে সাথে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও জার্নালে লেখা প্রকাশ হতে থাকে। এখন পর্যন্ত নাট্য বিষয়ক প্রবন্ধ, গবেষণা, সমালোচনা, নিবন্ধের সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সালে ‘সেলিম আল দীনের ঔপনিবেশিকতামুক্ত সাহিত্য ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতোমধ্যে প্রকাশিত উপন্যাস একটি, গল্পগ্রন্থ দুটি, নাটক এটি, কবিতাগ্রন্থ দুটি এবং চারটি গবেষণা-প্রবন্ধ গ্রন্থ মননশীল মহলে ও পাঠক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। লেখক সাহিত্যের ইউরোপীয় বিভাজনরীতি বা জেনরাকে গুরুত্ববহ মনে করেন না। তিনি মনে করেন সাহিত্য জীবন-জগৎ-সমাজ-সভ্যতাকে চিন্তা, সৌন্দর্য ও নতুনত্বের ছোঁয়ায় বিনির্মাণ করবে। তার চেতনায় ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রাধান্য পায়। সমাজ ও সভ্যতার প্রতি নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করেন। হাজার বছরের বহমান জীবন-সংস্কৃতির পরম্পরায় সমকালীন বিশ্বজনীন বিকাশকে বড় করে দেখেন। তাই মানুষের সার্বজনীন মুক্তি তার আরাধ্য। আবু সাঈদ তুলু পেশাগত ভাবে একটি স্বনামধন্য কলেজে দীর্ঘদিন ধরে বাংলা বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। লেখকের সহধর্মিণী রৌশন আরা আক্তার ও একই বিষয়ের কলেজ শিক্ষক। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- ‘লিপিরউদ্ভব, ক্রমবিবর্তনওবাংলালিপিরপরিণতপর্যায়’, [অন্তরীপপাবলিকেশন, ২০০৭], অনন্তপথেরযাত্রী [ভাষাচিত্র, ২০১৪]জলেরআয়না [ভাষাচিত্র, ২০১৫]পাতারবাঁশি [লিটলবিট, ২০১৭]সেলিমআলদীনেরসাহিত্যভাবনা [মাওলাব্রাদার্স, ২০১৮], নাট্য ঐতিহ্য ও বাংলাদেশের নাটক [অন্বেষা, ২০২০], অনুভূতির খসড়া [জাগতিক, ২০২২] বাংলাদেশের সমকালীন থিয়েটার [অন্বেষা, ২০২৩]
এবারের ‘বামিহাল সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’আরও যারা পাচ্ছেন তারা হলেন কবিতায়— মাসুদার রহমান, ছোটোকাগজ সম্পাদনায়- লোক সম্পাদক অনিকেত শামীম, শিশুসাহিতে- হোসনে আরা জেমি, ও ছোটোগল্পে- আনিফ রুবেদ। এছাড়াও বামিহাল তরুণ সাহিত্য পুরস্কারে জন্য মনোনীত করা হয়েছে- কবিতায় বিপ্লব রায় এবং কথাসাহিত্যে সাব্বির জাদিদ।
বামিহাল সম্পাদক রনি বর্মন জানান, আগামী ২৮ জুলাই ২০২৩ খ্রি. তারিখ, রোজ শুক্রবার দিনব্যাপী বামিহাল সাহিত্য উৎসবের এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। বামিহাল সাহিত্য উৎসব উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ঠ কবি ও ছোটোকাগজ সম্পাদক মাহমুদ কামাল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি ফারুক মাহমুদ।