সাতক্ষীরায়
বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ এর সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগদান নিয়ে বেশ সন্দিহান
ছিলাম আমি। কেননা, আমার সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মতো ব্যস্ততম পেশায় একই
সময়ে ছিল আমার দু’টি কার্যক্রম!
ফাওয়ের সহায়তায় ম্যানিলার মাকাটি ও
হ্যানয়ে সাতদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর একটি কর্মশালায়
১৮ ডিসেম্বর যোগদান করার কথা ছিল আমার। সেই কার্যক্রমের জন্য ভিসা
প্রস্তুত ছিল।
দু’ রাতে গবেষণার লিখিত নিবন্ধ ও ভ্রমণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফাইলে গুছিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আয়োজকের কারিগরি সমস্যার জন্য হঠাৎ কর্মশালায় যোগদান বাতিল হয়ে যায়। আর তখনই সিদ্ধান্ত নেই বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ এর সাতক্ষীরা জেলা আয়োজিত ২০-২১ ডিসেম্বর ’২২ দুইদিনব্যাপী আবহমান বাংলা সাংস্কৃতিক উৎসবে সদলবলে যোগ দিবো। বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা অভিনেত্রী অর্পণা সেন যখন সানন্দা পত্রিকার সম্পাদক, ১৯৯১ সালে তাঁর সানন্দা কার্যালয়ে অপর্ণা সেন মানে রীনাদির মাধ্যমে অভিনেত্রী সুদেষ্ণা রায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি সাতক্ষীরায় আসছেন, তাই উৎসবে তাঁর সঙ্গে দেখা হবে এবং বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ, ঢাকা কমিটির প্রথম প্রযোজনা এ. কে. আজাদ ও অলক দাশগুপ্ত রচনা ও গ্রন্থনা এবং নির্দেশনায় বাংলার ইতিহাসভিত্তিক ‘আমার পরিচয়’ মঞ্চস্থ হবে বিষয় দু’টি উৎসবে আমার যোগদান নিশ্চিত করে।
বিশিষ্ট সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, কবি, বাচিক শিল্পী ও
শিক্ষাবিদ যিনি বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ এর কা-ারি এবং সাতক্ষীরা জেলার
সভাপতি নাসরিন খান লিপির অত্যন্ত আন্তরিকতা শুরু থেকেই আমরা লক্ষ্য করছি।
‘আমার পরিচয়’ গীতি নৃত্যনাট্য প্রযোজনায় সব ধরনের সহযোগিতা তিনি দিয়ে
চলেছেন। কি অর্থ কিংবা জনবল সহায়তায়! পায়ে ও কোমরে ব্যথা নিয়ে তিনি ঢাকা
সাংস্কৃতিক দলের জন্য খাবারের মেনু নির্ধারণ এবং শোবার জন্য লেপ ও কম্বল
ব্যবস্থাসহ সকল আয়োজনে কোন ত্রুটি রাখেননি। ঢাকার সাংস্কৃতিক দল নিয়ে
সাতক্ষীরা উৎসবে যোগ দিচ্ছি- তাদের থাকা খাওয়া মনের মতো হবে কিনা তা নিয়ে
লিপি আপা বেশ চিন্তিত ছিলেন মনে হয়। উৎসবকে সফল করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন
তাঁর সংস্কৃতিমনা স্বামী জাতীয় সংসদের সাতক্ষীরা-১ আসনের সাংসদ এডভোকেট
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
লিপি আপা ও লুৎফুল ভাই আমাদের ঢাকা দলের জন্য আগে থেকেই বিশেষ ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। জেনেছি তা ২১ দিন আগেই। গ্রীন লাইন পরিবহনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আরামপ্রিয় রিজার্ভ বাসে করে ২০ ডিসেম্বর ভোরে সাতক্ষীরা পৌছে আমাদের ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট সাংস্কৃতিক দল। শহরের তিরিশ মাইল এলাকায় পল্লবিত লাল-খয়েরি (মেরুন) গোলাপ দিয়ে আমাদের সকলকে প্রাণের উচ্ছাসে গ্রহণ করেন বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ এর সাতক্ষীরা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীমা পারভীন রতœা, সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদা পারভীন পান্না ও অদিতি আদৃতা সৃষ্টি। তারপর ব্যক্তিগত গাড়ি যোগে নগরঘাটা যাত্রা।
সাতক্ষীরা
শহরের অদূরে নগরঘাটা গ্রাম। রাইস মিল মোড়ে অবস্থিত নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর বাড়ি। ১৯ কাঠা আয়তনের ১২ কাঠার উপর একতলা
ইমারত। উৎসবে ঢাকা দলের বাসস্থান এটা। এখানে আমাদের সবাইকে হাসিমুখে গ্রহণ
করলেন এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ভাই। একে একে এলেন লিপু, তাঁর ছোট ভাই
আসাদুজ্জামান টিপুসহ অনেকে। ১৪ কাঠার ওপর ৮টি বড় শোবার ঘর, প্রাকৃতিক কর্ম
সমাপনবিশিষ্ট ৫টি স্নানাগার, ২টি বিশাল রান্নাঘর, ষ্টোররুম এবং বড় পরিসরের
বৈঠকখানা। শখ করে তৈরি করা এ বাড়িতে লিপু চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবার থাকে
না। স্ত্রীর অনুরোধে রাইস মিল মোড় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে চকারকান্দা
গ্রামে বাপ দাদার ভিটেমাটিতে পরিবারসহ থাকেন তিনি।
আমাদের থাকার জন্য
সাতটি কক্ষ বরাদ্দ। শীতে সুরক্ষিত ২টিতে মেয়েরা এবং ৫টি ছেলেরা একে একে
ঢুকে গেল। অনেকেই রাতের ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করতে দক্ষিণাঞ্চলের লবনাক্ত বা
বোতলজাত খনিজ জলে শরীর হাত পা ও মুখ পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। পোশাক পরিবর্তন
করে সকালের জল খাবার টেবিলগুলোতে বসে যান একে একে। পর্যাপ্ত খাবার! ডিম
পোচ, সবজি, ডাল, পরোটা, রুটি, ক্ষুদ্রাংশে বিভক্ত মিষ্টি ছানা সন্দেশ এবং
খেঁজুর রসের পায়েশ। চিংড়ি ঘের থেকে আনা বড় বড় বাগদা চিংড়ি হাতে করে টেবিলে
এনে দেখালেন চেয়ারম্যান স্বয়ং! দল সদস্য সন্দীপা বিশ্বাস তা দেখে রীতিমতো
চক্ষুতো তাঁর চড়কগাছ! তা দেখে বেশ উচ্ছসিত অন্যতম সদস্য জাগরণ টিভি প্রধান
ভোজনরসিক এফ. এম. শাহীন ভাই!
- ওরে বাবারে! এত বড় মাছ! স্মার্ট ফোনে
সন্দীপা দিদি ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দিয়ে ফেললেন।
চেয়ারম্যান জানতে চাইলেন দুপুরের খাবারে আমাদের কি কি চাহিদা? আমার উত্তর-
‘আপনার বাড়িতে এসেছি যা খাওয়াবেন তাই আমরা খাবো।’ সার্বক্ষণিক একাধিক পদের
বিস্কুট, ফিল্টারের বিশুদ্ধ জলপান ও চায়ের আয়োজন। ইলেকট্রনিক কেটলিতে জল
ফুটছে। নিরন্তর সেবা দিয়ে চলেছেন লুৎফুল ভাইয়ের ঢাকার বাসার পারিবারিক
সদস্য শহীদুল ইসলাম বাবু। সঙ্গে করে আনা লং ও এলাচী দিয়ে কেটলি থেকে কাপে
করে আমাকেও গরম চা এগিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ সদস্য রেঁনেসা পারভীন আপা। অনেকে
নিজের হাতে ইচ্ছেমত খাবার খাচ্ছে। বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ এর ঢাকার
সাধারণ সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক দলের প্রধানতম পুরুষ বন্ধুপ্রতিম সবার প্রিয়
অলক দাশগুপ্ত মানে আমাদের অলকদা সবার তদারকি করছেন। কার কি সমস্যা খোঁজ
নিচ্ছেন। কিন্তু তিনি তেমন কিছু খেলেন না। আমাদের দলের আমার পরিচয় প্রযোজনা
নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত মনে হলো! দলের অন্যতম সদস্য এ. কে. আজাদ ভাই, আবিদ
হোসেন অপু ভাই ও শাহীন ভাই চিন্তা দূর করতে সিগারেট ক্রমাগত টেনে যাচ্ছেন!
আর চা তো আছেই। জল খাবার শেষে ছাদে হলো মহড়া। আমাদের যাতায়াতের জন্য ২টি
মাক্রো বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। অনুষ্ঠান মঞ্চ ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে দেখতে
অন্যতম প্রধান ক’জনকে নিয়ে অলকদা শহরের শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্কের স্থাপিত
মঞ্চে চলে যান।
খাসি কাটা হলো ২টি। রুই মাছ। ভাজা মাছের মউ মউ গন্ধে
ঘরে আর থাকতে পারলেন না প্রবীণ সদস্য প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক জয়ন্তি রায়
দিদি! বাড়িটির পাশেই যেখানে রান্নার আয়োজন সেই মাটির চুলার কাছে চলে গেলেন
তিনি। রান্নার সহযোগী এরশাদ সিকদারের কাছ থেকে চেয়ে নিলেন ভাজা রুই মাছ!
মুখে নিয়ে বলতে শুরু করলেন- ‘বেশ সুস্বাদু মাছ।’
সাড়ে তিনটায় দুপুরের
খাবার পরিবেশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রধান খাদ্য ব্যবস্থাপক লিপু ভাই
সহযোগী আসাদুজ্জামান টিপু, মীর কাশিম ভাই, শাহাদাত হোসেন ভাই, বাবু, এরশাদ
সিকদার ও জাহিদুল ইসলাম।
দুপুর খাবারের মধ্যে ছিল গরম গরম ভাত, রুই
মাছের ঝোল, খাসির মাংস, চিংড়ি মিশ্রিত মানকচু, জলপাই রসুন চাটনি এবং দই।
সুস্বাদু রান্নার আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশনে তৃপ্তি সহকারে দীর্ঘ সময় ধরে
সবাই প্রাণভরে খেলেন। আর বলতে লাগলেন - অপূর্ব! অপূর্ব!
কার কি আইটেম
লাগবে বারবার চেয়ারম্যান লিপু ভাই কাছে দাঁড়িয়ে থেকে তদরকি করছিলেন। আর
বলেছিলেন, আপনাদের জন্য তেমন কিছু আয়োজন করতে পারলাম না! সবার শেষে
সস্ত্রীক লিপু ভাই খেতে বসেন। বললেন এলাকার বিশেষ বিশেষ খাবারের কথা। নিবিড়
পরিবেশে থাকা ও খাওয়ার এই সুব্যবস্থা দেখে দলের প্রায় সবাই বললেন বড় একটি
বনভোজন হয়ে গেলো বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ এর! ২০ ডিসেম্বর রাতে ভারতের
বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সাংস্কৃতিক দলের বন্ধুরাও এই খাবারে পরিতৃপ্ত।
রাতের খাবারে লিপু ভাই যুক্ত করেন সবজি মানে নিরামিষ তরকারি।
ঢাকা দলের
পরিবেশিত প্রযোজনাটিতে আমি শুধু দর্শক। অলকদার মতো বেশ চিন্তিত আমিও। কেননা
ভালমতো টানা মহড়া আমাদের ছিল না। প্রথম সারিতে বসে দেখছি আমাদের প্রযোজনা।
শিশু শিল্পী ইহান যখন লাল সবুজের পতাকা উড়ালো আমি তখন কাঁদছিলাম। আর ভয়
পাচ্ছিলাম সদস্য স্বপন দাশের অভিনয় দেখে। বীর ভাষা শহীদের ভূমিকায় সে।
লাশটি কাঁধে নিয়ে যখন সহযোগী বন্ধুরা মঞ্চ ত্যাগ করছিল তখন মনে হলো স্বপন
বুঝি সত্যজিৎ রায়ের বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পথের পাঁচালীর ইন্দির ঠাকুরণ
চরিত্রে বৃদ্ধা চুনিবালা দেবী। সত্যজিৎ রায়ের বিষয় চলচ্চিত্র গ্রন্থে
চুনিবালা দেবীর অনবদ্য অভিনয় দেখে তিনি বেশ বিস্মিত হয়ে ছিলেন বলে তা বইয়ে
বর্ণনা করেছেন। তিনি ভাবছিলেন চুনিবালা দেবী ইহলোকে ত্যাগ করে শ্মশ্মানে
রওনা হয়েছেন! শর্ট নিশ্চিত হবার পর তিনি দৌড়ে গেলেন চুনিবালার কাছে। বললেন
আপনি ঠিক আছেন তো? উত্তরে চুনিবালা দেবী জানালেন - শর্ট হয়েছে তো মানিক
বাবু? স্বপন দাশের মুগ্ধ করা অভিনয় দেখে আমার তাই মনে হয়েছে।
ভারতীয়
অতিথি শিল্পীদের অনুষ্ঠান শেষে রাতে গীতি নৃত্যনাট্য আমার পরিচয় পরিবেশিত
হয়। প্রযোজনাটি সবাই মনযোগ সহকারে উপভোগ করেন। ভারতীয় বন্ধুরা উপস্থিত
দর্শকরা প্রযোজনাটির বেশ প্রশংসা করেন। শান্তি নিকেতন থেকে আগত ক’জন অতিথি
বললেন, ‘মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখলাম আপনাদের নিবেদন!’ চোখে জল এসে গেছে! এমন
দৃষ্টিনন্দন প্রযোজনা আমাদের ওখানেও সচরাচর হয় না! দর্শকের প্রথম সারিতে
পাশে বসা ভারতের বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী পাপিয়া অধিকারী হাতে তালি
এবং সাধু সাধু বলতে বলতে মঞ্চেই উঠে যান। তারপর দলের সদস্যদের সঙ্গে
সেলফোনে সেলফির পর সেলফি! বাঙ্গালোর দলের প্রধান দেবযানী রায় মালাদি
উচ্ছাসে দরাজ গলায় উচ্চারণ করলেন- কি দেখালে তোমরা! এই প্রযোজনা আমরা
ব্যাঙ্গালোরে চাই। প্রস্তুত হও।
আমার পরিচয় প্রযোজনা ছাড়াও মঞ্চে অনেকের
আনন্দ নৃত্য শেষে ক্লান্ত সবাই। গভীর রাতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে ফিরি আমরা।
খেয়েই গভীর ঘুম। ভাঙ্গে পরদিন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে দেরি করে। জল খাবার শেষে
নির্ধারিত পার্কে সবার বেড়ানো। শহরের মোজাফফর গার্ডেন মানে মন্টু মিয়ার
পার্কে কিছু সময় বেড়ানো।
চেয়ারম্যান লিপু ভাই আমরা কি খাবো তা নিয়ে
চিন্তিত। বললেন, আজ সবজি, চর্বির মুগ ডাল, ভাইটকি মাছ, হাঁসের মাংস ও দই।
খাওয়া দাওয়া শেষে খানিকটা বিশ্রাম। ২১ ডিসেম্বর রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে
যাত্রা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত ছিল। তাই সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নিলেন। অলকদা
বললেন, লিপি আপার বাসায় সবার মালপত্র রেখে আমরা অনুষ্ঠানস্থল যাবো। সেখান
থেকে ওনার বাসা; তারপর ঢাকায় ফিরবো।
লিপু চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ফেরার
আগে গান বাজনা হলো। সদস্য রজত শুভ্র বিশ্বাস লোকজ গান ধরলেন। প্রথমে পথিক
নবীর গাওয়া জনপ্রিয় গান - নদীর জল ছিল না, কূল ছিল না, ছিল শুধু ঢেউ; আমার
একটা নদী ছিল জানলো নাতো কেউ। তারপর সাম্প্রতিককালের বিখ্যাত চলচ্চিত্র
হাওয়া ছবির ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি। উচু গলায় গাওয়া সমাবেত গানের
সশব্দে চেয়ারম্যান লিপু সাহেবের আশেপাশের লোকজন ছুটে এলেন। একটা মাক্রোতে
প্রায় অর্ধেক সদস্য লিপু ভাইয়ের বাড়ি ছেড়ে অনুষ্ঠানস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা
হলো।
সন্ধ্যায় গাড়ি আসতে দেরি দেখে সদস্য ববি সরকার ও তৃষ্ণা মার্টিনা
নিকটস্থ বাজারে দুধ চা পান করতে গেলেন। আমি, রূপশ্রী চক্রবর্তী দিদি ও আজাদ
ভাইও বাজারে গেলাম। দিদি ও আমি বিট কিনি। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ছবি তুলে
রাখলাম তিনজনে। আজাদ ভাই আর আমি লিপু ভাইয়ের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। একজন
যুবক এসে বললেন, চলে যাবেন ভাই?
জিয়ারুল নামের সে যুবকের চোখে দেখলাম
জল! বললেন, পৃথিবীতে আনন্দটাই সব। টাকা পয়সা ধন সম্পদ সবই তুচ্ছ। আজাদ
ভাইকে বললাম- জিয়ারুল ভাইয়ের সেলফোন নম্বরটা সঞ্চয় করে নিতে। যুবক
প্রস্থানের পর দৌড়ে এলেন এরশাদ সিকদার ভাই। বললেন গুড় কি আপনার নিতি হবে?
- দাঁড়ান! এনে দিচ্চি।
৩০০
টাকা খেঁজুরের পাটালি গুড়। ৯০০ টাকা দিয়ে ২ কেজি ৯৬০ গ্রাম গুড় ব্যাগে ভরে
নিলাম। পাশের বাড়ির মহিলা একজন বললেন ‘আপনারা আজি চলে যাচ্ছেন? ভাবচি গান
শুনপো।’
তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানাধীন নগরঘাটা গ্রামের মানুষ বেশ
আন্তরিক। ৯৫ শতাংশ জনগণ স্বচ্ছল এবং অতিথি পরায়ণ। ২৩টি গ্রাম নিয়ে নগরঘাটা
ইউনিয়ন। আয়তন ২৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার। ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ২২ হাজার ৪৮১ জন।
এরমধ্যে অধিকাংশ মহিলা। আর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাদের লিপু ভাই মো.
কামরুজ্জামান লিপু।
ফেরার রাতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিরিয়ানি নিয়ে সোজা
লিপি আপার বাসায়। কেউ বিরিয়ানি, কেউ লিপির আপার বাসায় বানানো রুটি, সবজি,
পাকা পেঁপে এবং দই মিষ্টি খেলেন। তারপর আমরা গ্রীন লাইন পরিবহনের বাসে উঠি।
বন্ধুবৎসল লিপি আপা তাঁর সহকর্মী জাহাঙ্গীর ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বিদায় জানান।
লিপি আপা এত করার পরও আফসোস করছিলেন! কী খাওয়ালাম না খাওয়ালাম দাদা
তোমাদের! আবার এসো তোমরা সবাই। আপা তন্ময়ে তাকালেন। চোখ মোছেন। মনে হলো
বিশ্বমৈত্রীর বন্ধন যেন ছুটে গেলো!
পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে
দক্ষিণাঞ্চলের মনোরম অবকাঠামোগত বহু সেতু এবং শক্ত সড়ক অতিক্রম করে
নিবিঘ্নে ২২ ডিসেম্বর ভোরে এসে ঢাকা পৌছি আমরা। বিকেলে লিপি আপা ফোন দিয়ে
আমাদের খবর নেন।
বিশ্বমৈত্রী সংস্কৃতি পরিষদ এর সাতক্ষীরা জেলা কমিটির
উদ্যোগে আবহমান বাংলা সাংস্কৃতিক উৎসবে আয়োজনে আতিথেয়তায় আমরা ভারি মুগ্ধ।
ভাবি লাল সবুজের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দেশে এখনও সোনার মানুষ
আছে। লিপু ভাইকে ভুলতে পারছি না! তাই ফোন দিলাম। বললাম, ঢাকা দলের হয়ে
আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন আপনাকে মনে রাখবো!
তিনি বলেন, ‘এমপি সাব ও লিপি আমাকে ভাই বলে জানেন। না বললেও এটা আমার
দায়িত্ব। মেহমানদারি করতি হবি। না করলে আপনি ক্যামন মানুষ?’ ●