সুইডিশ একাডেমি এ বছর (২০১৮) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দিচ্ছে না। ২০১৯
সালে সাহিত্যে দুটি পুরস্কার দেয়া হবে একটি ২০১৮ সালের জন্য অপরটি ২০১৯
সালের। সুইডিশ একাডেমির সদস্যদের #MeToo (যৌন কেলেঙ্কারি) স্ক্যান্ডাল ও
অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে
প্রতিবছরের মতো এবারও ১ অক্টোবর চিকিৎসাবিদ্যা অথবা মেডিসিনে নোবেল
পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। পরে অন্যান্য পুরস্কার পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হবে।
খবর এএফপি’র।
যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের পরে গত মে মাসে সুইডিশ একাডেমি এ বছরের নোবেল
সাহিত্য পুরস্কার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। একাডেমির স্থায়ী সেক্রেটারি
এন্ডার্স অলসন বলেন, জনগণের মাঝে একাডেমি সম্পর্কে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময়
লাগবে।
একাডেমির সদস্য লেখক ক্যাটারিনা ফ্রোসটেনসনের স্বামী একাডেমীর
ফটোগ্রাফার জেন ক্লদ আর্নল্ডের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের এই অভিযোগ আনা হয়।
১৮জন নারী তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে, তবে আর্নল্ড এই
অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। আর্নল্ডের বিরুদ্ধে একাডেমির গোপন তথ্য ফাঁস
করার অভিযোগ রয়েছে। পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম আগেই ফাঁস হওয়ার জন্য তাকে
দায়ী করা হয়। বব ডিলান এবং হ্যারল্ট প্রিন্টারের নাম ঘোষণার আগেই তাদের
কাছে এ খবর পৌঁছে যায়।
এ ঘটনায় ক্যাটারিনা ফ্রোসটেনসনের পদত্যাগে পরে ১৮ সদদ্যের কমিটির আরো ৩ সদস্য পদত্যাগ করেন।
অন্যদিকে সুইডিশ একাডেমির এই কেলেঙ্কারীর ঘটনার পরে সুইডিশ সোসাইটির ১০০ সদস্য “নিউ একাডেমী প্রাইজ” গঠন করেন। এই পুরস্কার প্রদানের প্রক্রিয়া সুইডিশ একাডেমির মতো গোপনীয় নয়। পাবলিক ভোটের মাধ্যমে ৪৭ জনকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হবে। তাদের শর্ট লিস্ট করে বিশেষজ্ঞরা চারজনের তালিকা তৈরি করবেন। এবার এই তালিকায় বাছাই হয়ে উঠে এসেছেন ব্রিটেনের নিল গেইম্যান, জাপানের হারুকি মুরাকামি এবং কানাডিয়ান কিম থাউই এবং ফ্রান্সের লেখক মার্সি কন্ডি। তবে মুরাকামি এই তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ১২ অক্টোবর এই নিউ একাডেমি পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।
সু চির নোবেল পুরস্কার নিয়ে যা বললো নোবেল কমিটি
সিএনএন
নরওয়ের
নোবেল কমিটির সেক্রেটারি ওলাভ এনজোয়েলস্টাড বলেছেন, অং সান সু চির
পুরস্কার প্রত্যাহার করা হবে না। এটা মনে রাখা উচিত যে পুরস্কার পাওয়ার মতো
অতীতের কোনো অর্জনের জন্যই পদার্থ, সাহিত্য বা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার
দেয়া হয়। সু চি গণতন্ত্র ও মুক্তির জন্য ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সংগ্রামের কারণে
ওই বছরই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। যে নিয়মানুসারে নোবেল পুরস্কার দেয়া
হয় সেটিই এই পুরস্কার প্রত্যাহারের অনুমোদন দেয় না।
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা অভিযান বন্ধে হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির নেত্রী অং সান সু চির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি উঠার প্রেক্ষিতে এই ঘোষণা দিলো নোবেল কমিটি। জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটন করেছে।
এর আগে ২০১৭ সালে নরওয়ের নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট
রেইস-অ্যান্ডারসনও জানিয়েছিলেন যে, সু চির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার করা
হবে না।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-নিপীড়ন শুরু হলে সু চির বেশ কয়েকটি পদক প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তাকে দেয়া ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড, ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব ডাবলিন অ্যাওয়ার্ড প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাজ্যের এই দুই শহর কর্তৃপক্ষ। এক যুগ আগে সু চিকে দেয়া সম্মাননা স্থগিত করে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন- ইউনিসন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মিউজিয়াম সু চিকে দেয়া মানবাধিকার পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়।