আজ যৌবনের কবি, প্রেমের কবি, কবিতার ফেরিওয়ালা হেলাল হাফিজের ৭১তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার বড়তলী গ্রামে তার জন্ম। শৈশবে মাকে হারানো হেলাল হাফিজ আশ্চর্য এক বেদনাবোধ নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। এই বেদনাবোধ থেকেই হয়ত কবিতার জন্ম।
হেলাল হাফিজ বাংলাদেশের এমন একজন আধুনিক কবি যিনি স্বল্পপ্রজ হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৭ বছর লেখালেখির পর তার কবিতা সংকলন যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। ওই গ্রন্থটির অসংখ্য সংস্করণ প্রকাশিত হলেও এরপর গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নিস্পৃহতা দেখা যায়।
২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তার অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’;- এ কবিতার দুটি পংক্তি ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে।
তিনি কষ্ট ফেরি করেন। যার কাছে রয়েছে হরেক রকম কষ্ট। আসলেই কী কষ্ট? নাকি তিনি ফেরি করেন এক বুক ভালোবাসা? আশ্চর্য রকম সব কবিতা তার। বাংলা কবিতার ইতিহাসে হেলাল হাফিজ তাই ভালোবাসা এবং কবিতার আশ্চর্য এক ফেরিওয়ালা।
অনেকে আবার নির্জন কবি বলেও ডাকেন তাকে। কী এক বেদনাবোধে ঘর ছেড়েছেন বহুবছর আগেই, সেই থেকেই তার হোটেল জীবন শুরু। কবিতার সংসারে নিমজ্জিত হতে গিয়ে ফিরে এসেছেন বারবার।
হেলাল হাফিজ এই শহরে, যন্ত্রণার শহরে এক সন্তমানুষ। সাধুকবি। ‘লোভ’ আর ‘খুন’ এর শহরে তিনি এখনো লোভহীন মানুষ-একা। এখনো তার কাছে শেষকথা জানতে চাইলে উজ্জ্বল হেসে বলেন, ‘প্রেম প্রেম এবং প্রেম’।
এক জীবনে বেশিরভাগ মানুষ জমায় টাকা অথচ যৌবনেই হেলাল হাফিজ কবিতায় মানুষ জমানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। ৬৮ বছর বয়সে আজ তাই মানুষের ভালোবাসাই তার শেষ সম্বল। বহুদিন হলো ভালো নেই তিনি, শরীরে বাসা বেধেছে নানা ধরনের অসুখ। কিছুদিন আগেই ডাক্তার জানিয়েছেন একটি চোখ চিরতরেই বুঝি হারালেন কবি।
প্রেমের কবি ধীরে ধীরে সৌন্দর্য দেখা ভুলে গেলে এ শহরের প্রেমও যেন বধির হয়ে যাবে। ৭১ তম জন্মদিনে কবিকে নিরন্তর শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন কবি।