নীহার লিখন, সমসাময়িক বাংলা কবিতায় উজ্জ্বল এক নাম, নব্বই পরবর্তী সময়ের বাংলা কবিতায় স্বাতন্ত্র্য একটি স্বরে যার কবিতা কাব্যমোদীদের কাছে বেশ সমাদৃত এবং বহুল পরিচিত। ইতোমধ্যে এই কবির প্রকশাতি পাঁচটি কাব্য যেনো এই সত্যটাকেউ শক্তপোক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে। প্রতিনিয়ত বিষয় ও প্রথাবিরোধী আঙ্গিকে এই কবির খুব সহজাত একটি মিশ্রছন্দের চাল যা আচ্ছন্ন করে পাঠককে,যা নীহার লিখনের একটি বিশেষ শক্তিমত্তাই বলা চলে,এর সাথে মিথের স্বার্থক ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত এই কবির নিত্য নতুন উপমা তৈরির মুন্সিয়ানাটি যেনো আলাদা করে তার জাতটিকে চিনয়ে দেয়, পাশাপাশি দীর্ঘ কবিতা আর সিরিজ কবিতায় কুশলী এই কবিকে প্রতিটি কাব্যেই পাওয়া যায় বৈচিত্র্যের নতুনত্বে নিজস্ব ভাষায়। ব্রহ্মপুত্র কাব্যের মহাকাব্যিক আবহের কবিটিকে'আমি আপেল নীরবতা বুঝি'তে এসেই তাই দেখা যায় কী চোস্ত সমসাময়িকতাকে অবলম্বন করে নেয় উপযুক্ত সব মেটাফোর আর অধিবাস্তবতায়, প্রচলিত ছন্দকে ভেঙে কী এক স্বাতন্ত্র্য ছন্দের আবেশে মুগ্ধ করেন বহুমাত্রায়। বৈচিত্রপ্রয়াসী এই কবির পরবর্তী প্রত্যেকটা কাব্যেই তার সতত নিজেকে ভিন্ন মাত্রায় ধারণ করবার প্রয়াসটি বেশ স্পস্টই লক্ষ্য করা যায়,তারই নিদর্শন তৃতীয় কাব্যটি ' ব্ল্যাকহোল ও পড়শি বাড়ি' এর পর চতুর্থ ও পঞ্চম কাব্য যথাক্রমে ' পিনাকী ধনুক'ও 'মনসিজ বাগানের শ্বেত', এই কাব্যদুটি এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলাতেই প্রকাশ পায়, যেখানে পিনাকী ধনুক বইটিতে মিশ্র ও গদ্য ছন্দে তার স্বকীয় ভাষা রীতিতে বহুমাত্রার গল্পের ছলে বহু বিষয় যেনো তিনিপাঠকের মন ও চিন্তার জগতে যেনো ছেড়ে দেন,আবার ' মনসিজ বাগানের শ্বেত'এ নীহার লিখন পাঠককে মোহাচ্ছন্ন করতে চান এক ধ্রুপদী ছন্দে,প্রচলিত সব ছন্দের মিথস্ক্রিয়ায় ভেঙেচুরে উপস্থাপন করেন প্রাচীন মিথ,আবহমান লোক ও মনন এবং সমসাময়িকতার সকল নির্যাস।এখানে উল্লেখ্য যে ' পারাবত' শিরোনামের একটি দীর্ঘ ( ১৮৮ পংক্তি) কবিতায় তিনি মাত্রাবৃত্ত ছন্দকে কী যুতসই অন্ত্যমিলেই না ইন্দো-ইউরোপিয়ান মিথে সমসাময়িক ভাবনার জীবনে এনেছেন পাঠকের সামনে। সতত বৈচিত্রকামী এই কবির পঞ্চম কাব্যটি যেনো আরও একটি অন্যতম নিদর্শন তার কাজের এবং প্রতিভার।সতত বিস্ময় জাগানিয়া প্রতিভাবান কবি নীহার লিখনের সাথে এই কথোপথনটি পাঠকের জন্যে তুলে ধরা হলো, সাথে তার আসন্ন কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি থেকে কয়েকটি কবিতাও
বার্তাঃ কেমন আছেন ?
নীহার লিখনঃ জ্বী ভালো, আপনি?
বার্তাঃ আগামীতে আপনার কী বই আসছে, বা এই মুহুর্তে কী ভাবছেন?
নীহার লিখনঃ খুব বেশী ভেবে চিন্তে কাজ যদিও আমার করা হয়ে উঠেনা, তবে এটা সত্যি কবিতা লেখার বিষয়টি ভিন্নই আমার কাছে,বিশেষ করে আমার প্রাত্যহিক অন্যান্য যে কোনো অপরিহার্য কাজের মধ্যে আমার কাছে কবিতা লেখার কাজটিই একমাত্র প্রায়োরিটির, এবং এক্ষেত্রে আমি অনেক কিছুকেই পাশ কাটিয়ে যাই বা গেছি এবং ভবিষ্যতেও হয়তো খুব বেশী নড়চড় হবে না এই জীবন ধারায়, হা হা হা... ও হ্যাঁ, ভবিষ্যতে কী বই আসবে জানতে চাচ্ছিলেন,দেখুন কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও কেন যানি অবচেতনেও একটা পরিকল্পনা আপনাকে পুশ করতে থাকবেই, হয়তো এটা চেতনারই খুব ঘোর যা করিয়ে নিতে চায় কিছু স্পেসিফিক কাজ,আমিতো বলবো এ পর্যন্ত যে সকল কাজ হয়েছে তার প্রত্যেকটাই যা পরবর্তীতে আমাকে বিস্মিত করেছে এভাবেই হয়েছে বা বলা যেতে পারে হয়ে গ্যাছে, সেটা সেই প্রথম কাব্য ব্রহ্মপুত্রই ধরেন, আর সবিশেষ কাব্য ' মনসিজ বাগানের শ্বেত', এখন ভাবছি পরের কাব্যটি " নতুন পৃথিবীর প্রথম বনমোরগ" নিয়ে, এটি আশা করছি করোনা গেলেই প্রকাশ পাবে
বার্তাঃ আচ্ছা, এই বইটি নিয়ে কিছু বলেন, আপনার আগের প্রত্যেকটা কাব্যেই দেখা গেছে আপনাকে পূর্বের গ্রন্থ থেকে ভিন্ন মাত্রায়, এবং এই বইটির নামকরণেও যেনো তারা আভাসটি মিলছেই, এখানে নতুন পৃথিবী এবং তার প্রথম বনমোরগ যেন কোনো বিশেষ ইঙ্গিতবাহীই
নীহার লিখানঃ হ্যাঁ আপনার অনুমানটি যথার্থই, এবং তা হওয়াটাই খুব সঙ্গত আর আমিতো এক রকম স্পস্টই করেছি পৃথিবীর আগে 'নতুন' আর বনমোরগের আগে 'প্রথম' শব্দদ্বয় জুড়ে দিয়ে;এখানে প্রসঙ্গক্রমে একটু বলি, এই নতুন পৃথিবী হতে পারে ভাবনার পৃথিবী যা নিয়ত জাগ্রতই তবে তাকে ঠিক যতোটা ডেজায়ারের হওয়া উচিত বা কাম্য ছিলো তা বহুলাংশেই পাই নি আমি বা আমার মতো আপনিও বোধহয়, বা বেশীরভাগ মানুষই, এই না পাওয়ার পিছনে কারণ গুলো অনেকই, তন্মধ্যে মেজর হিন্ডারিংস হচ্ছে বৈষম্য, যাকে জিইয়ে রাখে অনেক অনেক বাদ,ভেদ, বা প্রচলিত নীতিগুলো, তো নতুন পৃথিবীটি আসলে একটি সামষ্টিক স্বপ্নের অনুবাদের মতো ভাবা যেতে পারে, তা একীভূত একটা ভাষার মতো করে দিবে বা দিক পৃথিবীকে এমন চাওয়াটিই। এক্ষেত্রে আমার এমন চাওয়ার কারণটি যাকে দেখতে চাচ্ছি সামষ্টিক একটি বদল বা মুভমেন্টের মতো একটা কিছু তা আসলে সামষ্টিক একটা সংবেদ বা সংযোগেই আসতে পারে, এক্ষেত্রে আপনি লক্ষ্য করলেই টের পাবেন, বা চোখ খুললেই দেখতে পাচ্ছেন কোভিড/১৯ নামের এই ভাইরাসটি সারা পৃথিবীর ধারণাকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পেরেছেই, সুখে না হোক, অসুখেই, এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কোড হিসেবে নেয়া যেতে পারে প্রচলিত বৈষম্য বা বৈশিষ্ট্যের পৃথিবীর, এর আগেও নানান সময়ে নানান বড়সড়ো যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ পৃথিবীর অভিজ্ঞতায় আসলেও, এতো বিস্তৃতিতে প্রসারিত ছিলো না ওগুলো, কিংবা পৃথিবীর প্রচলিত সব কাঠামো, হোক সেটা ধর্ম,রাজনীতি,স্বাস্থ্যচিন্তা,অর্থ ও বানিজ্য বা সামাজিকতা এমন সব বিষয়কেই নাড়িয়ে দিতে পারার মতো ঘটনা পুর্বে খুব কমই দেখেছে এই পৃথিবী, এবং খুব ইতিবাচকভাবেই হয়তো এই ঘটনাকে স্মরণ রেখেই কিংবা এই ঘটনাবলীর লেসনগুলো পরবর্তীতে একটা নতুন পৃথিবীর জন্মই দিতে চাচ্ছে, যা সামষ্টিক একটি পৃথিবীই গড়তে যাচ্ছে নির্দিধায়, আমার এমনই মনে হয়, এবং এটা আমার ডেজায়ার, আমি সেই পৃথিবীকে ফিল করতে চাই, এবং প্রথম বনমোরগের মতোই
বার্তাঃ আচ্ছা, এই বইয়ের কবিতাগুলোর নির্মাণে তেমন কোনো বিশেষত্ব থাকছে নিশ্চই?
নীহার লিখনঃ হুম, ইচ্ছে করেই আমি চাচ্ছি এই লেখাগুলোকে কিছুটা মুক্তগদ্যের আবহে রাখতে, এবং গল্পের মতো করে খুব ইন্ট্রাপারস্পেকটিভ চিন্তাকে সাবলীল ভাবে ছড়িয়ে দিতে, এবং শব্দ বা বিষয়ে আরও একটু স্বাধীনতাকে প্রশ্রয় দিতে চেয়েছি, কখনো ননসেন্স স্টোরির মতো করে খুব স্পস্ট সেন্সকে ডিল করার ছল, যেখানে নিরেট কোনো স্বাদেশকিতাও যদি অবস্ট্রাকলের মতো মনে হয়, সেটাকেও ভাঙ্গতে দ্বিধা করিনি,ইতোমধ্যেই এই পান্ডুলিপির কিছু খসড়া কবিতা আমি এফবিতে পোস্ট করেছি
বার্তাঃ এই চিন্তায় কখনো মনে হয়নি আপনার, একটু রিস্কি হয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে, খুব অল্পসংখ্যক যে কয়জন সমসাময়িক কবিকে মনে হয় তার স্বাতন্ত্র্য একটি কাব্যভাষা আছে আপনি তাদেরই একজন, যার কবিতা নিছক কোনো একটি দশক ওয়ারী চিন্তার বাইরে আরও বিস্তৃত কালের
নী.লি. একেবারেই যে মনে হয় নি, তা বলবো না, তবে খুব বেশী দুর্ভাবনার কিছুও মনে হয় নি, তবে হ্যাঁ যে কাব্যভাষার কথা আপনি বলছেন তা আসলে আমার কাছে বিষয় তাড়না দ্বারা নির্মাণ বা প্রভাবিত হতে হতে সতত একটা বদলের ভিতর দিয়ে একটা যাত্রা বৈ কিছু মনে হয় না, সেটা হয়তো আপনি আমার প্রত্যেকটা কাব্যেই লক্ষ্য করে থাকবেন, আমি সবসময় নিজেকে বহুতে একের মধ্য দিয়েই, এক্ষেত্রে বিষয়হীনতা বা ভিন্নতাগুলোর রকম ফেরে হয়তো কিছু ফারাক পরিলক্ষিত হয় ন্যারশনে, তবে কোর পেটেন্ট নিশ্চই না বোধহয়, পৃথিবীর বহু কবিকেই কালে কালে এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছেই, পাবলো নেরুদা থেকে শুরু করে আমাদের শামসুর রাহমানের কথাই যদি ধরেনতো দেখবেন এই একই ঘটনায়, স্পেনের গৃহ যুদ্ধের পরে নেরুদার কবিতা, কিংবা প্রথম চারটি গ্রন্থের পরে বাঙ্গালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বন্দী শিবির থেকের রাহমান, ট্রু এটাচমেন্টের রুপান্তর, কোনো সত্য কবিই এগুলো এড়াতে পারে না
বার্তাঃ গদ্যে আপনাকে কম পাওয়া যাচ্ছে, যদিও বেশ কিছু ছোটো গল্পে আপনাকে পাওয়া গ্যাছে, কিন্তু পরিমানে খুবই কম, বিশেষ করে কবিতার তুলনায়তো সেটা খুবই কম, এর কারণ কী?
নীহার লিখনঃ আসলে আমার মনে হয় গদ্যে আমি অতোটা আয়েশ পাই না, স্বস্তিও কম পাই বলে মনে হয়, আর আমার প্রায়ই মনে হয়, একজন কবি যখন স্বতস্ফূর্ত ভাবে কবিতা লিখে যেতে পারে, সে সময় তার মনে প্রাণে কবিতাটাই লেখা উচিত, কবিতাতেই স্বার্থক ভাবে সব গল্প লিখে ফেলা যায়ই, এমনকি দর্শন বা চিন্তাকেও খুব অর্থবহ করে তোলা যায়
বার্তাঃ এক্ষেত্রে কী কখনো মনে হয় না কবিতায় ঠিক ততোটা ভাস্ট হওয়ার সুযোগ থাকে না, বিশেষ করে গদ্যের তুলনায় কবিতা একটু বেশীই সিম্বোলিক?
নীহার লিখনঃ প্রত্যেকটা শিল্পেই হয়তো মাধ্যমগত কিছু স্পেসিফিকেশন বা স্পেসিফিক পপুলেশন থাকেই, আর যেটা বললেন 'বেশীই সিম্বোলিক', হ্যাঁ এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই, তবে কী একটা বিষয়, কবিতা কোড ল্যাঙ্গুয়েজের মতোই আর যারা এটা ডিকোড করতে ভালোবাসে বা জানে, এটা শুধু তাদেরই হয়, আর আমি তাদের জন্যেই কবিতাটা লিখি, কাজেই অন্য কোনো মাধ্যমে আমার আপাতত মুভ করার অতোটা তাগাদা নেই, তবে ভবিষ্যতে গদ্য নিয়ে আরও চিন্তাতো আছেই,তবে এখন পর্যন্ত কবিতাতেই শান্তিটা পাচ্ছি, উপভোগও করছি এই শান্তিটা, যদিও এর মধ্যেই প্রায় অনেকটাই এগিয়ে গ্যাছে প্রথম উপন্যাস 'মধুপুর'এর কাজ, এই বইটিও হয়তো হুট করেই সারপ্রাইজিংলি প্রকাশের ঘোষণায় দেখতে পারেন
বার্তাঃ বাহ! দারুণ খবর, তা আপনার কবিতা সম্পর্কে পাঠককে আর আলাদা করে কিছু বলার নেই, তবে কৌতুহল থাকছে উপন্যাসটি নিয়েই, যদিও ইতোমধ্যে আপনার বেশ কিছু গল্প বয়ান গল্প পত্রিকা সহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানে বিচ্ছিন্ন সোর্সে পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার, এবং গল্পগুলো পড়তে পড়তে প্রায়ই মনে হয়েছে আমার কথক অনুপস্থিত থাকলেও কেন যানি একজন কথকের খুব নিজস্ব জীবনের ভাবনাগুলোই কখনো সাইকোএনালাইসিসে, বা আদিভৌতিকতার ছলে হাজির করতে চাচ্ছেন, তা মধুপুর উপন্যাসটি কেমন হবে?
নীহার লিখনঃ দেখেন, মহেশ্বেতা দেবী কোনো একটা ইন্টারভিউতে একবার বলেছিলেন একটা কথা, যা আমার ভালো লেগেছে এবং সত্য মানি সেটা এবং বোধকরি একটু আইরনির মতো শোনালেও সেটাই সত্যি ' আমার কোনো কমিটমেন্ট নেই, আমি যা দেখি তাই লিখি' আমিও আসলে সেরকমই, হয়তো নির্মাণেরও একটা চাহিদাতো থাকেই, যদিও অনেকেই এটাকে গিমিকের মতো ইউজ করে থাকেন, বা ভাবেন, তবে আমি সেরকমটা ভাবতে বা করতে চাই নি কখনোই, এতে সত্য নির্মাণ হয় না বলেই আমার বিশ্বাস, আর ফিকশনে যতোটা সম্ভব প্রচলিত বাস্তবতাকে আড়ালে রেখেই একটা বাস্তবতা তৈরি করতে হয় বলেই আমি মনে করি, সেটাতেও উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টা থাকেই, এবং অনেকটাই তা কবিতার মতোই, আর সাইকোএনালাইসিস ছাড়া ফিকশনে আপনি হয়তো আখ্যান তৈরি করতে পারবেন তবে আমার চাওয়াটাকে কেবল কোনো আখ্যান নির্মাণেই আটকে রাখতে চাই নি আমি, যতোটা সংক্রমণ আমি নিজে টের পেয়েছি বা পাই স্বজাত কোনো চিন্তার দ্বারা, ঠিক ততোটাই করতে চাই অন্যকেও সংক্রমিত করতে চাই সেই চিন্তাটি দিয়েই
বার্তাঃ ইদানিং কী পড়ছেন, এই করোনার দিনে, আর করোনা নিয়ে অনেকেই খুব লিখছে সেগুলো কেমন লাগছে
নীহার লিখনঃ ইদানিং অনেক কিছুই একটু একটু করে পড়ছি, মানে এক নাগাড়ে একটা বই না, বা একই জনরার কিছুবই এক নাগাড়ে না, একটা ফিকশনের মধ্যে বিরতি দিয়ে কয়েক ঘন্টা কবিতা, বা প্রবন্ধ, বা অন্য কোনো কিছু লেখা এভাবেই পড়ার অভ্যাস আমার, প্রায় ক্ল্যাসিক কিছু বই যেগুলো পড়া হয়নি সেগুলোকেও পড়ার চেষ্টা করেছি, এবং এর মধ্যে একটা বই আছে লোক গানের, জালাল খাঁর গান যেটা সম্পাদানা করেছেন যতীন সরকার সেটাও আছে। আর করোনার এইসময়ে সত্যিই অনেক কবিতা বা অনেকেই লিখছেন, তবে কঠোর হলেও সত্যিটা হচ্ছে এই যে, এসবের অধিকাংশই যেনো সুপার ইম্পোজড বাই করোনা, আমার কাছে কেন যানি মনে হয় এগুলোর কালিক একটা তাৎপর্য থাকলে থাকতেও পারে তবে এস্থিটিকেলি এসবের অধিকাংশই কেন যানি ইনডেপথে এই ক্রাইসিসকে খুব স্থুল কবিতায় রুপান্তর করে ফেলছে। মোদ্দা কথা কবিতা যে হয়ে উঠার একটা শিল্প তা শুধু খুব স্পেসিফাইড বাস্তবতার প্রেজেন্টেশনেই হয় না, করোনা ২০২০ এর একটি এনডেমিক এবং সারা বিশ্বেই তা একটি বিপর্যয় ডেকে এনেছে কোনো সন্দেহ নাই, কিন্তু আদতে একটা ব্যক্তির জীবনে একটা বিপর্যয় বা অস্তিত্বের সংকটাশ্রয়ী চিন্তাইতো, তাকে সব কালের করে তোলার প্রয়াসটি এ ক্ষেত্রে কেন যানি এই সময়ে লেখা অধিকাংশ কবিদের কবিতায় অনুপস্থিতই, কেবল করোনা বন্দনার মতোই যেন লিখছেন অনেকেই, হা হা হা
বার্তাঃ তার মানে বলতে চাচ্ছেন অধিকাংশই কিছু হচ্ছে না!
নীহার লিখনঃ আমি সেরকম কিছু বলার কে! তবে আমি যা মনে করি, আশা করি তা স্ববিস্তারেই বলতে চেষ্টা করেছি, এর ভিন্ন মতও থাকতে পারে কারও কারও, তবে একটা জিনিস খুব মনে হয়, তা হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও এরকম হরেদরে যেমন তেমন লেখাপত্তর দেদারসে হয়েছিলো, কিন্তু আখেড়ে কয়েক দশক পড়েই মনস্তাত্ত্বিক ধারণায় মুক্তিযুদ্ধ কী বস্তু,বা কী ধারণাটা তার সাথে পুরাই অমিল থেকে ওগুলোকে তেমন কোনো কাজের কাজ হয় নাই বলার লোকই বেশী এখন, ঠিক যে বিষয়য়ি আমাদের সত্তর পুর্ববর্তী কবিদের কবিতা নিয়েও বলা যায়, যদিও সেই সব কবিতার উপযোগ ছিলো খুব উদ্বায়ী সময়েরই চিন্তা ধারার ফসল, তবে ওগুলোকে কেবল স্লোগান হিসেবেই ট্রিট করছে পরবর্তী কালের অনেক পাঠক, আবার ঠিক একই ধারার বিপ্লবী মানসিকতাটা আফ্রিকান কবি বেন ও'করি, বা নাজিম হিকমত, বা দারবীশের হাতে এস্থিটিকেলি সব কালের চৈতন্যের ইম্পালশন হিসেবে টিকে থাকছে, ফারাকটা এই
বার্তাঃ তার মানে ফারাকটা মেধার বা শৈলীর, তাই নয় কি?
নীহার লিখনঃ অবশ্যই তাই, এটা বলার অপেক্ষাই রাখে না,আর নিশ্চই প্রস্তুতিও একটা ফ্যাক্ট, মানে মননকে সুগঠিত করার মতোই এই ব্যাপারটা, একজন কবি একজন দিনমজুরের মতোও,তার পেশী পরিশ্রম হিসেবে যে কোনো শ্রমকেই চিনে নিতে পারে, নিতে হয়,
বার্তাঃ ইদানিং আপনাকে অনেকেই বাউলিয়ানার আসক্তিতে পাচ্ছে, অনেকেই সাধু বলে ডাকে, এমনিতে বাংলা সাহিত্যে আপনার পরিচিতিটা ' ব্রহ্মপুত্রের কবি' হিশেবেই জানেন সবাই, তা আপনার জীবনের এটা কি কোনো নতুন মোড়?
নীহার লিখনঃ হা হা হা... না না তেমন কিছু না, আগেই বলেছি এতো ভেবে চিন্তে কিছু আমি করি না, তবে পাউলো কোয়েলহোর জীবনটা আমাকে খুব আকর্ষন করে, অল্পবিস্তর কিছুটা আমিও ওমেন বিশ্বাস করি, হয়তো তার ভক্ত বলেই, তবে কী একটা কথা, আমি জীবনকে নদীর মতোই ছাড়াপড়া ভাবতে পারি, এটা হয়তো ঠিক এরকম না ভেবেও উপায় আমার ছিলো না, বা এখনো নাই, তবে এটায় স্বস্তি পাই, একধরনের শুন্যতা তৈরি হয় এমন যাপনে, যাকে অনেকেই 'পরম' হিশেবে ভেবেছে, কুষ্টিয়ার লালনের মাঠ,মাজার, বা গড়াই ব্রীজ আমার কাছে অজস্র ওমেনের মতোই। কোহেলহোর কথায়, আমি ওগুলো ডিকোড করতে ভালোবাসি, আমার পঞ্চম কাব্য 'মনসিজ বাগানের শ্বেত' ওখানেই লেখা, এই কাব্যের দর্শনে এর প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছেই, ভাবে, বৈরাগ্যে এক পরমের অন্বেষণটা এই কাব্যে ছড়িয়েছে বেশ স্বস্টতই, পাঠকরাও আমাকে এমনটা বারবারই বলেছে
বার্তাঃ ধন্যবাদ নীহার লিখন, ভালো থাকবেন
নীহার লিখনঃ আপনাকেও ধন্যবাদ, ভালো থাকুন আপনিও
~~~~
'নতুন পৃথিবীর প্রথম বনমোরগ' পান্ডুলিপি থেকে কয়েকটি কবিতা
ছুটে যাচ্ছো
তুমি,নগ্ন
শরীরটা তোমার
লাফাচ্ছে,
স্তনদুটো গোলাপের
মতো দুলছে,
গালের মাংসগুলো
সাগরের ঢেউয়ের
মতো চলে
যাচ্ছে আবার
ফিরে আসছে,সাদা উরু
বেয়ে লবণের
ফেঁনা নেমে
ভিজে যাচ্ছে
পথ,সূর্য
ডুবে যাচ্ছে,
সন্ধ্যা নেমে
আসছে, ছুটে
যাচ্ছো তুমি,শরীরটা তোমার
লাফাচ্ছে,স্তন
দুটো গোলাপের
মতো দুলছে,
অন্ধকার মোটা
হয়ে যাচ্ছে,
উরু বেয়ে
তোমার নামছে
পুঁজ,আমার
মেমব্রেন,বুরোক্রেসির
সব গতি
ও ঘোড়া,
সুন্দর বন,
আমার প্রতিভু
সব বাঘের
হুঙ্কার
ছুটে যাচ্ছো তুমি,একটা অনন্ত নগ্ন হরিণ,তোমার স্তন দুটো গোলাপের মতো দুলছে
প্রমিত চেহারার একটা কাক বসে রুটি খাচ্ছিলো টিনের খয়েরী চালায় ফোস্কা পড়া রুটিগন্ধের শহরে,কচি পতিতার পাতলামি ভরা এক সকালে, লোকজন খুচরা পয়সার মতো ঝরে পড়ছিলো যেনো পকেট ছিড়ে,খালুই থেকে লাফিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো সবাই
আমি ভীর ঠেলে দেখেছি কাপড় তুলে,কোনো শহর না যেন,স্পার্মের দাগ লাগা একটা ইটভাটা ছাড়া
কিছু না এ শহর,কেবল সন্ধ্যার জন্যে অপেক্ষারত সেই পতিতাটা, আর ওইটুকু আলো এক সামান্য প্রিন্টের রঙিন শাড়ি,যার তাপে গলে যাচ্ছে মানুষ
ভাদ্রবউটাকে নিয়ে গেছি সীবিচে; লাল ব্রা পরা তার একটা ছবি তোলা হবে,পায়ের পাতা বেয়ে নেমে যাচ্ছে মেঘ,সমুদ্র শালিক,বুকে ঠেসে ধরা বড় একটা ডাব,স্ট্রটা চিবাচ্ছে আরেকটা সানি লীওন
পজ,ক্যামেরা ম্যানকে বলি, আচ্ছা ডাবটা কি মনোসংযোগে কোনো ভুল কিছু করছে না তো! ইন রিপ্লাই উত্তরে সে বলে, না ডাবটাতো সবুজ,তাই সমস্যা হবে না তেমন
আবার বলি স্টপ, আচ্ছা আমব্রেলাটার জন্যে আলো ফেঁসে যাচ্ছে বোধহয়!
সাটার ক্লিক করার আগে তার বিরক্তি ভরা কন্ঠের বাক্য আসে,ওসব কোনো ফ্যাক্টর না, ইনফ্যাক্ট সব ছবিতে ছবি দরকার পড়ে না,তবু যেহেতু আপনার এতোই ইচ্ছা,ভাবীকে আপনি নিয়মিত ফেয়ার এন্ড লাভলীটা ট্রাই করাতে পারেন দু'বেলা
আমরা দুজনেই
জব হোল্ডার,
তুমি নিপল
চুষতে দিয়ে
বলো, রাত
অনেক হলো,সকাল সকাল
উঠতে হবে
আমি চুষতে
গিয়ে পাই
প্রাক্তন কোনো
কামড়ের স্পট,
বাতি জ্বালাতে
চাইতেই বলো
স্টপ, অর্গাজম
হয়ে গ্যাছে,
চলো ঘুমিয়ে
পড়ি, কাল
খুব শক্ত
এসাইনমেন্ট, ফ্যানটা একটু জোরে দিওতো
পারলে,আমি
সিলিংয়ে চেয়ে
দেখি কসমোপলিটন
একটা অন্ধকার
থেকে খুব
প্রাচীণ রঙের
এক বাতাস
বিছানার চাদরটায়
আছড়ে পড়ছে,
আমার শরীরটা
আজও কালোই
রয়ে গেলো,
চিটচিটে ঘাম
আর শুকাচ্ছেই
না,কাল
সকালে আবার
অফিস,আমার
সে ফুরসত
নাই ভাবার,তার নিপলটাতে
কার কামড়
ছিলো ওটা,আমি তাকে
খুব ভালোবাসি,
সেও আমাকে,আমদের বহুবছরের
একটা লিভটুগেদার