যাদের হাত ধরে বাংলা মঞ্চ নাটক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সেইসব দিকপালদের একজন নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের। ৬ নভেম্বর তার জন্মদিন। আর এই দিনে গ্যালিলিও হয়ে শিল্পকলায় মঞ্চ মাতাবেন প্রবীন এই তারকা অভিনেতা।
প্রায় ত্রিশ বছর আগে বাংলার মঞ্চ নাটকে প্রথমবার দেখা গিয়েছিলো গ্যালিলিওকে। নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা আতাউর রহমান। সেসময় টানা দশ বছর নাটকটির মঞ্চায়ন চললেও গত বিশ বছর ধরে মঞ্চায়ন বন্ধ আছে ‘গ্যালিলিও’র। তবে এবার নতুন রূপে বাংলার দর্শকের সামনে মঞ্চে এলো গ্যালিলিওর জীবনী। যার নাট্য নির্দেশনায় আছেন পান্থ শাহরিয়ার। আর এই নাটকেই গ্যালিলিওর চরিত্রে অভিনয় করে ইতিমধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন আলী যাকের।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় গত ৫ অক্টোবর মহিলা সমিতিতে প্রদর্শীত হয় নাটকটি। ব্রেটল ব্রেখটের ‘দ্য লাইফ অব গ্যালিলিও গ্যালিলি’ অবলম্বনে নাটকটির বাংলা অনুবাদ করেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। যে নাটকে গ্যালিলিওর চরিত্রে আলী যাকের ছাড়াও অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর, কাওসার চৌধুরী, ফারুক আহমেদ পান্থ শাহরিয়ারসহ অনেকে।
কুড়ি বছর পর মঞ্চে আসছে ‘গ্যালিলিও’। নাটকটি নিয়ে এই চ্যানেল আই অনলাইনকে নির্দেশক পান্থ শাহরিয়ার বলেন, আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘গ্যালিলিও’ নাটকটি আগে আড়াই ঘন্টার ছিলো সেটাকে আমি দেড় ঘন্টায় নামিয়ে এনেছি। এখনকার দর্শকদের ধৈর্য্যচুত্যি ঘটেছে। আড়াই ঘন্টার নাটক এখন তারা দেখতে চায় না। তাই একটু নতুনভাবে মঞ্চায়নে নাটকটির পরিকল্পনা করেছি।
নতুন করে মঞ্চে ‘গ্যালিলিও’র প্রদর্শনীকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন জানিয়ে এই নির্দেশক জানান, আতা ভাই আশির দশকে যে ‘গ্যালিলিও’ করেছিলেন সেটা বাংলা মঞ্চ নাটকের মাইলস্টোন হয়ে আছে। এটাকে নতুন করে তৈরি করা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ ছিলো।
আজকের সময়ে মিথ্যা যে চারদিক ঢেকে দিচ্ছে, অথচ গ্যালিলিও তার সময়ে বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে সত্যের জন্য যে ফাইট করেছিলেন এটা তরুণদের অনুধাবন করাতে চাই। এই নাটকটি দেখে ইয়াং জেনারেশন যদি বিন্দুমাত্র অনুধান করতে পারেন যে, সত্যের জন্য ফাইট করা দরকার আছে তাহলেই আমি মনে করি আমি ও আমার দল পুরোপুরি সাকসেস।
তরুণ দর্শকদের টার্গেট করে নাটকটি নতুন পরিকল্পনায় মঞ্চস্থ হয়েছে এবং প্রথম শোতেই নাটকটি টার্গেট দর্শকদের কাছে পৌঁছুতে পেরেছে বলে মনে করেন পান্থ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, গ্যালিলিওর সময়ে ধর্মান্ধতা কিংবা শাসক শ্রেণির যে চেপে বসা, এটা তখন যেমন ছিলো এখনো তেমনি প্রাসঙ্গিক। এরকম একটি নাটক তরুণ প্রজন্ম যেন দেখতে পায়, সেজন্যই আমরা তাদের টার্গেট দর্শক ভেবেছি এবং আমরা মনে করি আমাদের টার্গেট পূরণ হচ্ছে।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের মঞ্চ নাটকে ভালো নাটকের অভাব। কিন্তু দেখুন, যখনই ভালো নাটক হয়েছে তখনই দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ইদানিং বেশকিছু নাটকের ক্ষেত্রে তাই দেখা গেছে। আমাদের টার্গেট ছিলো তরুণ দর্শক। যাদের বয়স ২৫ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে। গ্যালিলিও’র মঞ্চায়নে আমরা দেখেছি, কলেজ ইউনিভার্সিটির ছেলে মেয়েরা নাটকটি দেখতে এসেছে। এগুলোকে আমি পজিটিভ ভাবে দেখি।
৬ নভেম্বরের পর আগামি ১০ নভেম্বরও দর্শকের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে প্রদর্শীত হবে ‘গ্যালিলিও’।