ঢাকার মঞ্চে সদ্যসমাপ্ত জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মঞ্চায়ন ও-এর বিষয়, প্রকরণ-কৌশল, নান্দনিকতা নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন, অনেকেই বলবেন। সাদা চোখে, কেবল একজন পাঠক (যেহেতু এটা একটা উপন্যাস) ও দর্শক হিসেবে এর কারিগরি দিক, সৌন্দর্য বিষয়ে আলোচনার এখতিয়ার আমার নেই বলেই বিবেচনা করি। প্রোসেনিয়াম, আবহ সংগীতের বাড়াবাড়ি, প্রপসের অতি ব্যবহার, নীরবতাহীনতা, একটানা উপস্থাপন এইসব নাটকের শিল্পমূল্য কতখানি বাড়ালো নাকি ক্ষতিসাধন করলো তা আমার আলোচনার বিষয় নয়। তবে, যেহেতু এটি নিদারুণভাবে একটি রাজনৈতিক টেক্সট (পাঠ), ফলে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই উপন্যাস পাঠ ও নাটক দেখার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আমার কিছু বলবার আছে বলেই মনে করি।
প্রথমে তদন্ত করা দরকার একই নাট্যনির্দেশকের গতবছর (২০১৮) সেপ্টেম্বরে নামানো ‘রিজওয়ান’ মঞ্চপাড়ায় যতখানি হুল্লোড় তুলতে সক্ষম হয়েছিল এবারের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ ঠিক ততখানি হুল্লোড় জাগাতে ব্যর্থ হলো কেন?
প্রাজ্ঞ নাট্যাভিনেতা আতাউর রহমান খান ও রামেন্দু মজুমদার ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ নাটকটি নিয়ে ‘কড়া প্রতিবাদ’ কেন জানালেন?
সর্বোপরি, কী আছে জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায়?
তুখোড় মেধাবী, জ্ঞানপিশাচ এই নাট্যকার বা নাট্যনির্দেশক কিংবা পরিচালক সৈয়দ জামিল ইতিপূর্বে যে সকল নাটক মঞ্চায়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন তার কোনোটিই ঢাকার নাট্যমঞ্চের প্রচলিত নাট্য ঘরানার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সামাঞ্জস্যপূর্ণ কিংবা একই ঘরানার হতে হবে এমন দাবি আমি করছি না। ঢাকায় ক্রিয়াশীল নাট্যদলের সংখ্যা অনেক, হতে পারে বহু। এর ভেতর ঢাকা থিয়েটার ও নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় দল দুটির নামই বিশেষভাবে ঘুরে ফিরে আসে।
অন্যদের নাম যে আসে না, ব্যাপারটি এমন নয়। তবে ঢাকার রঙ্গমঞ্চ মূলত আবর্তিত হয় শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৈয়দ শামসুল হক ও সেলিম আল দীনকে ঘিরে। এর বাইরে এস এম সোলায়মান, ফয়েজ আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ এমন আরোকিছু নাম হয়তো করা যাবে। নতুনেরাও নানাভাবে তাদের সৃজনশীলতা ও কর্মপ্রয়াস নিয়ে প্রতিনিয়ত মঞ্চের সাথে যুক্ত হচ্ছেন।
শুরু থেকেই সৈয়দ জামিল আহমেদ মঞ্চায়নের জন্য যেসব নাটক বেছে নিয়েছেন তার প্রায় কোনোটাই সে অর্থে নাটক নয়। রিজওয়ানের কথাই ধরা যাক। এর মূলে রয়েছে একটি কাব্যগ্রন্থ, কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি আগা শহীদ আলীর লেখা ‘দ্য কান্ট্রি উইদাউট এ পোস্ট অফিস’। যা অপর দুই ভারতীয় যথাক্রমে অভিষেক মজুমদার ও ঋদ্ধিবেশ ভট্টাচার্য-এর হাত ঘুরে সৈয়দ জামিল আহমেদের মাধ্যমে শিল্পকলার পরীক্ষণ থিয়েটারে এসে মঞ্চস্থ হয়। মঞ্চায়নের শুরুতেই বিপুল সাড়া ফেলে নাটকটি। নানা কারণে এটি একটি বিশেষ নাটকের মর্যাদা লাভ করে। খুঁজে দেখা দরকার সেই নানা কারণগুলো কী কী?
কাশ্মীরের যে ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা আমরা অরুন্ধতী রায়ের ‘মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ বইয়ে পাই, রিজওয়ানে সেটাই এসেছে আরও বেশি হৃদয়স্পর্শী রূপ নিয়ে। কথা হলো ১৯৭১ সালের ভয়াবহতা অতিক্রমী একটা জাতির কাছে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে সংঘঠিত মানবিক বিপর্যয় ও নিপীড়নের কাহিনি সমাদৃত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে রিজওয়ান ঢাকার মধ্যবিত্ত সেই স্পিরিট থেকে গ্রহণ করেনি, একথা জোর দিয়েই বলা যায়।
রিজওয়ান নিয়ে প্রথমেই হৈ-চৈ সৃষ্টি করে ঢাকার চিহ্নিত প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। যাদের কাছে বাঙালি হত্যাযজ্ঞের চেয়ে কাশ্মীরি নীপিড়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিহারি কসাইদের দ্বারা সংঘটিত লুটপাট-হত্যার চেয়ে কাদের সিদ্দীকীর চারজন খুনি বিহারীকে বেয়োনেট বিদ্ধ করার ঘটনাটি অ্যাকাডেমিক্যালি অধিক উপাদেয়। সংগত কারণেই এবং আমাদের জনসমাজে বিদ্যমান স্থুল ভারত বিরোধীতা ও ধর্মান্ধতার পালে সঠিকভাবে হাওয়া দিতে সক্ষম হওয়ার ফলেই রিজওয়ান নিয়ে এতটা হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটেছে। এই গেল একটা কারণ। অপরটা হলো, ঢাকাই মধ্যবিত্তের হুজুগ প্রিয়তা। ‘এতবড়ো’ কাণ্ড ঘটছে অথচ আমি সেখানে নেই! তা-কিভাবে সম্ভব? ফলে কাজ-কর্ম ফেলে আগে সেদিকে ছোটো, হাজির হও, ছবি তোলো, পোস্ট-শেয়ার এসব করো। মিলিয়ে যা হবার তা-ই হয়েছে।
এবার খতিয়ে দেখা যাক প্রয়াত ঔপন্যাসিক শহীদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসের মঞ্চায়ন নিয়ে এতটা হুল্লোড় কেন হলো না? সে বিষয়টি। দশ দিনে রিজওয়ানের মঞ্চায়ন সংখ্যা উনিশ, অতিউচ্চমূল্যের টিকেট সত্ত্বেও প্রতিটি শো হাউসফুল। পক্ষান্তরে চৌদ্দ থেকে বিশ এই সাত দিনে জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মঞ্চায়ন সংখ্যা এগারো। যার কোনোটিই হাউসফুল নয়। টিকিটের মূল্য পাঁচশ ও একহাজার রাখা হলেও পরে তিনশ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কেন শো-গুলো হাউসফুল হলো না? তারও কারণ ঐখানে, অর্থাৎ যে কারণে রিজওয়ান এতটা শব্দ নিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছিল।
শহীদুল জহিরের এই উপন্যাস যত লোকের পড়া আছে এবং যত লোক নাটকটি দেখেছেন তারা সকলেই জানেন, এই উপন্যাস বা নাটকের একটি প্রধান অংশজুড়ে বর্ণিত হয়েছে নরঘাতক বদু মওলানার খুনে-নৃশংসতা ও দালালির ঘটনা, বর্ণিত হয়েছে লক্ষ্মীবজারে পাক-বাহিনীর দফায়-দফায় চালানো হত্যাযজ্ঞের বিবরণ। ফলে আর-কি? এসব নিয়ে ঢাকার মিডিয়াওয়ালা প্রতিক্রিয়াশীলরা এতটা উৎসাহ দেখাবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর মিডিয়াওয়ালারা উৎসাহ দেখাবে না বিধায় রবাহুত মধ্যবিত্ত সেখানে ভিড় করবে না। ফলে এক্ষেত্রেও যা হবার তা-ই হয়েছে। যুক্তি হিসেবে হয়তো বলা যাবে, লোক যথেষ্টই হয়েছে, পরীক্ষণ আর জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চের আসনসংখ্য সমান নয়। কিন্তু সে যুক্তি সঠিক নয়, তা সরল চোখেই বোঝা যায়।
এবার আসা যাক আতাউর রহমান খান ও রামেন্দু মজুমদারের নাটকটি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়ার কারণ অনুসন্ধানের বিষয়টিতে। এই প্রশ্নের উত্তরও বোধকরি পাওয়া যাবে উপন্যাস কিংবা নাটকে বর্ণিত ঘটনাবলিতে। কী আছে শহীদুল জহিরের উপন্যাসটিতে? আছে ১৯৮৫ সালে পুরাতন ঢাকার বোধকরি সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা; নিদারুণ সেই বাস্তবতা। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক সংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া সংগঠনটির দুজন ‘নেতা’ একইদিনে-একইসময়ে সফলভাবে হরতাল পালনের জন্য এলাকাবাসিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এই দৃশ্য মিথ্যে নয়। কিন্তু এই মর্মন্তুদ বাস্তবতা কীভাবে সৃষ্টি হলো, তার কারণ হিসেবে পৌনপুনিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র দুটি বাক্য। এক. ‘সাধারণক্ষমা ঘোষিত হয়েছে।’
শহীদুল জহির এই উপন্যাস লিখেছেন ছিয়াশি-সাতাশি সালে এবং তিনি বিগত হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে সচেতন ব্যক্তিবর্গ বাহাত্তর সাল থেকেই জানতেন, সাধারণক্ষমা কাদের করা হয়েছে, কাদের করা হয়নি। শহীদুল জহির জানতেন না, এমনটা ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। ডিসেম্বরের শুরুতে বিশেষত ভারতীয় বোমারু বিমানগুলো ঢাকায় বোমাবর্ষণ শুরু করার পর থেকে যেসব বদু মওলানা পিরোজপুরের খেপুপাড়াসহ বাংলাদেশের প্রান্তবর্তী জনপদগুলোতে পালিয়ে যায় তাদের অনেকেই আবার তিয়াত্তর সালের শুরুর দিকে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
প্রথমত শহীদুল জহির তাঁর প্রায় সকল রচনায় তথ্য পরিবেশন করেছেন জনশ্রুতির দোহাই দিয়ে। তিনি বার বার বলেছেন, ‘মহল্লার লোকেরা বলে, মহল্লার লোকেরা জানে’ ইত্যাদি। তদুপরি তিনি ছাত্রাবস্থায় পিকিংপন্থী রাজনীতির সমর্থক ছিলেন সেটাও তিনি জানিয়েছেন। পিকিংপন্থীদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া প্রাথমিকভাবে কী ছিল, কেমন ছিল, স্বাধীনতা পরবর্তীকালেই বা সেটার চেহারা কী রূপ পরিগ্রহ করে তা আপনাদের কারোই অবিদিত নয়। ‘সাধারণক্ষমার’ সুক্ষ্ম বিষয়গুলো জনসমাজে প্রচারের ব্যবস্থা বাহাত্তর-তিয়াত্তর সালে ছিল না। বাহাত্তরের নভেম্বরে ছাত্রলীগের পেটফুঁড়ে বেরিয়ে পড়ে জাসদ নামক এক ভীষণ দানব।
অভ্যন্তরে জাসদ, মানুষের ক্ষুধা, লুটেরাগোষ্ঠী, বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কস্থাপন এমন অজস্র কাজে ব্যস্ত রাষ্ট্র বদু মওলানাদের বিচারের দিকে নজর রাখতে পারেনি। মূলত রাশিয়া এবং ভারত বাদে সারাবিশ্বের (রাষ্ট্রশক্তি, মানুষ নয়) সাধারণ ইচ্ছার বাইরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এবং তৎপরবর্তী কয়েকবছরের কূটনীতিতে ভারত এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে ক্রমাগতভাবে কেবল হেরেই গেছে, হতে পারে এটা যুদ্ধজয়ের খেসারত। এবং এটাও বাস্তবতা। তারপরও এইসময়ে মানবতাবিরোধীদের অপরাধের বিচার চলছিল, ফাঁসিও হয়েছে অনেক রাজাকারের, সংখ্যাটা খোঁজ নিয়ে জানা যেতে পারে।
পঁচাত্তর পরবর্তী প্রচার ও যোগাড়যন্ত্রের কবলে পড়ে ‘সাধারণক্ষমা’ নামক এই অর্ধসত্য এমনকি রাজনৈতিক অপলাপটি নাগরিকসমাজের মধ্যেও প্রোথিত হয়ে যায়। এবং এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা ২০১৩ সালে সংঘটিত গণজাগরণের পূর্বে ‘নতুন প্রজন্মের’ ভেতরেও তৈরি হয়নি।
দ্বিতীয় অপলাপ, নাটক এবং উপন্যাসে দেখা যায়, লক্ষ্মীবাজারের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজ পাঠান বলছেন, ‘নেতা যেহেতু আপনাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন...। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।’ হ্যাঁ, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, তবে শেষ কথা আছে আদর্শের প্রশ্নে। যেটা আব্দুল মজিদ বুঝতে পেরে বলেছে, ‘আমি ভুলি নাই, আর সবচেয়ে বেশি যার মনে আছে, সে হলো বদু মওলানা স্বয়ং।’ ফলত আব্দুল মজিদের পরিবার-পরিজন নিয়ে লক্ষ্মীবাজারের ভিটে মাটি বিক্রি করে দিয়ে পালিায়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনি। এই নিদারুণ বাস্তবতায় ভূমিকা পালন করলো কেবলই কি ‘সাধারণক্ষমা’? সম্ভবত আতাউর রহমান খান ও রামেন্দু মজুমদার এটাকেই ‘বিকৃতি’ বলে সাব্যস্ত করেছেন।
আব্দুল মজিদের বাড়ি বিক্রি করে পালিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা ‘সাধারণক্ষমা’ থেকে তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে, ১৯৭৫ সালের আগষ্ট মাস পরবর্তীকালে। জেনারেল জিয়াউর রহমান চালিত সহস্র মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা এবং বদু মওলানাদের পুনর্বাসনের ভেতর দিয়ে। পরিস্থিতি যথাযথভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন সুচতুর নাট্যনির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ। তোতলাতে-তোতলাতে তিনি তার এই কর্মযজ্ঞকে উৎসর্গ করেছেন শেখ মুজিব, শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গবন্ধু-কে। বঙ্গবন্ধু নামটা তিনি একবারে উচ্চারণ করতে সক্ষম হননি। এটা হলো, বর্তমান বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনের বাস্তবতা। মঞ্চায়নে তিনি উপন্যাসের মূলানুগ থেকেছেন। কিন্তু তাকে যারা চেনেন, তার জ্ঞানচর্চার দুরভিসন্ধি বিষয়ে যারা সচেতন তারা খুব ভালো করেই জানেন, মঞ্চায়নের জন্য তার এই ‘টেক্সট’টি বেছে নেওয়ার কারণ কী?
বছর দুয়েক আগে তিনি বাংলা একাডেমিতে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বলেছেন, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর এগুলো দিবসের কোনো তাৎপর্য নেই। এগুলো হলো ‘স্টেট স্পন্সরড প্রোগ্রাম’। যেগুলোর সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। ঐ একই অনুষ্ঠানে অপর একটি দিনে তিনি মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধাদের কটুক্তি করে রোষের শিকার হন। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তাকে ভয়ানকভাবে চেপে ধরেন, বাকিরা হৈ-হুল্লোড় করে উঠলে তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করে বাঁচার চেষ্টা করেন। এরপর বেশ কয়েকবার নিজের বিষয়ে তিনি ঐ দাবিটি করেছেন। আমি জানি না তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিনা। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শিক বিচ্যুতি এবং স্বৈরতন্ত্র ও মৌলবাদের পরিপোষকের ভূমিকাপালনের ইতিহাস জানি। মঞ্চে উপস্থাপিত চরিত্র, বিচ্যুত মুক্তিযোদ্ধা এবং লুটেরাতন্ত্রের পরিপোষক আজিজ পাঠানের ভূমিকায় হয়তো তিনি নিজেই ভালো করতেন।
এ বিষয়ে সতর্ক থাকার দরকার রয়েছে যে, শিল্পালোচনা, নাটকের মহিমাকীর্তনের ভেতর দিয়ে যেন কোনো মীমাংসিত মিথ্যের পুনরুৎপাদন না ঘটে। সৈয়দ জামিল তার পূর্ববর্তী রিজওয়ান নাটকটি মঞ্চায়ন করিয়েছেন মনন নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনের অঙ্গসংগঠন নাটবাঙলাকে দিয়ে। যে দলের পুরোভাগে ছিলেন অপর একজন যুবক নাট্যকার এবং কলাকুশলীরা সকলেই নবীশ ও ‘রেপার্টরি’।
জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। স্পর্ধা নামক একটি দল, যেটি সম্ভবত তিনি নিজেই তৈরি করেছেন প্রয়োজনের খাতিরে। যেখানে অংশগ্রহণকারী সকল নট ও কলাকুশলী বয়সে একেবারেই তরুণ এবং তারাও এই অঙ্গণে নতুন, যদিও প্রাণশক্তিতে ভরপুর, যা বদু মওলানা, মোমেনা, আব্দুল মজিদসহ সকলের পারফর্মেন্সে প্রতিফলিত। এইসব নাট্যকর্মীদের বিপথগামী হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা দরকার। সৈয়দ জামিল মেধাবী বটেন, তবে তিনি শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রি করে দেওয়া ড. ফস্টাস।