ঢাকা লিট ফেস্ট মুক্তচিন্তার স্বপক্ষে উৎসব
হেমন্তের হালকা হিমেল বাতাসে ভাসল বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা।
বক্তারা বললেন, ঢাকা লিট ফেস্ট মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশসহ ১৫ দেশের সাহিত্যিক-সাংবাদিক-চিন্তকদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে
শুরু হয় এই ঢাকা লিট ফেস্ট। উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পুলিৎজার বিজয়ী সাহিত্যিক অ্যাডাম
জনসন, অভিনেত্রী নন্দিতা দাস এবং উৎসবের তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ,
সাদাফ সায্ সিদ্দিকী ও আহসান আকবার।
গতকাল উৎসবের প্রথম দিন উদ্বোধনী পর্ব ছাড়াও ছিল কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন। ছিল নন্দিতা দাসের 'মান্টো' চলচ্চিত্রের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আলোচনাসহ নানা আয়োজন।
ঢাকা লিস্ট ফেস্ট আয়োজনে সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউন। সহপৃষ্ঠপোষক ব্র্যাক ব্যাংক।
গতকাল সকালে মুনমুন আহমেদ, অপরাজিতা মুস্তাফা ও রেওয়াজ পারফরমিং আর্টের কত্থক নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় লিট ফেস্টের উদ্বোধনী পর্ব।
উদ্বোধন করতে গিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করেছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, তিনি একজন রাজনীতিবিদ; সাহিত্যিকদের এই মিলনমেলায় তিনি কীভাবে যাবেন। তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ করলেন তিনি শর্ত দিয়েছিলেন, সেখানে তা হলে কবি জসীমউদ্দীন, চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ও অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরীকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে।
সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু জ্ঞান ও সৃজনশীলতায় বিশ্বাস করতেন। ঠিক একই রকম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি সব সময় সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় লিট ফেস্টের অংশ হতে পেরে গর্বিত।
কাজী আনিস আহমেদ বলেন, সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে বাকস্বাধীনতা হরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা লিট ফেস্ট বরাবরই বাকস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে। নারীবাদ থেকে রোহিঙ্গা- সব রকম ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হবে এখানে।
সাদাফ সায্ সিদ্দিকী বলেন, বিশ্বের সব জায়গায় মুক্তচিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে। ঢাকা লিট ফেস্টের ধারণাটি অনেক শক্তিশালী। এ ধরনের আয়োজনে যেসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা হতে পারে, তা বিশ্নের কোথাও হয়তো একত্রে করা সম্ভব নয়।
আহসান আকবার বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের সাহিত্যের বাজারে নিয়ে যাওয়াই এ আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণার আলোচনা :কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিল আলোচনা 'ভাঙা-গড়ার দিনগুলো :স্মৃতিচারণে বঙ্গবন্ধু'।
এতে 'বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়', 'মুজিব ভাই' ও 'শেখ মুজিব ট্রায়াম্ম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি'- এ তিনটি গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান খান, আফসান চৌধুরী ও কাইয়ুম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফিরোজ আহমেদ।
'চেনা বিশ্বে চলছে বিরামহীন যুদ্ধ' :আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মঞ্চে 'ক্র্যাশিং রিয়েলিটিস' পর্বে কথা বলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মোহাম্মদ হানিফ। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ সাহিত্য ম্যাগাজিন গ্রান্টার নির্বাহী সম্পাদক রস পর্টার।
মোহাম্মদ হানিফ বলেন, যখন তিনি প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন, তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। যখন ক্লাস এইটে পড়েন, তখন হয় সোভিয়েত-আফগানিস্তান যুদ্ধ! যা এখনও চলমান। বিরামহীন, নামহীন, ক্লান্তিহীন এক যুদ্ধ! বক্তৃতায় তিনি বারবার তুলে আনেন গুম হয়ে যাওয়ার ভয়।
নূর-মিলনের গল্প :'সময়ের গান, অসময়ের কবিতা' অধিবেশনে যোগ দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। তারা শোনান ছোট থেকে বড়বেলার গান। সঞ্চালনা করেন কবি শামীম রেজা।
নেতা না অভিনেতা, কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, অনুভবের জায়গা থেকে কথা উঠলে বলব, এখন গ্যালিলিও নিয়ে আবারও মঞ্চে ফিরেছি। জীবনে ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, বিতর্ক, নাটক, ফুলের বাগান, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ- সবই করেছি। তাই কোনোটাই ঠিকঠাক করা হয়ে ওঠেনি। তবে যেদিন নাটক করে বাড়ি ফিরি, আমার চিকিৎসক স্ত্রী বলেন, আমার রক্তচাপ ঠিক রয়েছে! অন্য সব দিন রক্তচাপ উচ্চ থাকে। আবার রাজনীতিতে মানুষের যে ভালোবাসা, মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে আনন্দ, তা অনন্য। সত্যি বলতে, দু'দিকেই আনন্দ আছে, প্রাপ্তি আছে।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, একটা সময় মানুষ বই পড়ত। এখন অবশ্য সেটা কমে গেছে। তিনি মজা করে বলেন, এখন কিছু লিখে বাড়িতে পড়তে দিলেও মেয়ে পৃষ্ঠা উল্টে বলে, ৫০০ টাকা দাও। এটা পড়তে তো সময় লাগবে!
যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা :দুইশ' বছরের পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ খুঁজতে আলোচনায় বসেন অ্যাডাম জনসন, ডেভিড বিয়েলো, জেমস মিক, কোর্টনি হোডেল ও নিশিদ হাজারি। 'পোস্ট-আমেরিকা ফিউচার' শিরোনামে ঢাকা লিট ফেস্টের এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন উৎসবের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ।
রিকশা বালিকার গল্প :বাংলাদেশের মেয়ে নাইমার প্রবল ইচ্ছা রিকশা চালানোর। সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে কি হয়নি, তা নিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিশুসাহিত্যিক মিতালী বোস পারকিন্স লিখেছেন 'রিকশা গার্ল' উপন্যাস। নিউইয়র্ক লাইব্রেরি নির্বাচিত গত শতাব্দীর সেরা ১০০টি ছোটদের বইয়ের তালিকায় স্থান করে নেওয়া এই বই নিয়ে গতকাল উৎসব মঞ্চে লেখক মিতালী কথা বলেন সুপ্রভা তাসনিমের সঙ্গে।
মিতালী বোস পারকিন্স বললেন, শিশুদের জন্য তার লেখার কারণ, বড়দের তিনি পছন্দ করেন না। শিশুদের কোনো ধরনের পূর্বানুমান থাকে না। তারা খোলা চোখে যা দেখে, যা পড়ে তা থেকে কল্পনার রাজ্য বিস্তৃত করে চলে। তাই তাদের নিয়ে কাজ করতেই তার যত আগ্রহ।
প্রকাশনা শিল্পের সংকট :'প্রকাশনা শিল্প ও বইয়ের বিপণন' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন প্রকাশক খান মাহাবুব, মিলনকান্তি নাথ, সৈয়দ জাকির হোসাইন, মাহরুখ মহিউদ্দীন এবং পশ্চিমবঙ্গের 'দে প্রকাশনা'র প্রকাশক অপু দে। সঞ্চালনায় ছিলেন ফিরোজ আহমেদ।
মিলনকান্তি নাথ বলেন, দুই যুগ আগে গ্রন্থনীতি হয়েছে। কিন্তু ১০ শতাংশও কার্যকর হয়নি, যা এ দেশের প্রকাশনা শিল্পের সংকটের কড় কারণ। অপু দে বলেন, ভারতে ইংরেজি বইয়ের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বাংলা বইয়ের চাহিদাও সেই হারে বাড়ছে কি-না, সেটা বলতে না পারলেও কমছে না- সেটা নিশ্চিত।
অন্যান্য অধিবেশন :দুপুর সাড়ে ১২টায় কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিল 'যে গল্পের পাঠক নেই' শীর্ষক আলোচনা। এতে অংশ নেন কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, আহমেদ মোস্তফা কামাল, হামিম কামরুল হক ও রাশিদা সুলতানা। সঞ্চালনা করেন পারভেজ হোসেন। এ সময় নভেরা প্রদর্শনালয়ে উদ্বোধন করা হয় সান্ড্রা কুপের প্রদর্শনী 'দ্য ট্রি অব লাইফ'।
দুপুর পৌনে ২টার পর্বে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে 'দ্য ডে দ্যাট ওয়েন্ট মিসিং' শীর্ষক অধিবেশনে প্রু রোল্যান্ডসনের সঙ্গে আলোচনা করেন রিচার্ড বেয়ার্ড। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল 'দ্য রাইট টু লাই'। ভারতের সাহিত্যিক গার্গ চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাকির কিবরিয়া, সৈয়দ মাফিজ কামাল অনিক ও ডেভিড বিয়েলো।
বিকেল ৩টার পর্বে নভেরা প্রদর্শনালয়ে রফিক-উম-মুনীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় 'অনুবাদ :মুলানুগ নাকি রূপান্তর' শীর্ষক অধিবেশনে আলোচনা করেন আলম খোরশেদ, আলিম আজিজ, মোজাফ্ফর হোসেন ও মিহির মুসাকি। কসমিক টেন্টে ছিল 'টেলস অব ওয়ান্ডার :মিথস্ অ্যান্ড ফেয়ারিটেলস'। স্যালি পোমি ক্লাইটন ও কায়সার হকের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সুমন রহমান। একই সময় নজরুল মঞ্চে ছিল মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি।
এর পর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় নন্দিতা দাস পরিচালিত চলচ্চিত্র 'মান্টো'। প্রদর্শনী শেষে অ্যানি জায়েদীর সঞ্চালনায় কথা বলেন নন্দিতা দাস। একই সময়ে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর পরিচালনায় চলে কবিতা পাঠের আসর 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি'। এ ছাড়া নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল মিতালী বোস পারকিন্সের পরিচালনায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সৃজনশীল লেখার আয়োজন 'ফায়ার এসকেপ'। দিনের শেষ আয়োজন ছিল নজরুল মঞ্চে। সেখানে গান গেয়ে শোনান জয়িতা।
আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের বিভিন্ন অধিবেশন হবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আগামীকাল শনিবার শেষ হবে ঢাকা লিট ফেস্ট।
গতকাল উৎসবের প্রথম দিন উদ্বোধনী পর্ব ছাড়াও ছিল কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন। ছিল নন্দিতা দাসের 'মান্টো' চলচ্চিত্রের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আলোচনাসহ নানা আয়োজন।
ঢাকা লিস্ট ফেস্ট আয়োজনে সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউন। সহপৃষ্ঠপোষক ব্র্যাক ব্যাংক।
গতকাল সকালে মুনমুন আহমেদ, অপরাজিতা মুস্তাফা ও রেওয়াজ পারফরমিং আর্টের কত্থক নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় লিট ফেস্টের উদ্বোধনী পর্ব।
উদ্বোধন করতে গিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করেছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, তিনি একজন রাজনীতিবিদ; সাহিত্যিকদের এই মিলনমেলায় তিনি কীভাবে যাবেন। তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ করলেন তিনি শর্ত দিয়েছিলেন, সেখানে তা হলে কবি জসীমউদ্দীন, চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ও অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরীকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে।
সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু জ্ঞান ও সৃজনশীলতায় বিশ্বাস করতেন। ঠিক একই রকম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি সব সময় সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় লিট ফেস্টের অংশ হতে পেরে গর্বিত।
কাজী আনিস আহমেদ বলেন, সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে বাকস্বাধীনতা হরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা লিট ফেস্ট বরাবরই বাকস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে। নারীবাদ থেকে রোহিঙ্গা- সব রকম ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হবে এখানে।
সাদাফ সায্ সিদ্দিকী বলেন, বিশ্বের সব জায়গায় মুক্তচিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে। ঢাকা লিট ফেস্টের ধারণাটি অনেক শক্তিশালী। এ ধরনের আয়োজনে যেসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা হতে পারে, তা বিশ্নের কোথাও হয়তো একত্রে করা সম্ভব নয়।
আহসান আকবার বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের সাহিত্যের বাজারে নিয়ে যাওয়াই এ আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণার আলোচনা :কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিল আলোচনা 'ভাঙা-গড়ার দিনগুলো :স্মৃতিচারণে বঙ্গবন্ধু'।
এতে 'বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়', 'মুজিব ভাই' ও 'শেখ মুজিব ট্রায়াম্ম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি'- এ তিনটি গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান খান, আফসান চৌধুরী ও কাইয়ুম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফিরোজ আহমেদ।
'চেনা বিশ্বে চলছে বিরামহীন যুদ্ধ' :আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মঞ্চে 'ক্র্যাশিং রিয়েলিটিস' পর্বে কথা বলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মোহাম্মদ হানিফ। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ সাহিত্য ম্যাগাজিন গ্রান্টার নির্বাহী সম্পাদক রস পর্টার।
মোহাম্মদ হানিফ বলেন, যখন তিনি প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন, তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। যখন ক্লাস এইটে পড়েন, তখন হয় সোভিয়েত-আফগানিস্তান যুদ্ধ! যা এখনও চলমান। বিরামহীন, নামহীন, ক্লান্তিহীন এক যুদ্ধ! বক্তৃতায় তিনি বারবার তুলে আনেন গুম হয়ে যাওয়ার ভয়।
নূর-মিলনের গল্প :'সময়ের গান, অসময়ের কবিতা' অধিবেশনে যোগ দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। তারা শোনান ছোট থেকে বড়বেলার গান। সঞ্চালনা করেন কবি শামীম রেজা।
নেতা না অভিনেতা, কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, অনুভবের জায়গা থেকে কথা উঠলে বলব, এখন গ্যালিলিও নিয়ে আবারও মঞ্চে ফিরেছি। জীবনে ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, বিতর্ক, নাটক, ফুলের বাগান, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ- সবই করেছি। তাই কোনোটাই ঠিকঠাক করা হয়ে ওঠেনি। তবে যেদিন নাটক করে বাড়ি ফিরি, আমার চিকিৎসক স্ত্রী বলেন, আমার রক্তচাপ ঠিক রয়েছে! অন্য সব দিন রক্তচাপ উচ্চ থাকে। আবার রাজনীতিতে মানুষের যে ভালোবাসা, মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে আনন্দ, তা অনন্য। সত্যি বলতে, দু'দিকেই আনন্দ আছে, প্রাপ্তি আছে।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, একটা সময় মানুষ বই পড়ত। এখন অবশ্য সেটা কমে গেছে। তিনি মজা করে বলেন, এখন কিছু লিখে বাড়িতে পড়তে দিলেও মেয়ে পৃষ্ঠা উল্টে বলে, ৫০০ টাকা দাও। এটা পড়তে তো সময় লাগবে!
যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা :দুইশ' বছরের পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ খুঁজতে আলোচনায় বসেন অ্যাডাম জনসন, ডেভিড বিয়েলো, জেমস মিক, কোর্টনি হোডেল ও নিশিদ হাজারি। 'পোস্ট-আমেরিকা ফিউচার' শিরোনামে ঢাকা লিট ফেস্টের এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন উৎসবের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ।
রিকশা বালিকার গল্প :বাংলাদেশের মেয়ে নাইমার প্রবল ইচ্ছা রিকশা চালানোর। সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে কি হয়নি, তা নিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিশুসাহিত্যিক মিতালী বোস পারকিন্স লিখেছেন 'রিকশা গার্ল' উপন্যাস। নিউইয়র্ক লাইব্রেরি নির্বাচিত গত শতাব্দীর সেরা ১০০টি ছোটদের বইয়ের তালিকায় স্থান করে নেওয়া এই বই নিয়ে গতকাল উৎসব মঞ্চে লেখক মিতালী কথা বলেন সুপ্রভা তাসনিমের সঙ্গে।
মিতালী বোস পারকিন্স বললেন, শিশুদের জন্য তার লেখার কারণ, বড়দের তিনি পছন্দ করেন না। শিশুদের কোনো ধরনের পূর্বানুমান থাকে না। তারা খোলা চোখে যা দেখে, যা পড়ে তা থেকে কল্পনার রাজ্য বিস্তৃত করে চলে। তাই তাদের নিয়ে কাজ করতেই তার যত আগ্রহ।
প্রকাশনা শিল্পের সংকট :'প্রকাশনা শিল্প ও বইয়ের বিপণন' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন প্রকাশক খান মাহাবুব, মিলনকান্তি নাথ, সৈয়দ জাকির হোসাইন, মাহরুখ মহিউদ্দীন এবং পশ্চিমবঙ্গের 'দে প্রকাশনা'র প্রকাশক অপু দে। সঞ্চালনায় ছিলেন ফিরোজ আহমেদ।
মিলনকান্তি নাথ বলেন, দুই যুগ আগে গ্রন্থনীতি হয়েছে। কিন্তু ১০ শতাংশও কার্যকর হয়নি, যা এ দেশের প্রকাশনা শিল্পের সংকটের কড় কারণ। অপু দে বলেন, ভারতে ইংরেজি বইয়ের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বাংলা বইয়ের চাহিদাও সেই হারে বাড়ছে কি-না, সেটা বলতে না পারলেও কমছে না- সেটা নিশ্চিত।
অন্যান্য অধিবেশন :দুপুর সাড়ে ১২টায় কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিল 'যে গল্পের পাঠক নেই' শীর্ষক আলোচনা। এতে অংশ নেন কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, আহমেদ মোস্তফা কামাল, হামিম কামরুল হক ও রাশিদা সুলতানা। সঞ্চালনা করেন পারভেজ হোসেন। এ সময় নভেরা প্রদর্শনালয়ে উদ্বোধন করা হয় সান্ড্রা কুপের প্রদর্শনী 'দ্য ট্রি অব লাইফ'।
দুপুর পৌনে ২টার পর্বে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে 'দ্য ডে দ্যাট ওয়েন্ট মিসিং' শীর্ষক অধিবেশনে প্রু রোল্যান্ডসনের সঙ্গে আলোচনা করেন রিচার্ড বেয়ার্ড। নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল 'দ্য রাইট টু লাই'। ভারতের সাহিত্যিক গার্গ চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাকির কিবরিয়া, সৈয়দ মাফিজ কামাল অনিক ও ডেভিড বিয়েলো।
বিকেল ৩টার পর্বে নভেরা প্রদর্শনালয়ে রফিক-উম-মুনীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় 'অনুবাদ :মুলানুগ নাকি রূপান্তর' শীর্ষক অধিবেশনে আলোচনা করেন আলম খোরশেদ, আলিম আজিজ, মোজাফ্ফর হোসেন ও মিহির মুসাকি। কসমিক টেন্টে ছিল 'টেলস অব ওয়ান্ডার :মিথস্ অ্যান্ড ফেয়ারিটেলস'। স্যালি পোমি ক্লাইটন ও কায়সার হকের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সুমন রহমান। একই সময় নজরুল মঞ্চে ছিল মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি।
এর পর আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় নন্দিতা দাস পরিচালিত চলচ্চিত্র 'মান্টো'। প্রদর্শনী শেষে অ্যানি জায়েদীর সঞ্চালনায় কথা বলেন নন্দিতা দাস। একই সময়ে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর পরিচালনায় চলে কবিতা পাঠের আসর 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি'। এ ছাড়া নভেরা প্রদর্শনালয়ে ছিল মিতালী বোস পারকিন্সের পরিচালনায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সৃজনশীল লেখার আয়োজন 'ফায়ার এসকেপ'। দিনের শেষ আয়োজন ছিল নজরুল মঞ্চে। সেখানে গান গেয়ে শোনান জয়িতা।
আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের বিভিন্ন অধিবেশন হবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আগামীকাল শনিবার শেষ হবে ঢাকা লিট ফেস্ট।