তিনটি কবিতা । মোহাম্মদ ইকবাল
তিনটি কবিতা । মোহাম্মদ ইকবাল
বিধ্বস্ত নগরী

দৈনন্দিন নাগরিক হালচাল
ন'টা পাঁচটার বৈভবে কেনা পরাধীনতা
সাপ্তাহে দুদিনের সীমিত স্বাধীনতা কাড়ে দৈন্যের পরাক্রম,
ফটক পেরুলেই ইলেক্ট্রনিক বিলবোর্ড,
মডেল নারীর বিজ্ঞাপনী হাঁসি,
উড়ালপথ, ট্রাফিক জ্যাম, পাশদিয়ে পার হওয়া রেল লকোমোটিভের তীব্র সিটি।
মাথা হীন মুরগীর মতো ভো দৌড়ে ব্যাস্ত মানুষ
কারো জন্য মাথা ঘামাবে কে?
সকাল সন্ধ্যা কেন যে মেয়েটি জানলায় উঁকি দেয়?
জানতে হলে বিলবোর্ডে ভেসে উঠুক তাঁর ছবি
উড়ালপথের গলি বেয়ে তাঁকে নিয়ে হারাও অনন্ত উড়ালে অন্তরীক্ষে।
পকেটে রাখা লকোমোটিভের সিটিগুলো ছেড়ে দিলেই দুর হবে গ্যালাক্টিক কসমিক ট্রাফিক জ্যাম।
তাঁর ঘূর্ণির টানে ক্রমাগত তলাবে অসীমের অতলে,
যদি ভেসে উঠো কখনও
তোমার মনে হবে পুরো নগরী বিধ্বস্ত,
বিলবোর্ড জীর্ণ মলিন, উড়াল পথের উপর নোঙর করা বুড়িগঙ্গা নদী, ট্রাফিক লাইটের নিচে ঘন জঙ্গল
বিধ্বস্ত নগরীর তুমিই একমাত্র সুখি মানুষ....

আগুনের সুত্রপাত

আগুন লেগেই যাবে বুঝতে পারিনি
জন্মেই সে পা ঠুকে হ্রেষাধ্বনি তুলে
আমরা চাইলেই তার লাগাম টেনে ধরতে পারতাম
নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই ছিল
পরন্তু আমরা আকাঙ্খার চাবুক চালিয়ে দিয়েছি তার পিঠে
নিমিষে দাউদাউ তার জ্বলে উঠা
উদ্ভ্রান্তের মতো উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলার পথে পুড়িয়ে ভস্ম করে আমাদের সময়, পারিপার্শ্বিকতা।
আমাদের নগ্ন পোড়ায় তার দাহ্যের পরাক্রম
থেমে থেমে বারংবার উসকে ওঠে সে।
তোমাকে আমাকে প্রতিবারই পুড়িয়ে শীতল করে তার দংশনের সম্মোহন!
আগুনের সুত্রপাত হয়ে ছিল তোমার কবোষ্ণ বুকে আমার কামোষ্ণ ঠোঁটের মৃদু ঘর্ষণে...

অপেক্ষা

কোত্থাও দেখা নেই
নিশুতির গাঢ় অন্ধকার
জেগে থাকা নির্ঘুম দু'টি চোখ
অপেক্ষমান হৃদয়
কষ্টের অতলে নিভৃতে ডুবসাঁতার
জানি তুমি ভেসে উঠেবে কবিতার খাতায়
চুল কিংবা গ্রীবা থেকে টুপটাপ গড়িয়ে পড়বে সৌন্দর্যের কিরণ
আগুন লাগবে নিশুতির গাঢ় অন্ধকারে,
ভস্মীভূত নির্ঘুম চোখ
অপেক্ষায় থাকা হৃদয়
তোমার দ্যুতির স্পর্শেই দিকচক্রবালে আলোর উন্মেষ
ব্যতিক্রমে কখনওই পৃথিবীতে ভোর হবে না...


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান