মুক্তির কবিতা
আজই একটি কবিতা লিখব
এখনি,
অপেক্ষা এক টুকরো কাগজ,
কাঠ পেন্সিল অথবা কলমের,
কতকাল জ্যোতিষীর ভবিষ্যৎ বানী শোনে
শামুকের মতো লুকিয়ে রাখা যায় নিজেকে,
কাপুরুষের উপমা বয়ে বেড়ানো যায়
অস্তিত্বের সাথে একেবারে ছায়ার মতো।
আবারো জন্মিতে চাই এই বাংলায়
ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস এর মতো ধ্বংসাত্মক হয়ে,
দুর্ভিক্ষের মতো হাহাকার- ক্ষুধার্ত হয়ে,
কালবৈশাখী ঝড়ের বজ্রপাতের
বিকট শব্দের বিদ্যুৎ তরংগ হয়ে,
দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানি,
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তেমাখা মাতৃভূমি,
আবারো শংকিত করে তুলে শিয়ালের চোখ।
এখন বড়ই দুঃসময় ভালবাসার,
অভিমানী প্রেয়সীর চোখের জল মুছবার সময়- এখন নয়,
পার্কের বেঞ্চে বসে প্রিয়তমার হাতে হাত রেখে
অচিনপুরে হারিয়ে যাওয়ার সময়- এখন নয়,
নিপীড়িত মানুষের কোমল মনে
সাম্যের বীজ বপনের সময়-এখনি,
মানচিত্রে নতুন ইতিহাস রচনার-আজই সময়,
অসীম সাহস বুকে লালন করে প্রতিবাদের সময়,
শোষকের ধারালো থাবাকে থামিয়ে দেয়ার সময়,
ক্ষমতা লোভী ক্ষণজন্মা হানাদারের মুখোমুখি হওয়ার সময়,
দুঃশাসন এর বেড়াজাল হতে বেরিয়ে পড়ার-- এখনি সময়,
ঘর হতে ডেকে নিয়ে বুকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে
গুলি করে হত্যার বিরুদ্ধেসোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে
আজই একটি কবিতা লিখা যায়-
এখনি-।
চোখ খুললেই বিস্ময়ে দেখি
আইয়ুব ইয়াহিয়া ভুট্টোর প্রেতাত্মা,
স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরের দাম্ভিক পদচারণা,
খড়্গ হাতে দাড়িয়ে পতাকার সামনে
একেবারে লাল বৃত্তটার কাছাকাছি!
মনে প্রশ্ন জাগে এই পতাকা কি আমার নয়?
শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীর হাতে কলমের পরিবর্তে
তুলে দেয়া হয় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র,
সরকারী আমলা ফাইল ধরে হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা চায়
ফুটপাতে শুয়ে থাকা পংগু ভিখিরির মতো,
বাসের ভিতরে ধর্ষিতার আর্তনাদধ্বনি চাপা পড়ে যায়
যান্ত্রিক ইঞ্জিনের দানবীয় চিৎকারে,
স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পরেও
৭১’এর বীর মুক্তিযোদ্ধা নোয়াখালীর আবদুর রব
দুবেলা খাবারের জোগাতে এখন চানাচুরওয়ালা,
অথচ- রাজাকারের গাড়িতে লাল সবুজের বিজয় পতাকা,
এ যেন তিরিশ লক্ষ শহীদের আত্মাকে নিয়ে খেলা করা।
এখন আবারো সময় হয়েছে
ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলার,
সময় হয়েছে অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন এর বিরুদ্ধে
রুখে দাড়ানোর।
রাষ্ট্রের কাছে আইনের সুশাসন,
স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার দাবী জানিয়ে,
নিরাপদ মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই শ্লোগান মুখে
একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার শপথ নিয়ে
মূহুর্তেই একটি মুক্তির কবিতা লিখা যায়,
আজই..
এখনি
এক দলা কষ্ট
এক দলা কষ্ট বুকে জমাট বাঁধা
হোটেলের পরোটা কিংবা সিঙারার খামীর মতো
এন্টার্কটিকা মহাদেশে জমে থাকা বরফ খন্ড কিংবা
বর্ষা দিনে শিলাবৃষ্টির মতো তীব্র হিম-শীতল।
কোন উত্তাপেই আর ঝরে পড়েনা একফোঁটা ঘাম হয়ে
ঝরে পড়েনা দু'চোখের অশ্রু হয়ে
ঝরে পড়েনা ভালবাসার কাব্য হয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে।
বুকের মাঝে একদলা কষ্ট,
সংগ্রামী বাংলার বাঘ শের-ই বাংলা নেই,
জন্ম নেয়না গনতন্ত্রের বরপুত্র নামে কেউ
জন্ম নেয়না কালের মজলুম জননেতা আর
জন্ম নেয়না ব্যাঘ্র কন্ঠের বঙ্গবন্ধু নামের মহামানব,
তাইতো বুকে একদলা কষ্ট জমে আছে।
এখন আর স্বাধীন ভাষার জন্য মিছিলে বুক পেতে দেয়না
সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার,শফিউর।
যদিও বর্ণমালা ছিড়ে ছিড়ে খায়, রক্তাক্ত অ আ ক খ।
এখন মিছিল ও প্রতিবাদের মিছিলেই জীবনাবসান হয়,
তার প্রতিবাদ কেউ করেনা,
লাল সবুজের বিজয় পতাকার পোলটার নিচে দাড়িয়ে
এখনো ধুরন্ধর শিয়ালেরা।
শংকিত খেটে খাওয়া হাড্ডিসার মানুষের জীবন।
সতের কোটি মানুষের জন্য কারো কন্ঠ উচ্চারিত হয়না
জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবের মতো
অভয় দিয়ে প্রতিবাদের ভাষায় আশার বানী শোনায় না,
আজও আমি খুঁজে চলি বুকের জমানো বরফ গলাতে,
আজও আমি খুঁজে চলি অবিসংবাদী জাতীয় চার নেতা,
আজও আমি খুঁজে চলি বিংশ শতাব্দীর শেখ মুজিব।
অভ্যর্থিত করতে আমি দাড়িয়ে- একদলা জমাট কষ্ট বুকে।।
বর্ণমালা
মৌনতা সর্বত্র
এলোমেলো হয়ে আছে বর্ণমালা
।
গুমড়ে কাঁদে অ আ ক খ,
নির্লিপ্ত হয়ে বইয়ের পাতায় মুখ গোঁজে,
বর্ণমালা যেন আজ প্রান বাঁচাতে ভয়ে চুপ করে।
এখন আমার বর্ণমালা হতে বড্ড সাধ হয়,
গোপনে আগুনে শব্দ হওয়ার অভিপ্রায় জাগে,
ইচ্ছে হয় ভয়ংকর কিছু হতে,
ইচ্ছে হয় কবির হাতের কলম হতে, কবিতা হতে,
কিন্তু চাইলেই তো আর সব হওয়া যায় না।
বর্ণমালা যে অসহায়, বর্ণমালা যে নিরুপায়,
বর্ণমালাখেঁকোরা গলা চেপে ধরে বর্ণমালার,
বর্ণমালাদের ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়,
মিছিলে গুলির শব্দ শুনে চিৎকারে মত্ত বোকারা,
মৃত্যুর মিছিলে অপমৃত্যুর ব্যানার হাতে।
ঝাঁপিয়ে পড়ে নাঙা তলোয়ার হাতে,
জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুবাণ হয়ে
আগুনের কুন্ডলী নামের পেট্রোল বোমা হয়ে,
উত্তাল সমুদ্রের মাঝে ভয়ার্ত যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে
মাঝির প্রাণান্ত চেষ্টা বৈঠা হাতে
গনতন্ত্র নামের পোষা গাধা বাঁচাতে।
ইচ্ছে হয় প্রতিবাদী কবি কিংবা কবিতা হতে,
আজ কি করে কবিতা লিখি?
কবিতার ভাষাগুলো দুর্বোধ্য
কবিতার শব্দগুলো এ,কে-৪৭ কিংবা
নাইন এমএম রিভলভার-এর গুলির চেয়েও শক্তিশালী,
শক্তিশালী বিধ্বংসী হাইড্রোজেন বোমার মতো,
কবিতার ভাষা গুলো কষাইয়ের
ধারালো ছুরির চেয়েও তীক্ষ্ণধার।
একুশ মানে
একুশ মানে ভাষার জন্য
মৃত্যুর আহ্বান ,
একুশ মানে জাত-পরিচয়
বাংলা ভাষার গান।
একুশ মানে শ্লোগান- মিছিল
মুখরিত রাজপথ,
একুশ মানে মায়ের ভাষা
মুঠো মুঠো শপথ।
একুশ মানে গণজোয়ার
লক্ষ বুকের দোলা,
একুশ মানে রাষ্ট্রভাষা
বাংলার দাবি তোলা।
একুশ মানে সালাম,রফিক
আরো অনেক নাম,
একুশ মানে বুকের রক্ত
মাতৃভাষার দাম।
একুশ মানে বিশ্ব জুড়ে
মায়ের ভাষা এখন,
একুশ মানে শহিদবেদি
ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
একুশ মানে প্রভাতফেরি
খালি পায়ে পথচলা,
একুশ মানে প্রজন্মকে
বায়ান্নর কথা বলা।
মিছিলে এসোনা আজ
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের.....দামামা বাজছে
এ শহরে আজ অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধ হবে
।
চারিদিকে গুমোট.......থমথমে নিস্তব্ধ
চতুর্দিক হতে আসছে বিরোধী মিছিল।
মেহেদী রাঙা হাতে হৃৎপিন্ডটা ঝুলছে,
ছোপছোপ রক্তের দাগ রাজপথ জুড়ে,
হৃদয় ভাঙার হাহাকার বিরহী বাতাসে,
বুলেটের একটানা শব্দে চাপা পড়েছে
আহত ভালোবাসার....আর্তনাদধ্বনি।
ষোড়শীর রুপ ও বারুদের ঝলকানিতে
পুড়ে ছাই যতেœ গড়া স্বপ্নে সাজানো নগরী,
ভেঙে চৌচির অদৃশ্য.... প্রেমের মন্দির,
অনুনয় করছি, মিছিলে এসোনা আজ
ক্ষনিকেই সমাধিস্থ হবে ব্যর্থপ্রেমের লাশ।।
মুক্তির শ্লোগান
আকাশের বুক চিরে ধেয়ে আসছে উল্কাপিণ্ড
মানবতার সূর্যাস্তের নিমিত্তে উম্মত্ত এছুটে চলা
।
জাগ্রত বিবেকের কবর রচনায় ছুটোছুটিতে লিপ্ত
স্বপ্নের শিয়রে বসে রচি সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ,
বায়ান্ন, উনসত্তর,একাত্তর আমৃত্যু আঁকড়ে ধরে
মৃত্যুর দামে কন্ঠে তুলেছি আগুনে শ্লোগান- জয় বাংলা।
ছাপ্পান্ন হাজার পাঁচশ এক বর্গমাইল সবুজ জমিনে
রক্তের হোলি খেলায় মত্ত বিংশ শতাব্দীর ডাইনোসর
নষ্ট বীজে রক্তাক্ত করে সোনালি মানচিত্র। অথচ;
পতাকার নিচে দাড়িয়ে অনন্তকাল উদ্যত বজ্রমুষ্ঠি।
অতন্দ্র প্রহরী- সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, তিরিশ লক্ষ শহীদ,
পুরনো শিয়াল ছুঁচালো নখে খাঁমচে ধরে জাতীয় পতাকা,
গর্জে উঠি প্রানের মায়া তুচ্ছ করে, যুদ্ধ করি, শহীদ হয়ে
সোঁদা মাটির আলিঙ্গনে ধন্য করি এক সৈনিক জীবন।।
স্বদেশী গোলাপ
দূরন্ত সাহসে লালসবুজের পতাকা মাথায় বেঁধেছি,
তোমার বুকের সন্মুখে উঁচু কাঁটাতারের বেড়া এখন
অথচ; সেদিনও তুমি ছিলে শুধুই আমার মানচিত্র।
তুমি নামের কাশ্মীরের তৃণমূল কৃষকের উর্বর জমিতে
চুপিসারে বসতি গেড়েছে বিষাক্ত লাল পিঁপড়ের দল।
তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতার উপমা অন্যের দখলে
দুর্বোধ্য কবিতা হয়ে চলে গেছো অলক্ষে। ভরা চৈত্রে
আছো সবুজ পল্লবের আড়ালে লালরঙা ফুল হয়ে।
তন্ময় হয়ে দেখি কাঁটায় ঘেরা সারিসারি রক্তগোলাপ,
তোমার সোৎসুক সম্মতিতে জল ঢালে শহুরে কৃষক,
ওচোখে ধুলোমেখে শিরোনাম পাল্টে তুমিও লিখে যাও
অথচ; সেদিনও ছিলে স্বদেশের মানচিত্র হয়ে, আমারি।।
বেজন্মা ভবিষৎ
কারা জীবিকার তাগিদে জীবন বেঁচে খায়?
রাজপথ কাঁপিয়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙেই
বেরিয়ে আসে আরেক বেপরোয়া প্রজন্ম।
মানবিক প্রেমে কুকুরের মুখে লাথি মেরে
মুখের খাবার কেড়ে যারা ক্ষুধা নিবৃত্ত করে
তারাই অনুপ্রেরণায় বিপ্লবী ও ভোগবাদী।
বেশ্যার স্তন চেটে সুশীল পশুর ক্ষুধা নিবারণ
অথচ- তারা অস্পৃশ্য ও অপবিত্র জরায়ুধারী!
মায়াবী আলোয় নৃত্যরত নর্তকীদের দাপটে
ভাসমান পতিতারা লাল লিপিষ্টিকে আঁকে ঠোঁট।
কার্তিক মাসে সভ্যতার নেংটি পরে বেরোলেও
মুছে ফেলা যায়না উত্তরাধিকারে কুকুরে স্বভাব।
থামো পথিক-
দ্যাখো তোমারও মেরুদণ্ড বেয়ে বেরিয়ে আসে
বংশপরম্পরায় আরেক বেজন্মা-ভবিষৎ পুরুষ।।
রক্তাক্ত হবে বাংলাদেশ
আমাকে খুঁচিয়ো না রক্তাক্ত হবে বাংলাদেশ
আমাকে পেটালে ভেঙে যাবে বাংলাদেশের মেরুদণ্ড
আমাকে মারলেই কলংক হবে বাংলাদেশের।
আমি ছুটে যাবো বিদ্রোহী কবি নজরুল এর কাছে
আমি ছুটে যাবো তারুন্যের কবি সুকান্তের কাছে
আমি ছুটে যাবো বিপ্লবী সূর্য সেন এর কাছে-পলকে।
ফিদেল ক্যাস্ত্রো, চে গুয়েভারার কিন্তু প্রেরণার নাম,
কখনও দু'চোখে কবি ও কবিতার শক্তি দেখেছো?
আমাকে অযথা খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করোনা
তাহলে কলম চলবে কালাশনিকভের মতো।।
সে যে আমার জন্মভূমি (দেশের ছড়া)
বলো শুনি রূপের রাণী কোন্ দেশকে বলে?
কোন্ দেশেরই শ্যামল মাঠে সোনার ফসল ঘেরা?
বলো শুনি কোন্ দেশটা নানান রূপের ঘেরা?
এই পৃথিবীর ইতিহাসে ঋতুর রাণী সেরা?
কোন্ দেশেতে ভর দুপুরের রাখাল বাজায় বাঁশি?
বর্ষা এলে দামাল ছেলের ঠোঁটে ফোটে হাসি!
কোন্ দেশেতে ফুলে ফুলে প্রজাপতি নাঁচে?
রূপের সুধা পান করে ওই রূপ পিয়াসী বাঁচে।
কোন্ দেশেতে সান্ধ্য মেলায় কিচিরমিচির ডাকে?
নানান জাতের ফুল ও পাখি কোন্ দেশেতে থাকে?
জোনাক জ্বলা সন্ধ্যা নামে ঝোঁপের তলায়, বিলে?
শাপলা শালুক পদ্ম ফোটে কোন্ দেশেরই ঝিলে?
এসব কথার জবাব দেবো একটি কথায়- শেষে
সে যে আমার জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশে।।
শহরের অতীত
আজকে থেকে অনেক আগে দাদার মুখে হয় শোনা
দাদার দাদার গল্প কথায় ঝরতো নাকি চাঁদ সোনা।
মাঠের পরে মাঠ সাজানো- ছিল সবুজ এক চাদর
সোনার ফসল উঠতো ঘরে পড়শি পেতো খুব আদর।
গোয়াল ভরা গরু ছিল পুকুর ভরা ছিল মাছ
নানান জাতের ফুল ও ফলের বাগান ভরা ছিল গাছ।
ভরদুপুরে পাতার ফাঁকে দোয়েল কোকিল গাইতো গান
ডানপিটেরা ধরতে তাদের ঘামের জলে করত স্নান।
প্রজাপতির মিলন ছিল গাছগাছালির পাতাতে
খুব খুশিতে আঁকতো শিশু রঙ পেন্সিলে খাতাতে।
খেলতো শিশু খেলার মাঠে করতো কত কিছু পণ
বিশ্বজয়ের ভাবনা বুকে ! সান্ধ্য পড়ায় দিতো মন।
দুরন্ত অই কিশোর মনে কোন বাঁধাই মানত না
খুশির জোয়ার বইয়ে যেত দুঃখ কী সে জানত না।
তপ্ত রোদে দগ্ধ হলেও ছুটতো কিষাণ অই মাঠে
জলকেলিতে মত্ত শিশু সূর্যি মামাও যায় পাটে।
সন্ধ্যা হলে ঝোঁপের তলে জোনাক জ্বেলে তার আলো
রাতের বুকে আসতো নেমে হঠাৎ নিঝুম কাক- কালো।
হয় আয়োজন নানান রকম ষড় ঋতুর এই দেশে
উৎসবেরই আনন্দেতে উঠতো সবার মুখ হেসে।
হাসিখুশি ভালোবাসায় সবাই মিলে ছিল বেশ
দুঃখ হলো আর বেশিদিন থাকবে না এ খুশির লেশ!
ভরাট হলো পুকুর নদী ধানী জমি খেলার মাঠ
গ্রাম হারালো মুক্ত বাতাস কিচিরমিচির পাখির হাট।
সারিসারি উঁচু দালান নাম দিলো তার শপিং মল
আসা যাওয়ায় ব্যস্ত সবাই রাত্রি দিনেই হলাহল।
ঢেকে গেলো অট্টালিকায়, কারখানাতে গ্রামখানি
ভুললো সবাই আকাশ নদী পুস্পকলির নামখানি।
তারার মতো জ্বলতো জোনাক ঝোঁপের তলে রাত এলে
ঝিঁঝিঁপোকা আর ডাকে না ইট পাথরের ছাঁদ ঠেলে।
ফুল পাখি ও শিশু-কিশোর চায় প্রকৃতি নীলাকাশ
পশুপাখি চায় ফিরে চায় চারণভূমি সবুজ ঘাস।।