
রাসেল রায়হান, কবি ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ৬ ডিসেম্বর। পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ ছয়টি—বিব্রত ময়ূর; সুখী ধনুর্বিদ; তৃতীয় অশ্বারোহী; ইহুদির গজল; মূকাভিনেতার ডায়েরি; মাংশাসী হরিণীর বনে (যৌথ)।
উপন্যাস তিনটি—একচক্ষু হরিণীরা; অমরাবতী; আরও গভীরে।
গল্পগ্রন্থ একটি—কয়েকজন অর্ধেক মানুষ।
বিব্রত ময়ূর-এর পাণ্ডুলিপির জন্য মার্কিন গবেষক অধ্যাপক ক্লিনটন বি সিলি ও প্রথমা প্রকাশনের যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত ‘জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ১৪২২’ পেয়েছেন।
রাসেল রায়হান এর সাক্ষাৎকার গ্রহণে সাহিত্যবার্তার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ।
আরিফুল:আপনি মূলত কবিতার মানুষ। আপনার কাছ থেকে কবিতার কথা জানতে চাই। কবিতা আসলে কী?
রাসেল রায়হান: কবিতা হলো মিথ্যার মোড়কে সত্য ও সুন্দরকে উপস্থাপন করার দায়।
আরিফুল:আপনার কবি হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেয়েছেন?
রাসেল: আমার লেখালেখির শুরু মূলত কথাসাহিত্য দিয়ে। ধীরে ধীরে কবিতা পড়ার ঝোঁক পেয়ে বসে। পড়তে পড়তেই কবিতা লেখা শুরু। আলাদা করে অনুপ্রেরণার কথা বলতে গেলে বলব, আমার প্রিয় কথাসাহিত্যিকদের নানা লেখায় কবিতা ও কবির উল্লেখ পাই। সেখান থেকে কবিতার দিকে আগ্রহ জাগে।
আরিফুল:কবিতা কখন অকবিতা হয়?
রাসেল: যখন কবিতাটি কোনো অকবি লেখে।
আরিফুল:প্রথম কোন্ কবিতা লিখে কবি জগতে প্রবেশ করেন?
রাসেল: সম্ভবত কবিতাটির নাম ‘কোনো এক পূর্ণিমা রাতে’। গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে লেখা। পঙ্ক্তিগুলো স্পষ্ট মনে নেই আর। আমার কোনো বইয়েও নেই কবিতাটি। কবিতাটির ভাষ্য মোটামুটি এমন: গৌতম বুদ্ধ যেমন মাথা মুণ্ডন করে, রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে এক পূর্ণিমা রাতে এক–কাপড়ে বের হয়ে এসেছিলেন, আমাদেরও উচিত সব লোভলালসা ছেড়ে পৃথিবীর পথে বের হয়ে আসা। এমনই। অল্প বয়সের কবিতা যেমন হয় আরকি।
আরিফুল:প্রথম কবিতা ও সম্প্রতি লেখা কবিতার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পান কী? একটু খুলে বলুন...
রাসেল: বিশাল পার্থক্য। প্রথম লেখা কবিতায় ছেলেমানুষি ছিল। বয়সের সাথে সাথে মানুষের যেমন পরিপক্বতা, গভীরতা বাড়ে, চর্চা, অভিজ্ঞতা যেমন তার কাজকে আলাদা মাত্রা দেয়, আমার সম্প্রতি লেখা কবিতার সাথে প্রথম কবিতার তুলনা করলে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। এর সাথে আরও বহু বিষয় তো যুক্ত হয়ই। পৃথিবী পাল্টায়, সমাজ পাল্টায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সেসব নতুন করে ধরা দিতে থাকে। এই পারিপার্শিক প্রভাব এমনিতেই কবিতাকে বদলে দেয়, দেবে। সবার ক্ষেত্রেই এমন ঘটে।
আরিফুল:আপনার মতে, আজকের দুনিয়ায় একজন কবির জন্য বিশ্বসাহিত্য জানা কতটা জরুরি?
রাসেল: সব সময়েই বিশ্বসাহিত্য জানা জরুরি ছিল। আজও জরুরি। কালও জরুরি থাকবে।
আরিফুল:একজন কবি সব থেকে মহৎ ! এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
রাসেল: কোন অর্থে সব থেকে মহৎ? ধরেন একজন ডাক্তার এক রোগীর জীবন বাঁচাল; তাঁর থেকে মহৎ? ধরেন একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে এক যুবককে রক্ষা করল; তাঁর থেকে মহৎ? ধরুন একজন রিকশাওয়ালা তার যাত্রীর ফেলে যাওয়া মানিব্যাগ থানায় গিয়ে ফেরত দিয়ে এল; তাঁর থেকে মহৎ? আসলে বিষয়গুলো আপেক্ষিক। সেদিক থেকে দেখলে ‘সব থেকে’ শব্দ ব্যবহার আমার কাছে বাহুল্য মনে হয়। এই পৃথিবীতে প্রত্যেকের কিছু দায়িত্ব থাকে। তাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। একজন কবির দায়িত্ব কবিতা লেখা। সে দায়িত্ব পালন করে মাত্র। এটাকে খুব আলাদা করে মাহাত্ম্য দেওয়ার প্রয়োজন দেখি না আমি।
আরিফুল:কবি চরিত্রটি সমাজের চোখে রহস্যময়, এই রহস্যময়তার গোপন রহস্যটা আসলে কী?
রাসেল: সমাজ এখন কবিদের নিয়ে ভাবেই না তো। এই সব রহস্যময়তার ব্যাপারস্যাপার আগের যুগে ছিল। বাস্তবতা হলো, এখন সমাজের চোখে কবি এক পরিহাসের বস্তু। এর মধ্যেও যেটুকু রহস্যময়তা কবি চরিত্রের মধ্যে থাকে, সেসব তার মিথ্যাচারিতার জন্য। কবিকে মিথ্যা বলতে হয়। আগেই বলেছি, কবিতার কাজই হলো মিথ্যার মাধ্যমে সত্যকে উপস্থাপন করা। যেহেতু সে কখনো সত্যিটা বলে না, ফলে মানুষ তাকে ঠিকভাবে পড়তে পারে না। তখন রহস্য রহস্য মনে হয় হয়তো।
আরিফুল:আপনি একজন কবি, আর কবি হিসেবে কবিতার সংজ্ঞা কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন ?
রাসেল: কবিতার আলাদা আর কী সংজ্ঞা হতে পারে? বহুজন বহুভাবে সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন। কবিতা তো আসলে একটা নান্দনিক (কখনো কখনো অনান্দনিকও হতে পারে) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মনের কথাই বলা। কে কত সুন্দরভাবে বলতে পারছে, সেটা অন্যদের কতটা প্রভাবিত করছে—এমন নানা কিছু একটা বিবৃতিকে কবিতা করতে পারে। আল মাহমুদ লিখে গেছেন, ‘কবিতা তো মক্তবের মেয়ে, চুল খোলা আয়েশা আক্তার।’ এর চেয়ে কবিতার ভালো সংজ্ঞা আর কী হতে পারে?
আরিফুল:একজন কবি হিসেবে আপনি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা দায়বদ্ধ বোধ করেন?
রাসেল: অবশ্যই আমি দায়বদ্ধ। সেটা দেশের নাগরিক হিসেবে; কবি হিসেবে নয়।
আরিফুল:আপনি কি মনে করেন বাংলা সাহিত্য বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে যথেষ্ট সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছে?
রাসেল: এখনো মনে হয় না। তবে পারবে। এটা আমার আশাবাদ না ঠিক, বিশ্বাস।
আরিফুল:রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের পরবর্তীতে বাংলা কবিতা কোন দিকে এগিয়েছে বলে মনে করেন?
রাসেল: বাংলা কবিতা এখন মাত্রা, ছন্দ ইত্যাদির গণ্ডি থেকে বেরিয়ে রাজনীতি, রূপক, দর্শন, নন্দন ইত্যাদির দিকে ভিড়েছে। মানুষ স্বাধীনতা চায়। সবকিছুতেই চায়। কবিতায় সে মাত্রা, ছন্দ ইত্যাদিতে বাঁধা থাকবে কেন? এতে অবশ্য কবিতার কী লাভ বা ক্ষতি হয়েছে—সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
আরিফুল:শিল্পের মধ্যে জীবন থাকে, জীবনে অভিজ্ঞতা থাকে—আপনার কবিতায় অভিজ্ঞতার কথা কতটুকু?
রাসেল: পুরোটাই। হয় সরাসরি আমার অভিজ্ঞতা, নইলে অন্য কারও অভিজ্ঞতা, যেটা আমি কোনো না কোনো মাধ্যম থেকে অর্জন করেছি।
আরিফুল:এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং ওপার বাংলার কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?
রাসেল: বিস্তর।
আরিফুল:‘কবির স্বাধীনতা’ আপনার মূল্যায়ন কী?
রাসেল: প্রসঙ্গ যখন কবিতার, তখন বলব, কবির স্বাধীনতা কবিকেই নির্ধারণ করতে হয়। আপনি যা খুশি বলতে পারবেন। কিন্তু যেভাবে খুশি, সেভাবে বলতে পারবেন না। যেভাবে খুশি সেভাবে বললে একজন সাধারণ মানুষের বলা একটি বাক্যকেও কবিতা বলতে হবে। কবিতার জন্য অলিখিত, অব্যাখ্যেয় কিছু শর্ত আছে। সেসব শর্ত পূরণ করেই কবিতা লিখতে হয়। জাহান্নামের আগুনে বসিয়া পুষ্পের হাসি একজন কবিই হাসতে পারেন।
আরিফুল: অনেক তরুণ কবিই গদ্য কবিতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। গদ্য কবিতাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? গদ্য কবিতার ভবিষ্যৎ কী?
রাসেল: যদি এটা পদ্যে অপারগতার কারণে হয়, তাহলে ভালো কিছু নয়। যদি পারঙ্গম কেউ লেখে, তাহলে এই মাধ্যমই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। ‘গদ্য কবিতার ভবিষ্যৎ’ না, কবিতার ভবিষ্যৎ সম্ভবত রোলার কোস্টারের মতো হবে। আজ গদ্য, কাল পদ্য, পরশু গদ্য, তরশু পদ্য...।
আরিফুল:আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশের সাহিত্যে বর্তমানে অশ্লীলতা বা ‘নোংরামি’ বাড়ছে?
রাসেল: কোন অর্থে অশ্লীলতা বা নোংরামি, প্রশ্নে পরিষ্কার হতে পারছি না। পৃথিবীর যেকোনো কিছুকে আপনি সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারলে সেটা শ্লীল। প্রকাশ অসুন্দর হলে ভালো জিনিসও অশ্লীল মনে হবে।
আরিফুল:সাহিত্যে খোলামেলা ভাষা বা যৌনতার প্রকাশ কি ‘নোংরামি’, নাকি সাহসী সত্য উচ্চারণ?
রাসেল: সাহিত্যে খোলামেলা ভাষা বা যৌনতার প্রকাশে যে সাহস—সেটা এখন অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। এটাকে একমাত্র সাহসী, সত্য উচ্চারণ হিসেবে ধরে নেওয়াটা বরং অশ্লীল। উদাহরণস্বরূপ ধরেন, আপনি শেখ হাসিনার আমলে তাঁর কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখছেন, সেটা হলো সত্যিকারের সাহসী সত্য উচ্চারণ। আবার এখন হাঁটতে–বসতে শেখ হাসিনাকে গালাগাল করছেন, এখানে সত্য থাকতে পারে, সাহস বলতে কিছু নেই। বিষয়গুলো আপেক্ষিক। এমন অজস্র বিষয় আছে, যেসব উচ্চারণ করা যৌনতার প্রকাশের থেকে অনেক বেশি সাহসের।
আরিফুল:একজন সাহিত্যিক কীভাবে বোঝেন কোনটি শিল্প, আর কোনটি অশ্লীলতা?
রাসেল: এর উত্তর সম্ভবত আগের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছি। আমি বোধগম্যতার এই বিষয়টিকে অব্যাখ্যেয় বলব।
আরিফুল:অশ্লীলতা বনাম বাস্তবতা—এই বিতর্কে আপনি কোন অবস্থানে?
রাসেল: একই কথা পুনরাবৃত্তি করতে হবে। প্রকাশ সুন্দর হলে সেটা কখনোই অশ্লীল নয়।
আরিফুল:আপনি কি মনে করেন, পাঠকই ‘নোংরামি’ খোঁজে, নাকি লেখকই তা তুলে ধরে?
রাসেল: এটা দুপক্ষ থেকেই ঘটতে পারে। বলতে চাইছিলাম, পাঠকের কি অতটা দায় আছে যে সে নোংরামি খুঁজবে? পরে মনে হলো, অনেক ভালো জিনিসকেও রাজনৈতিক বা অন্য কারণে নোংরা, অশ্লীল বলে প্রকাশের জন্য উঠেপড়ে লাগে অনেকে। আবার অনেক লেখকও আলোচনায় থাকার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ‘নোংরামি’ করেন। কোনো একটি শ্রেণিকে আলাদা করে দায় দেওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
আরিফুল:একজন কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায় বলে আপনি মনে করেন?
রাসেল: একজন দার্শনিক কবি না–ও হতে পারেন। তবে একজন কবি কখনো না কখনো অবশ্যই দার্শনিক।
আরিফুল:বাংলা সাহিত্যের কোন যুগ বা কবি আপনার লেখায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে?
রাসেল: গত শতাব্দীর ত্রিশ, চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশক।
আরিফুল:ইউরোপীয় সাহিত্য ও দর্শনের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের সংলাপ কতটা সফল বলে মনে করেন?
রাসেল: (প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি।)
আরিফুল:সামাজিক মাধ্যমে সাহিত্যের দ্রুত বিস্তার কি ‘নোংরামি’ বাড়িয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
রাসেল: নোংরামি শব্দ ব্যবহার করতে চাইছি না। তবে সামাজিক মাধ্যমে সাহিত্যের দ্রুত বিস্তার সাহিত্যকে আড়াল করে অসাহিত্যকে সামনে এনেছে। অসাহিত্য ও অসম্পাদিত প্রায়–সাহিত্যের জয়জয়কারের একমাত্র কারণ সামাজিক মাধ্যমে সাহিত্যের বিস্তার।
আরিফুল:প্রযুক্তির যুগে বিশ্বসাহিত্যের প্রবাহ ও প্রভাব কীভাবে বদলেছে বলে আপনি মনে করেন?
রাসেল: প্রযুক্তির যুগে আমরা সহজেই বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি। ফলে সাহিত্যে পরিবর্তন আসছে। আজ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী শুধু দেশে সীমিত নেই। এখন বৃহদর্থে দেখলে আমাদের প্রতিযোগিতা সারা বিশ্বের সঙ্গে।
আরিফুল :ইদানীং শোনা যাচ্ছে প্রবীণ কবিদের চেয়ে নবীন কবিরাই অনেক ভালো লিখছে। ব্যাপারটা আপনার কাছে কী মনে হয়?
রাসেল: শোনা যাচ্ছে কি না আমার জানা নেই। আমি এমনটা শুনিনি। তবে আমার নিজের পঠনপাঠন বলে, প্রবীণদের থেকে নবীনদের কবিতা যোজন যোজন এগিয়ে। এবং এটা স্বাভাবিক বিষয়। নবীনরাই বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ। যদি ৫০ বছর পরে কেউ টিকে থাকে, সেটা এখনকার নবীনরাই।
আরিফুল:সাহিত্যে শ্লীল- অশ্লীল কীভাবে নির্ধারিত হয়? অশ্লীলতার মাপকাঠি আদৌ কি আছে?
রাসেল: এই প্রশ্নের উত্তরও আগেই দিয়েছি। মাপকাঠি আছে।
আরিফুল:কবিতার ক্ষেত্রে দশক ভিত্তিক কোনো সংজ্ঞা আছে কি? যদি থাকে, আশি থেকে শূন্য দশকের সংজ্ঞাগুলো কি কি বলে আপনি মনে করেন?
রাসেল: কবিতায় দশক একটি বহুল উচ্চারিত ও ব্যবহৃত শব্দ। সময়ের সাথে সাথে কবিতায় সামান্য সামান্য করে হলেও বাঁকবদল হতে থাকে। দশক বিচার থাকলে সেই বাঁকবদলটা ধরতে সুবিধা হয়। দশক থেকে দশকে বদলটা মোটামুটি চোখে পড়ে। ধরুন আশির দশকে বিবৃতিনির্ভর কবিতা প্রচুর পাবেন। নির্যাস হয়তো সামান্যই থাকবে। শূন্য দশকের সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্য আমি আশির তুলনায় তাদের অনেক বেশি এগিয়ে রাখতে পারব না। বরং পরবর্তী সময়ের কবিরা আশি, নব্বই, শূন্য—এই তিন দশকের তুলনায় অনেক উজ্বল (যদিও এই তিন দশকেই আমার কিছু পছন্দের কবি আছেন। অসম্ভব পছন্দের কবি)। এর অনেকগুলো কারণ আছে। এককথায় খারিজ করে দিলে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা তৈরি হবে, অবিচার করা হবে। পরিবেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, দেশীয় ও বৈশ্বিক রাজনীতি, প্রযুক্তি—নানা বিষয় কবিতাকে পরিচালিত করেছে, করছে, করবে। তবে এ কথা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে, আজকের কবিতা অতীতের কবিতারই ধারাবাহিকতা। ফলে সিঁড়ির প্রতিটি ধাপকেই তাঁর ন্যায্য কৃতিত্ব দিতে হবে।
আরিফুল:আপনি একসময় লিটলম্যাগ বের করতেন। সেই সম্পর্কে জানতে চাই।
রাসেল: আমি একটিই মাত্র লিটলম্যাগ বের করেছি—ঘুঘু। একটিই সংখ্যা বের হয়েছিল। লিটলম্যাগের ধর্মই এমন। আসলে আমাদের সময়ে এসে লিটলম্যাগের প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। তবে হঠাৎ করে লিটলম্যাগের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়াটা ব্যাপক অর্থে খুবই খারাপ হয়েছে। খুব খারাপ।
আরিফুল:একজন কবির লেখালেখির পূর্ব প্রস্তুতি কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
রাসেল: প্রচুর প্রচুর এবং প্রচুর পড়া।
আরিফুল:নতুন যারা লিখছেন তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন?
রাসেল: নতুনরা উদ্ধত হয়। এই ঔদ্ধত্য প্রয়োজন। তবে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে অতি আত্মবিশ্বাস মিললে ভালো কিছু হয় না। একমাত্র অতৃপ্তিই ভালো লেখার জন্ম দেয়। এটা মাথায় রেখে লিখলেই যথেষ্ট।
আরিফুল :স্যার আপনাকে ধন্যবাদ সাহিত্যবার্তাকে সময় দেবার জন্য ।
রাসেল:‘সাহিত্যবার্তা’ ও তার সম্পাদককে অভিনন্দন জানাই। উভয় সত্তার মঙ্গল কামনা করি।