দেবজ্যোতি কর্মকার এর কবিতাগুচ্ছ
কবি : দেবজ্যোতি কর্মকার
এখন নির্বাচনে মগ্ন আছি
গর্ভের শিশুটি গোঙাতে গোঙাতে জেনে গেল
কীভাবে এই দেশ এখনও ভাতের জন্য কাঁদে
ভাগ্যিস সে কান্না আমরা কেউ শুনিনা!
শিশুটি জেনে গেল এই দেশ এখনও তার জন্য পরমান্ন রাঁধতে শেখেনি
জেনে গেল এই দেশ এখনও খাবার চায়। অথচ,
নির্বাচনের আগে এই দেশ এখন মগ্ন আছে মন্দিরের নেশায়, মসজিদের আকাঙ্ক্ষায়
যে শিশুটি চলে গেল, তার ছিল না কোনোকিছুই।
শুধু একটুখানি রক্ত আর সামান্য কিছু বাতাস।
তবুও সব ছেড়ে চলে গেল!
ছড়িয়ে গেল এই দেশের মন্ত্রীসভার লজ্জায়!
আর ছিটকে পড়ল আমাদের চোখে মুখে শিশুটির পবিত্র রক্ত
রক্তের সাথে মিশে আছে প্রচণ্ড ঘৃণা আর অলৌকিক হাসি।
আমাদের দেখে শিশুটির ভ্রূণ হাসতে শিখেছে ঠিকই।
আগুন
তোমার নাভির নিচে জ্বলছে আমার ভারতবর্ষ!
যারা যজ্ঞের নেশায় যোনিতে পুঁতেছিল নিশান
শরীরে সিঁদুরেযন্ত্রণা এঁকে তুমি চেয়ে আছ আমাদের দিকে
আমরা কেউ কেউ মেপে রাখছি তোমার স্তনের মণ্ডপ
কত ভীড় তোমার মুণ্ডহীন নগ্ন দেহ ঘিরে!
আমরা পুড়ছি তোমার মতোই মিথ্যে অহংকারে।
যোনিমুখে আগুন জ্বেলে আসলে পোড়াচ্ছি আমার মা-কেই!
অজ্ঞাত
এখনও চাঁদের মতোই ঝুলে আছ শূন্যে!
এই সংসার, ধুলোমাটি সব জেগে আছে
অনন্ত সেতার নিয়ে ---
সেসব ভাস্কর্য জমে জমে বৃষ্টি নামার অপেক্ষায়
তুমি একে একে খুলে রাখো অন্তর্বাস
রোমাঞ্চ নিংড়ে দাও
চুম্বনে চুম্বনে অধিকার গড়ি
অথচ,
কী মারাত্মকভাবে তুমি আজও অজ্ঞাত!
পদাবলি কথা
দীর্ঘ এক চুম্বনের পরে
সেদিন রেস্তোরাঁয় কুঞ্জবন রেখে এসেছি --
আজও কলসির জল চুঁইয়ে পড়ে।
তোমার গোপন অভিসারমালা ছুঁয়ে
আমার বাঁশিটির গায়ে বৃন্দাবন আঁকে।
যে মেয়েটি মন্ত্র শেখেনি
কোনও মন্ত্র শেখোনি তুমি --
মোমের মতো নরম চোখে শুধু লেগে আছে ওম
তোমার কথারা হেঁটে আসে আমার জানলার কাছে --
একটা নিশ্চুপ ঘরে আমি একা ;
সবাইকে দূর থেকে দেখি জানলা দিয়ে!
তুমি মন্ত্র জানো না যদিও --
আমার সব যন্ত্রণা নিয়েই গাইছ খেয়াল!
আমি রোজ সেসব শুনি--
কখনও ঠাণ্ডার মতো কান্না জড়িয়ে আসে
কতদিন বারান্দায় এসে দেখিনি
নরম সকাল অথবা সন্ধ্যার আবেশ
একদিন সবকিছু ভুলে এসে দাঁড়ালাম প্রিয় উঠোনে
তুমি একইভাবে গাইছ গান, অদ্ভুত খেয়াল!
আর,
চারপাশে অদৃশ্য হচ্ছে বিভাজনরেখাও!