অখণ্ড ভারত ব্রহ্মাণ্ড নয়নে যবে ঝরিল অশ্রু-ফুল!
ভগবান স্বরূপ নেমে এলে ধরায় মহা বিদ্রোহী নজরুল।
ভারত-আত্মার হাহাকার শুনি থাকিতে নারিলে থির;
বুকের রক্ত বহিল নয়নে গলিত তপ্ত নীর!।
ন্যায়-ধর্মে যে জননীর বুকে চলিত নিত্য শাসন;
সে মায়ের লাজ হরিতেছিল বিদেশী দুঃশাসন।
শ্রীকৃষ্ণ সম দেখা দিলে তুমি সেই দুঃসময়;
অত্যাচারীর বল দর্পীর দর্প করিলে ক্ষয়।
যে পুণ্য ভূমিতে লীলা করেন স্বয়ং ভগবান--
যেথায় নিত্য পূত-পবিত্র জাহ্নবী বহমান;
সেই দেশে জন্মিলে এসে হে নর-নারায়ণ!।
আজ তুমি নাই, বিয়োগ ব্যথায় ধেয়ান করি তব ছবি;
অমৃত ময় মধুর মূরতি, হে মহা মহিম হে মহা কবি।
কবি হতে আস নাই তুমি, এসেছিলে প্রেম দিতে;
মরুভূমি প্রায় বিশুষ্ক এই প্রেম হীন পৃথিবীতে!।
দিয়েছো মোদের সকল ভরিয়া আপনারে শূন্য করি;
সবার সমুখে থাকিয়াও ছিলে নিভৃত গোপন চারী।
তাইতো কেহ দেখে নাই কবি তব বক্ষের ক্ষত!
সকলে পান করিয়াছে তব সৃষ্টি সুধা অবিরত।
চাঁদের আলো যাঁচিগো আমরা, কলঙ্কের কালি সেযে;
আপন অঙ্গে ধারণ করিয়া চন্দ্রমা বহে নিজে।
ভারত-মোহান্ধ কুচক্রী তোমারে দিয়েছে গালি;
সে গালি বন মালা হ'য়ে তব গলায় দুলেছে, তুমি যেন বন মালী!।
অন্ধ কা'রায় সঁপেছে তোমায় পাষণ্ড নির্দয়!
ওরা হয়েছে চুর্ণ-বিচুর্ণ তোমার হয়েছে জয়।
নারায়ণী জগৎ জননী জগদীশ্বরী মহা মায়া;
তোমার শিরে ধরিয়াছিলেন স্নেহের ছত্র-ছায়া।
বিশ্ব পূজ্যা বিশ্ব রূপিনী সারদা জ্ঞান বিলাসী;
হে সুন্দর, সে ছিল কেবল তব আজ্ঞার দাসী।
তুমি চলে গেছো নিয়ে গেছো সাথে ভেরী-তুরী-খর শর;
লাঞ্ছনা বিষে নীল অঙ্গ মোদের হইয়াছে জর জর।
অত্যাচারীর খড়গ আজিও রণিতেছে রণ ভূমে!
ভীত-শঙ্কিত অসহায় আত্মা কাঁদিতেছে ভূমি চুমে।
কোথা হে নাথ রহিয়াছো কোথা কোন গোলোকে?
প্রিয় বন্ধু বীরের বেশে নেমে এসো এই ভূলোকে।
কত সন্তান আছে মা'র কোলে তবুও মেটেনা সাধ!
কাঁদিছে ভারত কাঁদিছে বাংলা কোথা ক্ষ্যাপা উন্মাদ!।
ওরে ধুমকেতু প্রলয় অগ্নি ছুটে আয় ছুটে আয়--
মাতৃ আরাব তোমা পানে উল্কার বেগে ধায়।
শুধু বিদ্রোহী ছিলেনাকো তুমি, চির উন্নত শির--
তব লেখনীতে রহিয়াছে শান্ত-সৌম্য ভাব শান্তি শ্রীর।
মেঘের মত তোমাতে হয়েছে ত্রি শক্তির প্রকাশ--
মহা বজ্র, হুংকার আর রসের উল্লাস!।
সর্ব ভাবে সমুজ্জ্বল তব অমর কাব্য;
পড়িয়া বিশ্ব পাইতেছে নিত্য আনন্দ দিব্য।
তব কাব্যে উঠেছে ফুটিয়া প্রেমের পরশ মণি;
নাচিছে গাহিছে ছন্দে ছন্দে সুর বালা সুর ধুনি।
অতি দুর্লভ ভক্তির আধার তোমার ভক্তি গীতি;
এনেছে বহিয়া শ্রীনারায়ণের বৈকুণ্ঠের প্রীতি!।
তুমি ভাবিতেছো হে মনোচোর ঊর্ধ্বে লইয়া ঠাঁই;
তোমারে আমরা ভুলিয়া গিয়াছি,
হে পুরুষোত্তম ভুলি নাই ভুলি নাই।
ঊর্ধ্ব হইতে নয়ন মেলিয়া দেখো ধরণীর ধূলায়;
নয়নে মোদের বহিছে সলিল, বিহগেরা কাঁদে কুলায়!।
বনে কাঁদে বন লতা, নদী সিন্ধু আদি;
তীরের বক্ষে আঘাত খেয়ে কল্লোলে মরে কাঁদি!।
তুমিযে মায়ের নয়নের মণি, তুমিযে তাহার প্রাণ--
ধ্যানের দুলাল, তোমা বিনা থেমে যায় যত
গান।
তোমারে ভুলিবে এ মহা বিশ্বে সাধ্য আছে কার?
ভুলিতে গেলে হে প্রিয় মনে পড়ো বার বার!।
ভুল ক'রে হয়ত উঠিতে না পারে চন্দ্র-সূর্য-তারা;
এ বিরাট ক্ষতি হবেনা পূরণ আজ মোরা তোমা হারা!।