নাজমা বেগম নাজু ।। পাঁচটি কবিতা
নাজমা বেগম নাজু ।। পাঁচটি কবিতা

কেঁপে ওঠে নিথর দুপুর



বিরহী রোদ ছুঁয়ে পাতা ঝরে,
পাতাদের দীর্ঘশ্বাসে
কেঁপে ওঠে নিথর দুপুর।
কারা যেন বলে ওঠে
সমস্বরে একসুরে-
এখন মৌসুম বদলের ক্ষণ নয়
বরং এক হওয়ার -,
শরত হেমন্ত শীতের
ত্রিভূজ মিলনের ক্ষন;
কে যে হারায় -
কে যে থাকে অবশেষে-।
মাটির নিশ্বাসে ঝরে
ক্ষয়ে যাওয়া পাতাদের দিন।
আমিও কি ঝরা পাতা তবে-?
হেমন্তের মনমরা রোদ-?
বিষন্ন দুপুর?
গুঁড়ো হওয়া নিঃসঙ্গ
শুকনো পাতাদের মত-
সোনারঙা কার্তিকে অঘ্রানে
ছাইরং বিষন্নতা খুঁজি।
অবেলার রোদ মাখা
হেমন্তের কানে কানে বলি
একাত্ব একাকীত্বের গল্প -- 

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নাফিসার পবিত্র চরণ কমলে



নাফিসা তোমার নাম
ইতিহাসে রবে কিনা- এই উত্তর
কেউ দেয়নি আমাকে।
কিন্তু ইতিহাসকে বিদ্ধ করেছ তুমি
নিশ্চিত জানি এ কথা, পুরোটা পৃথিবী জানে-
তোমাকে বিদ্ধ করেছে যে বুলেট
সেই গুলিতে তোমার তরুণ টগবগে হৃদপিণ্ডের
রক্তস্রোত - অনড় অথর্ব ইতিহাসটাকে বিদ্ধ করেছে
মহা স্পন্দিত জীবন দিয়েছে।
নাফিসা - তোমার নামে এখন
পৃথিবীর সব পাখি একসাথে ডেকে ওঠে
অনিমেষ গেযে ওঠে বাসন্তিকা ফুল।
জনস্রোতে আলোর মশাল জাগে-।
সাগরে নদীতে মাটিতে
আগুনের বীজ হতে জন্ম নেয়
শতকোটি অগ্নিমানব
তোমাকে বিদ্ধ করা মানচিত্রের বুলেট হতে
জীবন পেয়েছে যারা। 

বরফ সাদা কষ্টগুলো



আমার জনমদুঃখী অশ্রুগুলো
বরফ সাদা কষ্টগুলো সাথে নিয়ে যেও।
সবার অগোচরে বুকে রেখ তোমার,
কখনো নীল ছোঁযা মেঘের ধূসর
কখনো বা শেকড় গাথা কাশের সারি করে
বুকের অতলে রেখ।
যত্নে রেখ দুঃখগুলো, দুঃখের জমানো অন্ধকার
নিশুতি আকাশে রেখো।
বিদায়ী শরত শোনো  - এভাবে যেওনা
যেতে হলে যাও,  সাথে করে নিয়ে যাও
এই জনমদুঃখী অশ্রুর অংগীকার,
চিবসাদা মেঘ আর কাশফুলে সাজিয়ে
বুকের অতলে রেখো তোমার। 

ঝরে পড়া নক্ষত্রের নাম




কি  করে ঘরে ফিরি, আকন্ঠ জোছনায় ভিজি
রাতভর ঘুমঘোরে তারাদের গল্প শুনি?
প্লেট ভরা রক্তমাখা ভাত
আমাকে গিলতে বলো?
বলবেই তো, অবিরাম যাচ্ছ বলে -,
রক্তভূক নামটাও দিতে পার
রক্তের নদীতে দাঁড়িয়ে - হৃদপিণ্ডের  সবটুকু
ঢেলে দেয়া সন্তানের হিসেবটাও জানিনা আমি।
এখনো হিসেব দাওনি
কত শত চোখ দৃষ্টি  হাারাল
দুই পা হারিয়ে পঙ্গু হলো সে 
কত না তরুণ, নাক্ষত্রিক তাজা প্রাণ।
আদর জড়ানো প্রিয় হাত দুটির
একটিও নেই  আর
কত তরুণ যুবার মহিমা সুবাস দেহে,
অথবা একটা হাত নিয়েই রুক্ষ পৃথিবী পেরোবে
জ্বলন্ত সূর্যের মত নাক্ষত্রিক তরুণেরা
এখন অপূর্ন মানবের দলে চির দুঃখী সব
আকাশ নীলের তারা।
ওরা আন্দোলনে ছিল, মিছিলের সম্মুখ সারি
এখন পঙ্গু, এখন অন্ধ, এখন যুদ্ধাহত
ওরা কত জন- কত শত --?
আমাকে হিসেব দাও, সংখ্যাটা বলো
পৃথিবীকে জানাও সত্যিকারের নির্ভূল সংখ্যাটা
ব্যথার আর্তনাদে কোথায় কাঁদছে ওরা
কতদুর? দগদগে ক্ষত নিয়ে গোঙানির আওয়াজটা কতজনের
কোন চিকিৎসালয়ে -,
কতটা বাসভূম যুদ্ধ শেষের
কাটা ছেঁড়া সন্তান কোলে বাকরুদ্ধ চেয়ে আছে,
গুনে গুনে হিসেব নেব সবটার।
খোঁজ নাও মহারাজ, 
নির্ভূল হিসেবটা আমাকে জানাও মহাজন।
আমার চেনা চাঁদ চুয়ে পড়ে রক্তের ফোঁটা
দেয়ালে ফুলদানিতে পানির গ্লাসে
উপচানো রক্তস্রোত।
বলো, গুনে গুনে নিখাদ হিসেবে বলো
কতটা জীবন বলিদান , কতগুলো প্রাণ
নিঃশেষে দান, জন্মভূমির মুক্তিকাম্যে
অবিরাম অবিরত।
সত্যিকারের গনকবরের তথ্যটাও জানাও
চিহ্ন খোঁজ - খুব মনোযোগে- সযতনে।
সবার হিসাব জানাও।নাম ধাম ঠিকানাও।
মোট শহীদের সংখ্যা
মোট নিখোঁজের সংখ্যা
মোট আহতের সংখ্যা
চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়েছে যারা,
হাত পা হারিয়ে নীরব শোকে
ঘরে ফিরে গেছে যারা।
আমার প্রিয় বাংলাদেশ কাঁদছে
সেই থেকে ভাবছে--
প্রকৃত হিসেবটা
আরো৷ অনেক,অনেক বেশি হবে
কেন অগোচরে চিহ্ন হারাবে
দেশপ্রেমী এই নাম?
আমাকে জানতে দাও
শহীদ আর যুদ্ধাহতের সংখ্যা,
নিখোঁজের হিসাবটাও
একে একে সবার নাম বলো
আমার জপমালায় গেঁথে নেব
সেই নাম জপে জপে পৃথিবীর প্রহর ভরাব
নিমেষ গড়াবে শ্রাবন ফাগুন শারদের,
ক্লান্ত পৃথিবীর দিনে, উচ্চারণের মহিমায়
নতুন সূর্য ওঠাবে জাগ্রত দাবানলে।
সত্যিকারের ইতিহাস, হিসাব জানতে চেয়ে
বড় বেশি অসহায় আমার দেশ,
আকুল হয়ে কাঁদছে দেখো
দুচোখের অশ্রু সাগরে রক্তস্রোতী ধারা
অবিরাম অবিরত। 

ঘরহীন ঘরের আর্তনাদ



কোথাও ঘর ছিল

ভালবাসার এক চিলতে রোদ,

ঘুঘুর ডাকের মত স্বজন দুপুর ছিল

আলতো বিকেলে নুয়ে পড়া বাতাসের শীষ,

ঘর জুড়ে জ্বোনাক পোকার মত মায়ানীল রাত



কখনো ঘরকুনো মেঘ

অঢেল ভালবাসায় শ্রাবণের পরাগ

ঝরাত দিনরাত, বুকের মাঝে পড়শি পুকুর

বাহারি ফুল হতো জানালা পাশে রাতজাগা দিন

দিন শুরুর সূর্যের মত অকপট অশেষ অমলিন

কোথাও ঘরের টান ছিল

একদিন হৃদয়ের দায় ছিল, মুখর

প্রাংগন জুড়ে হৃদয়স্রোতী ভালবাসা

বেলা অবেলায় আনকোড়া স্বাগত সোনারোদ

স্পন্দিত হৃদপিণ্ডের আলিংগনে ভরাত উঠোন

কখনো ফোটা ফুলের মত

উৎসবে আয়োজনে কবিতার সন্ধ্যা

যেন জন্মের ওপার হতে উচ্ছ্বসিত সুরভির

পাপড়ি হতো,  আলোময়  জোছনা নিঝুম

আমার আপন ঘর, নিশ্বাসের মত অন্তবিহীন

কোথাও প্রার্থনার মত

শুভাশিষ ঝরত  অনিমেষ

দিবানিশি ভেসে আসা প্রিয় সুর

মন প্রান ছুঁয়ে ছুঁয়ে বিরামহীন মুগ্ধতায়

অবাধ আকাশ হতো আধখোলা জানালার

কখনো অন্ধের মত

আজন্ম হাহাকারে খুঁজি সেই ঘর

শূন্যতার অতল হতে অশেষ ভেসে আসে

ঘরহীন ঘরের আর্তনাদ, প্রিয় সেই উঠোন প্রাতে

ভূতুড়ে এক কবরের বারমাসী ছায়া যেন কাঁদে

কোথাও ঘর নেই

ঘরের চিহ্নের মত ঝরা পাতা

নিঃসঙ্গ আশ্বিনের কাব্য কথন যেন

শুকনো মরা ঘাসে ছেয়ে থাকা নিথর মহাদেশ

অন্ধকার কফিনে মোড়ানো জোছনার অবশেষ

ঘরহীন ঘরের আর্তনাদ

ডাঃ প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম নাজু ( অবঃ)

কোথাও ঘর ছিল

ভালবাসার এক চিলতে রোদ,

ঘুঘুর ডাকের মত স্বজন দুপুর ছিল

আলতো বিকেলে নুয়ে পড়া বাতাসের শীষ,

ঘর জুড়ে জ্বোনাক পোকার মত মায়ানীল রাত



কখনো ঘরকুনো মেঘ

অঢেল ভালবাসায় শ্রাবণের পরাগ

ঝরাত দিনরাত, বুকের মাঝে পড়শি পুকুর

বাহারি ফুল হতো জানালা পাশে রাতজাগা দিন

দিন শুরুর সূর্যের মত অকপট অশেষ অমলিন

কোথাও ঘরের টান ছিল

একদিন হৃদয়ের দায় ছিল, মুখর

প্রাংগন জুড়ে হৃদয়স্রোতী ভালবাসা

বেলা অবেলায় আনকোড়া স্বাগত সোনারোদ

স্পন্দিত হৃদপিণ্ডের আলিংগনে ভরাত উঠোন

কখনো ফোটা ফুলের মত

উৎসবে আয়োজনে কবিতার সন্ধ্যা

যেন জন্মের ওপার হতে উচ্ছ্বসিত সুরভির

পাপড়ি হতো,  আলোময়  জোছনা নিঝুম

আমার আপন ঘর, নিশ্বাসের মত অন্তবিহীন

কোথাও প্রার্থনার মত

শুভাশিষ ঝরত  অনিমেষ

দিবানিশি ভেসে আসা প্রিয় সুর

মন প্রান ছুঁয়ে ছুঁয়ে বিরামহীন মুগ্ধতায়

অবাধ আকাশ হতো আধখোলা জানালার

কখনো অন্ধের মত

আজন্ম হাহাকারে খুঁজি সেই ঘর

শূন্যতার অতল হতে অশেষ ভেসে আসে

ঘরহীন ঘরের আর্তনাদ, প্রিয় সেই উঠোন প্রাতে

ভূতুড়ে এক কবরের বারমাসী ছায়া যেন কাঁদে

কোথাও ঘর নেই

ঘরের চিহ্নের মত ঝরা পাতা

নিঃসঙ্গ আশ্বিনের কাব্য কথন যেন

শুকনো মরা ঘাসে ছেয়ে থাকা নিথর মহাদেশ

অন্ধকার কফিনে মোড়ানো জোছনার অবশেষ 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান