ছবি : নেট থেকে
নির্দেশক, নাট্যকার, অভিনেতা উৎপল দত্ত জন্মগ্রহণ করেন বরিশালে ২৯ মার্চ, ১৯২৯ সালে। তিনি এ দেশের পলিটিক্যাল থিয়েটারের প্রবর্তক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ অনার্স ডিগ্রি (১৯৪৯) লাভ করেন তিনি। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি নিজস্ব নাট্যদল ‘দ্য শেকসপিয়ারিয়ানা’ গঠন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে জিওফ্রে কেন্ডালের আমন্ত্রণে তিনি ‘শেকসপিয়ারিয়ানা ইন্টারন্যাশনালে’ পেশাদার অভিনেতা হিসেবে যোগদান করেন এবং নানা দেশ ভ্রমণ করেন।
তাঁর প্রথম অভিনয় ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’-এর আন্তোনিও চরিত্রে। কর্মজীবনে তিনি কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন (১৯৫৩-৫৯) করেন। ১৯৫৯ সালে ‘মিনার্ভা’ থিয়েটারে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ‘পিপলস লিটল থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করেন। ষাটের দশকে দেশহিতৈষী পত্রিকায় ‘সংগ্রামের একদিন’ প্রবন্ধ রচনার জন্য ভারতরক্ষা আইনে তিনি কারারুদ্ধ হন। মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গির রাজনৈতিক বিশ্লেষণে তাঁর রচনা সমৃদ্ধ। ‘ছায়ানট’ (১৯৫৮), ‘অঙ্গার’ (১৯৫৯), ‘ফেরারী ফৌজ’ (১৯৬০), ‘টিনের তলোয়ার’ (১৯৭১) ইত্যাদি তাঁর রচিত বিখ্যাত নাটক। কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তিনি ‘গুড্ডি’, ‘গোলমাল’, ‘শৌখিন’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতার চরিত্রে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ও ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া বাংলা পথনাটকের অগ্রদূত হিসেবেও তাঁকে গণ্য করা হয়।
উৎপল দত্ত নাটককে গণমানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। গণমানুষের রাজনৈতিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক চেতনাকে সমৃদ্ধ করতে তাঁর নাটক সেই সময় বিশেষ অবদান রেখেছিল। সূক্ষ্ম ব্যঙ্গবিদ্রূপ সংলাপের মাধ্যমে তাঁর নাটক যেমন একদিকে বিনোদনের খোরাক জোগাত, তেমনি মানুষের মনে দাগ কেটে যেত। উৎপল দত্তের নাটকের তালিকা দীর্ঘ। তিনি পদ্মভূষণ উপাধি ও সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার দুটোই প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৯৩ সালের ১৯ আগস্ট তিনি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।