দূর
থেকে শুনি মিছিলের গান আসে ভেসে
ভ্রুণ ফুটা সুর
ক্রমান্নয়ে দীর্ঘ হচ্ছিলো বাড়ন্ত শিশুর মতো
তারপর কৈশর পেরিয়ে এখন ভরা যৌবন তার
মিছিলের গানে তাল দেয় আনকোরা নগর বাউল
নিরক্ত দেহে ওঠে গান
বেটোফেনের নাইন্থ সিম্ফোনির মতো
বুকে ক্ষতদাগ মুছে ঘুরে দাঁড়াবে এবার
একতারা হাতে
ধমনীপ্রবাহ থেকে ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে
উত্তাল ব্যাধির প্রকোপ
মাধুবীর রূপ ঠেলে ক্রমেই অঙ্কুরিত হচ্ছে স্বপ্নবীজ
উদ্ধত দুটো হাত কোটিপল্লবে বিকশিত হবে তুমি,ও
আমার বাংলাদেশ আমার জন্মভুমি...
উর্দু কবি নাইদা ফাজলির কবিতার ঠিক ভাষান্তর নয় তবে
অনেকটা থিম ও শব্দগত মিল আছে
জীবনকে খুব কাছে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম
আয়নার সম্মুখে
ভাঙা চোয়াল জুড়ে কাঁচাপাকা দাড়ি
সল্ট এন্ড প্যাপারের মতো
হঠাৎ এভাবে নিজেকে দেখে আঁৎকে উঠলাম
অচেনা এক আগন্তুক ,বুকে তার নামহীন ক্ষত
ক্ষতের গভীরে অনেক কথা জমা
মাটির ব্যাংকে খুছরা পয়সার মতো
প্রতিটি নিঃশ্বাসে মনে করিয়ে দেয় জমানো ব্যথার স্মৃতি ...
আয়না আমাকে ভিন্ন এক মানুষের সাথে মিলিয়ে দিলো
জীবন আর আমি কোথায় যেনো বিস্তর ফারাক
আশা ছিল অন্তত একটি আনন্দময় মুহুর্ত
আমার পাশে এসে দাঁড়াক
কিন্তু না ,আমার চারপাশ এক মহা শূন্যতা দিয়ে ঘেরা
এই মহাশূন্যে শশকের মতো দৃষ্টি লাফাতে থাকে
দূরকে কাছে নিয়ে আসার বৃথাভিমানে
হাঁটতে হাঁটতে দূরের ঐ রাস্তাগুলো
একরকমই মনে হয় কেনো ?একে অপরের -
কার্বন কপি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টির সীমান্ত জুড়ে
পৃথিবী নামক এই অরণ্যে দূরতক দেখি বিস্ময়ে
আমার কোন বন্ধু নেই শত্রুতো নয়-ই
শুধু সমস্ত নিঃসীম নিঃসঙ্গতায় আমার বিস্তার !
আমি বড্ড ক্লান্ত ।হাওয়ার ওজন মাপতে গিয়ে -
হাত পুড়িয়ে ফেলি তোমাদের প্রশ্বাসে !
ছেলেবেলার হজমিওয়ালার সিরকায় জিহ্বা পুড়ে
যাওয়ার মতো কথাগুলো দাউদাউ জ্বলে লালার স্রোতে
দৃষ্টির ক্যানভাসে শকুনের ঠোঁটে ভর করে দেখি
ব্যস্ত শহরের আকাশ উড়ে উড়ে যায় কালাপানি পেরিয়ে
যেখানে অরিন্দম দ্বীপে হচ্ছে কবির কুলখানি !
কেউ আবার লালার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দক্ষ নাবিকের মতো
আত্ম তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে আর আমি তলিয়ে যাচ্ছি
নিজের ছায়ার গভীরে ...
হাঞ্জাবেলার সূর্য
আমার আপাদমস্তক গ্রাসকরে সেও হারিয়ে যাবে
শুধু পৃথিবীর উঠোনে পড়ে রবে
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক কবির শব্দের জীবন্ত কঙ্কাল ।
হাতে হাতে ঘুরছে ধর্মের প্লেকার্ড
আস্তিনে লোকানো বিষাক্ত ছুরি
কাটাতারে ঘেরা দৃষ্টির সীমানা
আঘাত পেলেই মরে যেতে পারি !
এখানে মৃত্যু গজিয়েছে ডালপালা
কবরেও চিতার জ্বালা,চলিতেছে উৎসব
চেতনায় উন্মাদনায় তুচ্ছ মানবতা
মনে হয় এদেশ যেনো বিবর্জিত পাণ্ডব
পুরা দেশটাই আজ কারাগার !
আগেও ছিলো,কিছুটা সহনশীল
সত্য বললেই ফ্যাসিস্ট ট্যাগ দেয়
মব ভায়োলেন্স আর প্রতিক্রিয়াশীল
অজস্র অস্ত্র,হাতেহাতে স্নাইপার
বাড়ন্ত ত্রাস ! তাক্ করে ভুরুসন্ধিতে
এ-যে গ্রহণকাল গুমরে কাঁদে সময়
ন্যায়পালও আছেন কমায়,আচম্বিতে
হে আমার দেশ মাতৃ জঠরের ঋণ
তুমি জ্বলে উঠো ফের অন্ধকার ঝেড়ে ।
মৃত্যুতে হারেনা মানুষ ,প্রজন্ম স্বপ্ন দেখায়
প্রান্ত থেকে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে
নির্বাক বসে আছি আমি,দেখেও বলতে পারিনা কিছু
দূর্দেশী ফড়িয়ারা দলবেঁধে এসে ঘেঁটুপুত্র কমলার
পৌরুষের বিচার করো , কে তুমি ?
এ আমার দেশ,নিজস্ব বিস্তার ,অনন্ত নিবাস ।
গাজি কালু চম্পাবতি ,রায়মঙলে কল্পনার বসতি
বেহুলা বাসরে মরে লক্ষিন্দর সত্যি হোক মিথ্যে হোক
এগুলোই লোকগাঁথা বাঙালির সম্পত্তি ...
যাত্রা পালা ,জারিগান ,কীর্তনীয়া রাধারানীর বৈষ্ণব গাঁথা
আশুরার কষ্ট-শোকে ,এখনো মাতম বুকে বাংলার ঘর থেকে ঘরে
আমারা মিলেমিশে একাকার
কে তুমি এসেছো ভাঙিতে এ সংসার ? দূর হও
তুমি দূর হও ,এখানে কেন হে ভীনদেশি তস্কর
চলে যাও তা-না হলে জেনে রেখো
বাংলার এই মাটি হবে তোমাদের সুগভীর কবর ।
পুড়ছে শব নূরা পাগলার , জ্বলছে বাংলাদেশ !
শোনিত- দুঃস্বপ্নের মতো সেজেছে মাতৃভূমি আজ
বর্ণচোরা হিংস্র জীবের মতো তেপ্পান্ন বছরে ধরে-
বুনেছে ওরা শান্তির নীড় !
হাওয়ায় কে বাঁধ দিতে পারে বলো
তাই প্রতিটি প্রশ্বাসে বিষাক্ত করেছে বাংলার বায়ু-জল
জলের গভীরে মথিত বেদনায় বেড়ে উঠছে দ্রোহবৃক্ষ
দেশ-প্রেম ;একদিন এই বৃক্ষের ফুল থেকে ফল তারপর
দ্রোহবীজ ফেটে অঙ্কুরিত হবে আগামীর মহীরূহ
যার প্রতিটি পত্রপল্লবে
লেখা রবে
আমাদের আত্মপরিচয়
এই দিন আর বেশি দূরে নয় ...
শরীর ও কলম !
এখানে কলমকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা
এভারেস্ট জয়ের মতো অসাধ্য সাধন …
পেঁচার সংসদে আইন পাশ হয়
বেঙের ছানারা হাত পা গজিয়ে
নেমে যায় লিখনী বানিজ্যে
তাদের কালি বেশ্যার স্রাবের মতো
যা লিখে সব অশুদ্ধ বয়ানে
বিভু’দা বিক্রি হন-নি
আজ জীবনের দীনতা নিয়ে
মহর্ষি মঞ্জুশ্রীর মতো
মিশে গেলেন সময়ের উল্টো স্রোতে
কিন্তু তাঁর কলম কৈলাশের চুড়ায় জ্বলবে
দ্রুবতারা হয়ে ...
১৫ই আগষ্টে যে নাম মুছে যায়নি
ভেঙেছ যে ধর
সে ঘর আমার হৃদয়ের মাজে আঁকা
বাংলাদেশের মানচিত্র জুড়ে
বঙ্গবন্ধুর নাম লেখা ...
প্রতিটি নগর পাড়া মহল্লায়
জাগ্রত মানুষ মুজিবীয় চেতনায়
দুর্দিনেও শক্তি খুঁজে পায়
রক্তে জ্বলে বহ্নিশিখা
বাংলাদেশর মানচিত্র জুড়ে
বঙ্গবন্ধুর নাম লেখা ।
এখনো মানুষ কবিতা ও গানে
বাঙলার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে জানে
মজলুমের স্লোগানে স্লোগানে
রাজপথে ফের দেখা
বাংলাদেশের মানচিত্র জুড়ে
বঙ্গবন্ধুর নাম লেখা ।
মনোগত রেশে ভেসে ওঠে স্মৃতি
চোখ চুরি করে হেসে যায় প্রকৃতি
প্রগাঢ় স্তুতি কিংবা করুণ বিচ্যুতি
অনায়াসে বেড়ে যায় জীবনের লেনদেন
শরীরের মোড়ে মোড়ে ক্লান্তিগুলো জড়ো হয়ে
আলগোছে মেলে ধরে মৃত্যুর অবগুণ্ঠন ...
শোণিতধারায় বেড়ে উঠছে অরণ্য
ভারসাম্যহীন সময়ের বুক চিরে
পল্লবের প্রতিটি রেখায় জন্ম নিয়েছে
অণুজীবি ক্যামোফ্লাজ !
পাতায় পাতায় ঘেরা
মৃত্যু দুয়ার
যেখানে হাত দেই সেখানেই মৃত্যুদূত
ওম দেয় শাখা প্রশাখায়
নির্বোধ পক্ষিকূল অবরুদ্ধ মানুষের মতো
নিজের সাকিন ভুলে গুহায় নিয়েছে নির্বাসন
ত্রস্তভয়ে মুহুর্মুহু হাওয়ায় ঘটে তাদের রক্তাক্ত গর্ভপাত
কারণ, শোণিত-অরণ্য এখন ভয়াল মৃত্যু বিষাদ ।