স্টলে বই
অমর একুশে বইমেলা এলেই সবাই চান নিজের লেখাগুলোকে মলাটবন্দি করতে। অনেকেই কী লিখলেন তা যাচাই না করেই মলাটবন্দি বের করেন মেলায়। তারা মনে করেন মেলায় বই বের করা মানেই লেখক হয়ে যাওয়া। এজন্যই বইমেলায় আসা নতুন বইগুলোর মধ্য থেকে প্রতি বছর মানসম্মত বইয়ের যে তালিকা তৈরি করা হয় সেটিকে নীতিমালার আওতায় আনার দাবি করেছেন লেখক-প্রকাশকরা। তাদের দাবি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলে সেখানে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার সুযোগ থেকে যায়। আর এ কারণে নীতিমালা থাকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষও নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নীতিমালা হবে কিনা সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘মানসম্মত বইয়ের বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। কোনো নীতিমালা ছাড়া মানসম্মত বই যাচাই করা হলে প্রশ্ন তোলার একটি সুযোগ থেকে যায়। কারণ সেখানে ব্যক্তিবিশেষের পছন্দ বেশি গুরুত্ব পেতে পারে। আমি এ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক। আমাকে যদি প্রশ্ন করেন কিসের ভিত্তিতে এ মান নির্ধারণ করা হচ্ছে তবে আমার কাছে এর উত্তর নেই। এখানে আমাদের নির্বাচকমণ্ডলী তাদের চোখের দেখায় যেগুলোকে ভালো মনে করছেন সেগুলোকেই ভালো বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। এখানে একটি ভালো নীতিমালা থাকা প্রয়োজন সে বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।’
গত কয়েক বছর ধরে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ভালো মানের বইগুলোর একটি তালিকা করে আসছে। তবে প্রথম থেকেই এ বিষয়ে আপত্তি ছিল প্রকাশনাগুলোর। তারা মনে করেন, মানসম্মত বই করতে হলে তা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতাতেই হওয়া উচিত। তা না হলে এখানে অনিয়মের সুযোগ থেকে যায়। বিশেষ করে এ বিষয়ে যখন কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকে তখন বিষয়টি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন হয়ে পড়ে বলে মনে করেন তারা। যেখানে ব্যক্তির খেয়াল খুশির পাশাপাশি নিকটস্থ ব্যক্তিদের বইকে গুরুত্ব দেয়ার মতো অনিয়ম হতে পারে। আবার নিজেদের বই একাডেমির মানসম্মত বইয়ের তালিকায় আনতে অনৈতিক পথও বেছে নিতে পারেন অনেকেই। এ কারণে প্রকাশকরা বলছেন, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ঠেকাতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা আবশ্যক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস লাকি বলেন, মেলায় অনেক বই বের হয়। ভালো প্রচার-প্রচারণা দেখে বই কিনে নিয়ে দেখি বই শিক্ষনীয় কিছুই নেই। এ কারণেই বইয়ের মান নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা তৈরি অতীব জরুরি। উত্স প্রকাশনার প্রকাশক মোস্তফা সেলিম বলেন, ‘ভালো মানের বইয়ের তালিকা হবে এটি ভালো দিক। এর মধ্য দিয়ে পাঠকরা প্রতি বছরের ভালো বইয়ের সম্পর্কে একটি তালিকা পেতে পারেন। কারণ হাজার হাজার বইয়ের মধ্য থেকে ভালো বই বেছে নেয়া পাঠকের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। সেদিক থেকে এটি ভালো উদ্যোগ।
অনুপম প্রকাশনার প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ বলেন, ‘কোনো নিয়মের বাইরে এত বড় একটি কাজ হওয়া উচিত নয়। এখানে অবশ্যই একটি নীতিমালা বাঞ্ছনীয়। এখানে সামগ্রিকভাবে পাঁচশ’ বইকে ঘোষণা না করে বরং বিষয়ভিত্তিকভাবেও এটি হতে পারে। যেমন কবিতার বই মেলাতে সবচেয়ে বেশি আসে। সেখানে নির্দিষ্ট নিয়ম থাকতে পারে যে প্রতি বছর এতটি কবিতার বই বাছাই করে মানসম্মত ঘোষণা করা হবে। গণিত, গবেষণা, রচনা বা কম্পিউটারের বই কিছুটা কম আসে। এখানেও একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে পারে। বিষয়ভিত্তিক বইয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক নির্বাচকমণ্ডলীও থাকতে পারে। এটি সবার জন্যই একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে।
রেজাউর রহমান রিজভীর দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন: এবারের বই মেলায় প্রকাশিত সাংবাদিক, গীতিকার ও নাট্যকার রেজাউর রহমান রিজভীর প্রকাশিত ‘ভালোবেসে চলে যেতে নেই’ ও ‘তিনটি টেলিভিশন নাটক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে গ্রন্থমেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে বই দুটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে লেখক রেজাউর রহমান রিজভীসহ উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা খালেকুজ্জামান, অভিনেতা ও নাট্যকার বৃন্দাবন দাস, আজম খান, অভিনেতা ও পরিচালক খন্দকার ইসমাইল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইব্রাহীম খলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আমির হাসান রিপন, দোয়েল প্রকাশনীর প্রকাশক তাপস কর্মকার। গ্রন্থমেলা নিয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন: গতকাল বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’ বিষয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এর সদস্য-সচিব এবং একাডেমির পরিচালকরা। মহাপরিচালক বলেন, আগামী বছর মেলা এবারের চেয়ে সুন্দর হবে। এবার মেলায় যেসব অসঙ্গতি রয়েছে সেগুলো আগামীবার যাতে না থাকে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব।
প্রায় চার হাজার নতুন বই: এবারের বই মেলাতে গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৫৪টি নতুন বই এসেছে। আগামী কয়েক দিনে এ সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে মলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার আসা নতুন বইয়ের মধ্যে গল্পগ্রন্থ ৬৩৬টি, উপন্যাস ৫৮৫, প্রবন্ধ ২২২, কবিতা ১২৮৯, গবেষণা ৬৫, ছড়া ১০০, শিশুতোষ ১২২, জীবনী ১৩৭, রচনাবলি ১১, মুক্তিযুদ্ধ ৯৪, নাটক ৩৬, বিজ্ঞান ৬৪, ভ্রমণ ৭৪, ইতিহাস ৬৬, রাজনীতি ২৮, স্বাস্থ্য ২৩, কম্পিউটার ৪, ধাঁধা ২৭, ধর্ম ২১, অনুবাদ ৩৩, অভিধান ৪, ফিকশন ৪১, এ ছাড়া অন্যান্য বই এসেছে ২৭১টি।
সূত্র: মানবকণ্ঠ