পাঁচটি কবিতা । রাজন্য রুহানি

[জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য কবি জীবনানন্দ দাশ]
❑ কখনো আমাকে আর
কখনো আমাকে আর খুঁজে পাবে না'কো
এই অশ্বত্থের দেশে;
হঠাৎ আনমনা শিস দেবে ভোরের দোয়েল কিংবা কোকিল
পায়ে পায়ে রঙ মেখে উদ্দাম বসন্ত আসবে ফের;
তবু আমাকে পাবে না
খুঁজে পাবে না হায় পৃথিবীর কোথাও!
চিরজীবনের সাধ সাঙ্গ করে দূরে চলে যাবো
তুমি জানবে না...
❑ ওঠ্ রে বসন্তবসন্ত, ঘুমিয়ে পড়েছিস?ওঠ্ ওঠ্, দ্যাখ, করজোড়ে দাঁড়িয়ে কাঙাল... শরীরে প্রেমপল্লব মেলে তাঁরও তো আছেবেঁচে থাকবার অধিকার;দখিন দুয়ার খুলে আত্মার সুঘ্রাণেকে না অমর হতে চায়, বলো?ঘুমচোখে মহাকাব্য হয়না সুপ্রিয়,জেগে দ্যাখো, কাঙাল দুয়ারে...জানো না কী, দয়াতে নিশ্চিত হয় ভক্তের আকাঙ্খা;পুষ্পশোভা জাগে ইহকাল-পরকালে!ওঠ্ রে বসন্ত, বেলা যে গড়িয়ে যায়!
❑ ষড়রিপুর বাজার
'আমাকে একটু প্রেম দাও, ফুলেফলে ভরে দেবো বুক'
এই কথা শোনে ছুটে এলো চাকের মৌমাছি
বস্তা গাট্টি বেঁধে আসলো আড়ৎদার
তারপরের যে মাস, অর্থাৎ কোকিলদের সাথে
পাখিদের কবিতাপাঠের মৌসুম,
তখন ঈশ্বর গাইলেন 'রোদনভরা এ বসন্ত...।'
সে মাসেও পরিযায়ীদের পায়ে ছিল বিষ
পরাগায়ণ হলো না
এভাবে প্রত্যেক মাসে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে
ছুটে আসে ধন্বন্তরি, নানা ধর্মবেত্তা
তবু কোন বুজরুকি কোন অসুখে মলম
এ খবর না জানলো পিতৃপুরুষ, না বুঝলো পিতামহী
'আমাকে একটু প্রেম দাও, ফুলেফলে ভরে দেবো বুক'
এই আর্তনাদ শোনে জিব্রাইল এসে একদিন
ঈশ্বরদত্ত ছয়টি জামা দিয়ে গেলো,
এই দৃশ্যে পাত্র হতে পাত্রে লুটোপুটি খেলো সুরা
সেদিন থেকেই মানুষেরা বুঝে গেলো অঙ্গের ক্ষমতা,
যা ধারণ করেছিল সে নিজেই
শরীরের স্বাদে ও জামাদের প্ররোচনায়
❑ বিম্বিত বাহুর দৈর্ঘ্য গ্লাসটা অর্ধেক খালি, এই বলে চ্যাঁচালো যেসে পেল না কিছু। 'অর্ধেক ভরা' বলে যে প্রেম কুড়ালো পৃথিবীরতার চোখ ভরে গেল ফুল ও ফসলে।কেউ কেউ তলোয়ার ফেলে তবু গোলাপ বিলাসেধুলো হয়ে যায়। তারাই কী অর্ধেক খালির দল?তারাও তো পুরো গ্লাসে জল দেখতে চেয়েছিল!
□ মৃ/ত্যুর টঙ্কার
যদি ম/রে যাই
কোনো ঘাসফুলের বিকেলে
ফড়িংয়ের কাছে বলে দিও সমুদয় আ/র্তনাদ
কোনদিন রোদ্দুর পায়নি
ম/রে যাই যদি
একদিন নক্ষত্রের আলো চোখগ্যালো পাখির ডানায়
ভর দিয়ে মেঘে মেঘে আঁকবে তোমার মুখ,
সেইদিন দেখে নিও অ/ন্ধত্বের দেশে প্রেমিকের বাঁশি
চির অবহেলিত!
পৃথিবীর মঞ্চে এক আ/ত্মহননের জাদু
বিন্দু থেকে ক্রমাগত বৃত্তে ছড়িয়েছে...
যাই যদি ম/রে
বুকের পাঁজর ছুঁয়ে ফুলপাখিদের মেলা বসবে না আর
তোমার উঠোনে কোনোদিন;
যেখানে স্বর্গের দূত ও/হী এনেছিল
পু/লসিরাত পেরিয়ে যেতে এক স্বর্গীয় পথের ইশারায়,
বঞ্চনার হৃদস্পন্দ মুছে কোন নির্বিঘ্ন শান্তির কাছে!