প্রচ্ছদ
মেয়েদের ভগবানও বুঝতে পারেন না অথচ তিনিই মেয়েদের তৈরি করেছেন। তাই মেয়েরা কেমন হয় প্রশ্ন করলে উত্তর আসে “মেয়েরা যেমন হয় “। সমরেশ মজুমদারের এই বইটির নাম হতে পারতো মেয়েদের যেমন দেখেছি অথবা আমার দেখা মেয়েরা। এক জীবনে কত মেয়েকেই আর দেখা যায়। দেখা যাওয়া মানেই কিন্তু সান্নিধ্যে আসা নয়। আর সান্নিধ্যে আসলেই কেবল কেবল লেখা সম্ভব। সেই হিসেবে এই বইটার কলেবর আরো বড় হলেই খুশি হতাম।
এই বইটি কোনোভাবেই হুমায়ূন আজাদের নারীর মত গবেষণা মুলক গ্রন্থ নয় কিন্তু মেয়েদের তিনি যেভাবে দেখেছেন সেগুলো বেশ মৌলিক অর্থাৎ একেকটি মেয়ে অন্তত এক হাজার মেয়েকে উপস্থাপন করতে সক্ষম। সমাজ যে সময়ের সাথে সাথে আধুনিক হচ্ছে সেটার সাথে সাথে মেয়েদের মুক্তি অথবা নতুন শিকলে বন্দি পড়াটা তিনি চমৎকার লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আমি পাঠক আমি বেশ কিছু বইয়ের নাম পেয়েছি এই গ্রন্থ যেগুলো পাঠকের জন্য অবশ্যপাঠ্য যেমন রামের সুমতি, ক্ষীরের পুতুল, বিবর, প্রজাপতি, বুড়ো আংলা, সাহেব বিবি গোলাম, রাধা, যখের ধন, কালো ভ্রমর, তিতাস একটি নদীর নাম, রাজসিংহ, কপালকুণ্ডলা, শ্রীকান্ত।
আর একটা কথা আমাকে খুব টেনেছে বলতে পারেন মিলে গেছে অনেক আগে আমি একটা স্টেটাস দিয়েছিলাম যে মেয়েদের বিয়ে হয় আর ছেলেরা বিয়ে করে। এই বিষয়টা লেখকের কলমেও উঠে এসেছে। আজকাল শিক্ষিত মেয়েরা যখন অন্য মেয়েকে বলে কিরে তোর বিয়ে হয়নি? তখন দুঃখ লাগে হায় যে সময়ে এই বইটি লেখা সেসময়ে এই মেয়েদের হয়তো জন্মই হয়নি। কিন্তু মানুষের চিন্তাভাবনা পুরুষ তান্ত্রিক মানসিকতা এখনো মেয়েদের মাথায় মগজে রয়ে গেছে।
এখনো অনেক শিক্ষিত মেয়ে বিশ্বাস করে যে স্বামীকে সেবা করা তার দাসী হতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। এমনকি বিয়ের সময় হিন্দু মেয়েদের তাদের বরকে প্রনাম করতে হয়। আমার বিশ্বাস আজকাল শিক্ষিত মেয়েদেরও এটা করতে হয়। এটা লজ্জার। স্বামী যদি স্ত্রীর বন্ধু হয় তাহলে এখনো কিভাবে বিয়ের রীতিতে সেই দাসী প্রভু ব্যাপার রয়েছে। আমি ঠিক করেছি বিয়ের সময় যদি আমার স্ত্রী আমাকে প্রনাম করে তাহলে আমিও তাকে পাল্টা প্রনাম করবো।
এদেশের স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে আমি বাথরুমে যাচ্ছি, তুমি ভাতটা গ্যাস থেকে নামিয়ে রেখো, তাহলে হজম করা মুশকিল হয়ে যায়। আগের কালে পুরুষরা যখন চাষের দ্বায়িত্ব নিলো মেয়েদের কাছ থেকে তখন ধীরে ধীরে মেয়েদের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হল। যে মেয়ে ঘরে থাকতে অস্বীকার করল তাদের পায়ে লোহার শিকল হাতে শিকল এমনকি নাক কান ফুটো করে লোহার তার ফুঁটো করে বেঁধে রাখা হোতো। এরপর যখন মেয়েরা পুরুষদের বশ্যতা মেনে নিল সেই থেকে সেই শিকল হয়েছে মল হাতের লোহা হয়েছে বালা, নাকের তার হয়ে নাকফুল। কিন্তু সেই অত্যাচার সেই পুরুষ দের শেখানো নিয়ম যেগুলো বাধ্য হয়ে মানতে হয়েছে একসময় সেগুলো এখন সংস্কৃতি হয়ে গেছে মেয়েদের জন্য। এখন কোনো মেয়ে জানেই না এই দাসত্ব এক সময় জোর করে বাধ্য করা হয়েছে তাদের উপর।
এই যে মেয়েদের রান্না করতেই হবে জামাকাপড় তাদের কাচতেই হবে এগুলো কোনো সংস্কার নয় নিয়ম নয় রীতি নয় এগুলো অত্যাচার যেগুলো মেয়েরা এখন অধিকার হিসেবে দেখে। পুরুষ আধিপত্যের যে কি ধার তা বোঝা যখন বিয়ের পর মেয়েটি বরকে রান্না ঘরেই ঢুকতে দেয় না বরং সে নিজে আনন্দে রান্না করে সারাজীবন বরকে খাওয়াবে বলে দ্বায়িত্ব নেয়।
কিন্তু সবকিছুরই শেষ থাকে। পুরুষ আধিপত্য শেষ হয়ে নারীরাও সমান হয়ে উঠছে। এটা আনন্দের। আমাদের গ্রামের দিকে আগে বাইরের গ্রামে নিমন্ত্রণ হলে নেমন্তন্ন খেতে শুধু ছেলেরাই যেত আজকাল মেয়েরাও যায় এটা অবশ্যই সুখবর। শুধু শহরে না গ্রামেও মেয়েরা বাড়ির বাইরে বিভিন্ন প্রফেশনে নিয়োজিত রয়েছে। যাইহোক মেয়েরা কেমন হয় এটার সহজ উত্তর নেই। আসলে প্রতিটি মানুষ আলাদা। নারী হোক পুরুষ হোক সবাই আলাদা সবার রুচি অভ্যাস শখ আলাদা তবু আমাদের একসাথে থাকতে হয়। আমি আশা করব এক সময় যখন বাংলাদেশে “মেয়েরাও মানুষ” নামে কোনো মুভি মুক্তি না পেয়ে বরং মানুষেরা যেমন হয় নামক বই বেরোবে সিনেমা হবে।