প্রভাবিত - সাইফউদ্দিন আহমেদ বাবর।
প্রভাবিত - সাইফউদ্দিন আহমেদ বাবর।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।
দু’টা প্যারাসিটামল খেয়ে,বাতি নিভিয়ে,রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছি।
ঘড়িতে বোধহয় এগারোটা বাজে।
রাত।
দশটার দিকে,মাথা ব্যথা সহ্য করতে না পেরে,গাভনার সাহেবকে বলে ছিলাম,
- মাথা ব্যথার জন্য দাঁড়াতে পারছি না।
তিনি হাসলেন।
বললেন,
- ঠিক আছে,চলে যান।রেস্ট নিন।
আমি রেস্ট নিতে,স্টাফ ফ্লাটে-আমার রুমে চলে এলাম।
আসবার সময় কলিগ ফুল মিয়াকে বলে এলাম-রেস্ট নিতে যাচ্ছি।সবাইকে যেনো বলে দেয়,আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা।কেউ যেনো আমাকে ডিস্টার্ব না করে।এমন কি খাওয়ার জন্যও ডাকাডাকি না করে।
ঘন্টা খানেক হলো,কেউ ডিস্টার্ব করতে আসে নি।
শুভ লক্ষণ।
ফুল মিয়া নিশ্চয় সকলকে বলে দিয়েছে।সতর্ক করে দিয়েছে।
কেউ ডিস্টার্ব করবে না-এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিৎ হয়ে,চোখ বুজে রেস্ট নিতে লাগলাম।
ব্যথা না কমলেও হাল্কা একটা তন্দ্রা মতো ভাব আমার দু’চোখ জুড়ে নেমে এলো।তাতে খানিকটা আরাম বোধ করতে লাগলাম।
এমন সময় আমার রুমের দরোজা খুলার শব্দ।
আমি চোখ খুললাম।
সিঁড়ির লাইটের সামান্য আলো দরোজার ফাঁক দিয়ে ঢুকে আমার চোখে আঘাত করলো।আমার দৃষ্টি অস্পষ্ট হলো।ঝাপসা হলো।আলো আঁধারের সেই ঝাপসায় একটা বোল্ড মাথা দেখা গেলো।
আলির মাথা।
তার সব চুল পড়ে যাচ্ছে বলে কিছু দিন হলো সে মাথা সেভ করে বোল্ড হেড হয়েছে।এবং প্রতিদিন নিয়ম করে মাথায় পেঁয়াজ ঘষে যাচ্ছে।
আমি তাকে জীজ্ঞাসা করেছিলাম-পেঁয়াজ ঘষার উপকারীতা কি।
আমার প্রশ্নে সে হাসলো।
ব্যাঙ্গাত্মক হাসি।
বললো,
- ভালো কোন কিছুই তো জানো না দেখছি।আছো তো সব ফালতু বিষয় নিয়ে।
আমি বিস্মিত হলাম।
- মানে?আমি কি ফালতু বিষয় নিয়ে আছি?
- এখন এসব ব্যাখ্যাতে যেতে পারবো না।দেখছো না আমি মাথায় পেঁয়াজ ঘষছি?আমার ব্যস্ততা দেখতে পাচ্ছো না?
আমাদের কাছাকাছি তান্দুরী শেফ দাঁড়িয়ে ছিলো।
আলির বিরক্তি ভরা কথায় সে মজা পাচ্ছিলো।
আমি তাকিয়ে দেখি সে মিটি মিটি হাসছে।
আমি তাকে জীজ্ঞাসা করলাম,
- ব্যাপার কি তুমি বলোতো?মাথায় পেঁয়াজ ঘষলে কি ফল পাওয়া যায়।
সে বললো,
- পড়ে যাওয়া মাথার চুল আবার উঠে যায়।
- তাই নাকি?
- জ্বী।আমি শোনেছি।আলি ভাইয়ের পরিচিত কয়েক জনের টাক মাথা আবারো চুলে চুলারণ্য হয়ে গেছে।
তান্দুরী শেফ হাসতে লাগলো।
আমি জীজ্ঞাসা করলাম,
- চুলারণ্য আবার কি?
- এই লোকে লোকে লোকারণ্যের মতো চুলে চুলে চুলারণ্য আর কি।
আমি আলিকে ইঙ্গিত করে জীজ্ঞাসা করলাম,
- এটা এ বলেছে?
তান্দুরী শেফ হাসতে হাসতে মাথা নাড়লো।
আমি বললাম,
- পেঁয়াজে পড়ে যাওয়া চুল আবার উঠে যায় শোনিনি।তবে আরো একটা জিনিস ইউজ করলে শোনেছি মাথার চুল সাত দিনে উঠে যায়।আফ্রিকার লোকেরা সেটি ইউজ করে।
আলি আমার দিকে তাকালো।
বেশ একটা কৌতুহলপূর্ণ ভাব চোখে মুখে ফুটিয়ে জীজ্ঞাসা করলো,
- সেটা কি?
আমি নির্বিকার ভাবে বললাম,
- ঘোড়ার বিস্টা।
- কি,কি?
- ঘোড়ার বিস্টা।ঐটা মাথায় মাখিয়ে ঘন্টা খানেক রাখলে সাতদিনের মধ্যে মাথায় চুল উঠে যায়।
আমার কথায় আলি রেগে উঠলো।
ভয়ানক রাগ।
রাগের চোটে তোতলাতে লাগলো।
বললো,
- তুমি নিজে তাহলে ঐ বিস্টা ইউজ করছো না কেন?
- আমি কেন ইউজ করবো?
- তোমার ঐ টাকলুতে চুল উঠানোর জন্য।
আমার কাজ হয়ে গেছে।
আলিকে রাগিয়ে দিয়েছি।
সে যেমন মানুষকে অকারনে,উল্টা পাল্টা কথা বলে,বিরক্ত করে,রাগিয়ে আনন্দ পায়-ঠিক তেমনি উল্টা পাল্টা কথা বলে,তাকে রাগিয়ে আমি আনন্দ পেতে লাগলাম।
আমি বললাম,
- আমি চুল উঠাতে যাবো কেন?আমার এই টাক মাথাতেই আনন্দ।যার মাথা ভর্তি চুলের প্রয়োজন,সে ঐ জিনিষ ইউজ করে দেখতে পারে।
আমার কথায় কিচেনের সবাই হেসে উঠলো।আর আলি অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার সেই অগ্নি দৃষ্টিতে ভষ্ম হবার আগেই সেখান থেকে আমি প্রস্থান করলাম।
এই মুহুর্তে আলো আঁধারে আলির বোল্ড হেড দেখে আমি বিরক্ত হলাম।শক্ত একটা কিছু বলার জন্য খুঁজতে লাগলাম।
এর আগেই আলি বললো,
- তোমার নাকি খুব মাথা ব্যথা বাবর ভাই?
বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে,লাইট জ্বালিয়ে,দরোজা বন্ধ করে,আমার বেডের পাশের চেয়ারটায় বসলো।
আমি বললাম,
- এখন যাতো আলি।লাইট টা নিভিয়ে চলে যা।
- খেতে যাবে না?আমি তো খাওয়ার জন্য তোমাকে ডাকতে এলাম।
- না আমি এখন খাবো না।বলে এলাম না?আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা।
- সত্যি সত্যি মাথা ব্যথা?
বলেই আলি হাসলো।
অন্য রকম হাসি।
আমার বিরক্তি লাগলো।
বললাম,
- এখন ফাইজলামী না আলি।তুই যা।
- আমি কেন ফাজলামী করবো?গাভনার সাব শেফকে গিয়ে বলছেন শোনলাম,তুমি নাকি মাথা ব্যথার ভাণ ধরে কাজ থেকে চলে এসেছো।
- গাভনার সাব এই কথা বলেছে?
- স্পষ্ট ভাবে বলেছেন।আরো কতো কি বলেছেন।আর শেফ ব্যাটার সে কি হাসি...সে তো তোমাকে এমনিতেই দেখতে পারে না।তাই সুযোগ পেয়ে সেও গাভনার সাবের তালে তাল মেলাচ্ছে।তোমার নামে মিথ্যা মিথ্যা কতো কিছু বলেছে!
আমি বিস্মিত,রাগান্বিত,বাকরূদ্ধ।
আমার শরীর কাঁপতে লাগলো।
লম্প দিয়ে আমি বেড থেকে লামলাম।আমার রাগের কাছে মাথা ব্যথা এখন একেবারেই নগন্য,তুচ্ছ।
আমি খালি পায়েই দরোজার দিকে অগ্রসর হলাম।
আলি খপ করে আমার একটা হাত ধরে থামালো।
বললো,
- কই যাও।
- ঐ ব্যাটাদের ধরতে যাই।
- গাভনার সাব তো ঘরে চলে গেছেন।
- শেফ ব্যাটা তো আছে।
- ও তো থাকবে।আমার কথা শোন,এখন শান্ত হয়ে বসো।কাল না হয় দুইটাকে এক সাথেই ধরবে।
আমি বসললাম।
রাগে আমার গা কাঁপছে।
দাঁত কিড়মিড় করছে।
আমাকে দেখে আলি হাসলো।
তার সেই হাসি কি বিদ্রুপ পূর্ণ ছিলো?
না কি তৃপ্তির ছিলো?
তৃপ্তির ছিলো বলেই আমার মনে হলো।
কেন না,সে আমাকে প্রভাবিত করতে পেরেছে।
এতে তৃপ্তি বোধ করাটাই তো তার জন্য স্বাভাবিক।

সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান