সাহিত্যবার্তা : মানবতার বাতিঘর হয়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে একটি সামাজিক ও মানবিক সংগঠন দি ফ্রেন্ডস্ এসোসিয়েশন গত একযুগ ধরে "নিঃস্বার্থ সেবার মধ্যেই পরামন্দ" স্লোগানকে ধারণ করে প্রান্তিক নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, এ অঞ্চলে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্ত মঞ্চ তৈরী করাসহ নানামুখী কাজ করে সকলের ভালবাসা অর্জন করেছে।
সংগঠনটির সাথে জড়িত প্রতিটি কর্মীর রয়েছে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার দারুণ সব অ্যাখান। তাদের নিজেদের শিক্ষা জীবন ছিল নানা প্রতিবন্ধকতায়। শত অভাব অভিযোগের মধ্য দিয়ে চালিয়ে গেছেন পড়াশুনা, অনেকের শুধু শিক্ষা উপকরণের অভাবেই পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে অনেকবার। তবুও তাদের লক্ষ্য থেকে টলাতে পারেনি কেউ। শত বাঁধা অতিক্রম করে এখন তাঁরা প্রত্যেককেই স্ব স্ব জায়গায় সফল। সফলতার এমন আলো ছড়িয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি, তাঁরাও গড়ে তুলেছেন শিক্ষাবান্ধব একটি সামাজিক সংগঠন “দি ফ্রেন্ডস্ এসোসিয়েশন ”। শিক্ষা জীবনে তারা যেসব সমস্যা ফেস করেছে তা যেন আর কোন শিক্ষার্থীদের ফেস করতে না হয় সেই ব্রত নিয়ে কাজ করে সংগঠনটি।
এছাড়াও সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বিশেষ অবদান রাখায় এবছর থেকেই তারা ফ্রেন্ডস্ পদক প্রদান শুরু করেছেন। এবছর কথাসাহিত্যে ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সমাজের জন্য বিশেষ অবদান রাখায় ফ্রেন্ডস্ পদক-২০১৯ প্রদান করেন সিরাজগঞ্জ কাজিপুরের সন্তান কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক রিপন আহসান ঋতুকে। পদক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর দৌহিত্র এবং আলহাজ্ব মোহাম্মাদ নাসিম (এম.পি )র ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। পদক পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে রিপন আহসান ঋতু বলেন; আমি যে মাটিও মানুষদের সাথে বেড়ে উঠেছি, তারাই যখন আমার শিল্পসম্মত জীবনের খোঁজ রাখেন, আমার লেখালেখি নিয়ে আগ্রহ দেখান, আমার ভাল লাগার পালে হাওয়া লাগান তখন আমি দ্বিধাহীন ভাবে বলি আমি কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে। পড়তে পড়তেই আমার লেখালেখির শুরু, সেটাও প্রায় ১ যুগ অতিক্রম করেছে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুটি। একটি গল্পগ্রন্থ ( যাদুর নীল বেলুন) আরেকটি প্রবন্ধের ( অতঃপর প্রহসন), যা মোটাদাগে সাহিত্যের কাছাকাছি অবস্থান করছে। তবে আমার এই আত্মপীড়নে দগ্ধ মুগ্ধ জীবনের চলার পথ অতটা মসৃণ নয়। তাই সে লেখালেখির কারণে পুরস্কার পেতে আমার কোন লজ্জা বা দ্বিধা নেই বরং আমি আনন্দ অনুভব করি। যারা পুরস্কার দেন, তাদের আগ্রহ একজন লেখককে সন্মানিত করা, আর লেখককে সন্মানিত করা মানে লেখাকে সন্মানিত করা । তো এই পুরস্কার পাওয়ার ফলে আমি অবশ্যই আনন্দিত এবং সন্মানিতবোধ করছি। এ আয়োজনের সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এ পুরস্কার আমাকে উত্সাহিত করবে। পুরস্কার কাজের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে। আমি সব বয়সের পাঠকের জন্য লিখি। শিশু-কিশোরদের জন্য আমার লেখা আছে। তাদের ভেতর আত্মসম্মানবোধ গড়ে তোলা, স্বপ্ন দেখতে শেখা এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো আমার লেখার অন্যতম শক্তি বলেই মনে করি। আমার দায়বদ্ধতা থেকে সাহিত্য করে যাবো।
‘দি ফ্রেন্ডস এসোসিয়েশন’ এর আয়োজনে চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন ও মাইজবাড়ী ইউনিয়ন এর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে খাতা-কলম বিতরণ উৎসব-২০১৯ইং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কাজিপুর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ খলিলুর রহমান সিরাজী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ মোঃ শওকত হোসেন ছাকার, ‘দি ফ্রেন্ডস এসোসিয়েশন’ এর সভাপতি মোঃ হামিদুর রহমান সবুজ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফ। উক্ত অনুষ্ঠানে চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের ০৯টি প্রতিষ্ঠানের ১৬০ জন ও মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ০৩টি প্রতিষ্ঠানে ৭৫ জন মোট ২৩৫ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ০৬টি করে বড় খাতা, ০৬টি কলম ও ০১টি ডায়েরী বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ বাবলু, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম, ০২ ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ, এলাকার সুধীজন, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ মোঃ আব্দুল মজিদ বাদশা তালুকদার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অত্র সংগঠনের সহ-সভাপতি ও অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ কামাল পাশা পাভেল।