চাঁদ ঘেঁষা থোপ থোপ মেঘমালা উঁকি দিচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। কোথাও লুকানো তারা, আবার কোথাও মিটিমিটি হাসছে তারা।
হেঁটে চলেছে পাহাড়ি মুকুল, কবি এ আর খান। পেছনে পাঠক অজয় পিছিয়ে রয়েছে। পুনরায় পিছিয়ে। সঙ্গে প্রান্তিক অরণ্য।
ল্যাম্পপোস্ট। সোডিয়াম লাইট।
রাত গভীরে প্রবেশ করছে।
যানবাহন কমে আসছে। সারাদিনের ব্যস্ত রাস্তা বিশ্রামে যাচ্ছে। পদভার, হৈ-চৈ আর হর্ণের কান ধাঁধানো আপাতত নিস্তারে।
এগিয়ে যাচ্ছে চার মহারথী।
সামনে বুড়িগঙ্গা।
গঙ্গা যুগযুগ ধরেই বুড়ি হয়ে আছে পুরনো ঢাকায়।
চার মহারথী জায়গা করে নিয়েছে বিউটি বোডিং-এ। সাহিত্যের স্মৃতিবিজড়িত বিউটি বোডিং। বাংলা সাহিত্যের অনেক রচনাই কালের সাক্ষী হয়ে আছে এ বোডিং-এর কয়েক কক্ষ।
চার মহারথীর এবার ঢাকা সফর, ঢাকা শহরের মতোই ব্যস্ততায়। টাইট প্রোগ্রামে দিন কেটে যায়, ঢাকা দেখা হয় না।
সাহিত্যাড্ডাগুলো ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামের মতো। কবি হওয়ার রেস খেলায় ঢাকা উপযুক্ত স্থান। আড্ডাগুলো রেস খেলার রেফারী!
গ্রামের মানুষ নিয়েই ঢাকা শহর। ঢাকার মানুষ শুধু পোষাক বদলায়। পরিধান করে শহুরে ঐতিহ্য।
সন্ধ্যা এলে ঘনিয়ে আসে রাত।
মহারথীরা শোবার ঘরে ফিরে। বোডিং-এ, বাংলাবাজার।
বাংলাবাজার মানে ছাপাখানা।
পেপার আর কালারের গন্ধে মৌ মৌ রাতদিন ভর।
মন্দ লাগে না মহারথীদের। কারণ, এরাও লেখালেখি করে। এমন গন্ধের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক রয়েছে।
সকালের নাস্তা, লাঞ্চ চলে ঢাকার অচেনা হোটলে।
কিন্তু বাংলাবাজারে এসে ডিনার চলে এক সাদাসিধে রেঁস্তুরায়।
তুণ্ডল রুটি আর সবজির পরে এককাপ দুধ চা। বেশ।
তারপর সাররাত সুখময় সময়...।
রেঁস্তুরায় বসে হাফ ছেড়ে বাঁচে মহারথীরা। সবজির সঙ্গে মুরগি বা খাসির মাংস। অন্য কোনো মাংস এখানে ওঠে না।
তারপরেও বিশ্বাসে টানা পড়ে, ঢাকা শহর বলে কথা!
উঁচু-নিচু দালান-কোঠায় বিশ্বাস-অবিশ্বাস হাবুডুবু খায় পাহাড়ের উপত্যকায় ওঠানামার মতো।
কষ্ট হয় রেঁস্তুরার ছেলেটির জন্য। সযতনে খাবার পরিবেশন করে ছেলেটি। পরিচ্ছন্নতার ছাপ আছে। খাবার শেষে মুখের দিকে টুলটুল করে চেয়ে থাকে ক’টা টাকা বকশিশের জন্য। প্রান্তিক অরণ্য একবার জিজ্ঞাসা করলÑ দৈনিক কয়টাকা পাও? ছেলেটি শান্ত স্বভাবে উত্তর দিলÑ বলতে শরম লাগে।
প্রতি রাতের মতো ডিনার সারে চার মহারথী। সেই ছেলেটি! আপন, আপন রইলো না। যদিও বকশিশ দিয়েই বেরিয়ে এলো মহারথীরা।
সকাল হতে-না হতেই ঢাকা ছাড়বে পাহাড়ি মুকুল, কবি এ আর খান, পাঠক অজয় ও প্রান্তিক অরণ্য।
বাংলাবাজার প্রতি রাতের মতোই একই রূপে বহমান। পথ ধরে সামনে এগুতে এগুতে বুড়িগঙ্গা জলে। পাড়ের সোডিয়াম লাইটগুলো জলের গভীরে মিটমিট করে তারা’র মতোই জ্বলছে।