~রবিঠাকুর
ও সব দিনের রোদ্দুর~
কিছু একটা স্বপ্ন দেখার পর ছদ্মবেশ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন
আমার এতোকালের রবীন্দ্রনাথ ! ঈশ্বর যে ভাবে স্থির চোখে
তাকিয়ে থাকেন, তিনি অতি প্রাচীন ইঙ্গিতে আমাকে বোঝান
ছন্দমিলের অঙ্ক !
এসব স্বপ্ন প্রায় প্রতিদিনই দেখতে হয় ;
শ্রাবণের ধারার মতো কিম্বা আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে "— এসব
আমাকে অহর্নিশ হৃদ পোশাকের অতলান্তে নাড়ায়-চাড়ায় ,
দিনাবসানে জ্যোৎস্না ছড়ায় অন্তর্গত লয়~প্রলয়ে
এই ভাবেই চলছে সময়
চলেছে অদৃশ্যে মনে-মনে কথা
অথচ রবিঠাকুর ; কবিতার নির্জনতা শুধুই কি তুমি নেবে
একক
ইচ্ছাকৃত !!
~নিশিকন্যা এবং প্রেম-সুন্দরী~
শেষ স্তবকের কাছে কী-যে চাবার আছে
মহিষ-মহিষ মেঘের মধ্যে কাঙালের চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে
চোখচুপ আমি , —
এরপরেতে মনের কোণে ফাগুন ধুলো সমুদ্রনীল
এসব নিয়ে সাত-সতেরো স্মরণযোগ্য চিন্তা পাখি গান জুড়েছ ,
এভাবেই প্রতিদিন সহজ সত্যে আখোলা হই
এভাবেই একা একা অতলে ডুবি ; বেশ ভালো লাগে !
নিশিকন্যার কাছে দু'হাত পেতে দিতেই
প্রেম যেন জীবন ভিক্ষা চেয়ে নেয় অচিরেই ****
কোথাকার মহান প্রলয়ে যৌবন এসে হঠাৎ-ই বলে ;
এসো , শরীর দেব !
সব বয়সের ভারে মন খারাপের অতীত থেকে একটা কবিতা
আমার
সাথে গোপনে গোপনে কথা বলে ! তাপে নির্ভয়ে ***
~কবিতাকথা
ও দর্পণ~
এক ছত্র কবিতায় তুরুপের তাস উল্টে গৃহকোণের পিঁপড়েরা
নির্লিপ্ত কামড়ে অঙ্ক পথে হাঁটার ইচ্ছা ত্যাগ করলে ;
আমিও সেই ধারাভাষ্যের বিপরীতে চলে এলাম !
কঠিন এক উচ্চারণ ; সে যেন আমারই তপোবন ঘেঁটে চলে , —
কদিনের ব্রক্ষ্মনাদে নির্ঘুম রাত হঠাৎ আত্মবীজ লুকায়
বহুবিধ বালিশের নিচে ।
আজ সারাদিন চুপ হয়ে আছি
রূপ নাচনের ছন্দ পোড়া গন্ধ আসে বৃষ্টি~বৃষ্টি মেঘলা দিনে
সেই কারণেই এই চোখেতে আমার আমি প্রতিবিম্বহীন ,
এটা কার্যত-ই নীরবতায় আকাশ এঁকেছে আয়নার ঝুপ নদীতে !
কবিতাকথা শিশির জলে গলতে - গলতে আচম্বিতে
জানিয়ে গেল ; আজ সারারাত শুধু কবিতার সাথে
একান্তে
সহবাস হবে !
~ধ্রুপদী কবিতাপট~
নতুন দরজায় তালা না দিলে খুব একটা স্তব্ধতার কথা কে-বলবে, -
ঘুম-ঘুম অযান্ত্রিক মন লুকিয়ে পড়েছে কোন এক কারণে ; সেটা
এই হাত থেকে খসে পড়ে হৃদয়তান্ত্রিক মহা-সমুদ্রে *****
অতলান্তে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একটা কলঙ্কিত কঙ্কাল
স্তব্ধ অথচ ভেতর শুদ্ধু নগ্ন-নগ্ন ব্যঞ্জনা , — কুপ্রভাবে রুষ্ট হতেই
ভেতর থেকে হাজারটা চোখ মন কামড়ে বলে উঠেছিল ;
কবিতারা কিছুদিন ধরে ভা-লো নেই !
হঠাৎ কিভাবে আকাশটা মথার মধ্যে ভেঙে পড়ল ***
কী যেন এক শব্দ শুনে সেই দরজায় তালা ভাঙলাম ! এমনি **
~রোদ্দুর মন এবং অন্য শরীর~
তুই একদিন মধুমাসে শ্রাবণ স্তব্ধতায় এলে আমি একা হয়ে যাই
সেই রোদ্দুর পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে আদিগন্ত দহন জ্বরে , —
শেষ স্তবকের জগৎ যেন ভিন্ন সুরে কথা বলে !
আজকে আমি আঁকছি বসে আমি আমার একার শরীর ,
তবুও কেন মিথ্যা মিথ্যা সব মনে হয় !
এসব কথা ভেতর জুড়ে আদ্যোপান্ত ভিজিয়ে তোলে নগ্নস্নানে ,
কি ভাবে এই সময়-রেখার মধ্যে চলা মৃত্যু ঠেলে ;
সেই কারণেই এই আমাকে দর্পণে তাই লুকিয়ে রাখি
নির্জনতা অন্য শরীর , হয়তো কিছু ভ্রান্ত বাতাস
তবুও যেন আড়াল থেকে লুকিয়ে হাসে ভা-লো-বা-সা !!
~মায়া ঘড়ি~
সন্ধ্যা ছটায়
এখানে চোখ উদ্বাস্তু ; থৈ-থৈ অঢেল জ্যোৎস্না
খেয়ালী দৃশ্যের সীমাহীন প্রদর্শনী
লাইফলাইন বাঁচিয়ে ওই ছায়াপথ , তারপর খাদ্য-পানিয়
কথা হয় কবিতায় ****
স্বপ্নে দেখা নির্মিত নির্ভরতার সীমারেখা
অথবা কেমন আছো ; ব'লে প্রশ্ন করে কয়েক সেকেন্ড একমনে
মায়াঘড়ির শব্দ শোনা — হায় এ যে যতিচিহ্ন নিবিড় কালিমা
কিম্বা অদেখা সংখ্যাগুলোর ভাসান
নয়তো একাকী নির্জন ! !
~ধ্রুপদী কথোপকথন~
সমতল থেকে শূন্যতা ; আমার বাসস্থান
আপাতত লজ্জাবোধের সঙ্গী একমাত্র বহু প্রাচীন কাঁধব্যাগটা !
আর্যপুরুষের মতো নতজানু হয়ে অসাধারণ থাকতেই
চেয়েছি রোজ *** হয়তো বৃষ্টির অতলান্ত দোষে ডুবে
দৃষ্টি মেলে দিয়েছি হে প্রেম তো-মা-র জ্যোৎস্নামোথিত বুকে ।
প্রতিদিন কলঘরের আয়নায় আমি আমার অশেষ নগ্নতা দেখি—
প্রতিদিন একই ভাবে রোদ্দুরে পুড়ি , আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস যেন
প্রেম নিংড়ে বেরিয়ে পরে ঘর থেকে রাস্তায় ! অন্য এক অন্ধকার
নির্বিশেষে জানতে চেয়েছে আমার বাঁধনহারা মনের ঠিকানা , —
অথচ ওই নির্লিপ্ত সিগারেট পুড়িয়ে চলছে আমার হৃদয় ।
কই তোমার চোখের জলে ছাইচাপা যন্ত্রণাগুলি ভেজাও দেখি , —
এতোদিন উপোসী ছিল এই আত্মা , স্মৃতিগুলো শুয়েছিল আমার
চিন্তা আর কল্পনাকে আজন্মকাল মনের দরজাটা বন্ধই ছিল ;
সেখানে ছিল নির্জলা বালি আর বালি *** অথচ আজ ঘুমের
ভেতর থেকে স্বপ্নে দিলে দেখা ! এরপর সেই বন্ধ দরজা তোমার
স্পর্শ পেয়ে খুলে গেল , জানিনা কী কারণ ****
সমস্ত দিনটা আজ জানলার পর্দার মতো নীল ,
তারই মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছি গোপনে ভালোবাসার অগুন্তি রঙ —
তবু যেন রোদ্দুরে পুড়তে ভালোলাগে , তোমার আগুনে প্রিয়তমা ।
সারাটা রাত সাদা পৃষ্ঠায় তোমাকে আঁকি প্রেম আর উত্তাপের
রঙিন আগুনে !!
~রাস্তা এবং ধ্বনি গন্ধ~
রাস্তা শেষ হ'লে কান্নার দাগ চুপচাপ শুষ্ক~শান্ত
অদ্ভুত ছুটি-এ ঘোড়া
রৌদ্র গন্ধ অদম্য ক্ষুধার্ত সাহস ডাকে । রাস্তায় ধরা পড়ে পায়ের
শব্দের ভিতর শীতল স্রোত , —
তবুও অন্যের সাথে পথ চলে সহজ ছায়ারা
গর্ভাবস্থায় থেকে পৃথিবীর রাজপথগুলো স্তব্ধ অত্যাচারে প্রবল
নিঃশ্বাস বিপরীতে ধ্রুম্রনীল ছড়ায় ****
রাস্তা শেষ হ'লে সংকোচ থাকে না পূজারীর হাতের চেটো , —
অন্তর্গত রক্তের মৃদঙ্গ বাজিয়ে কৃপাপ্রার্থী ব'লে ওঠেন নিজস্ব স্বপ্ন
যাকে ছুঁয়ে চুমু খেলে ধন্য বলে মানি আমিও
অতল নাভিশ্বাসে দুরন্ত মিছিল ধ্বনি গন্ধে পালা শেষ করে ***
অথচ রাস্তা থাকে একা , এক মুঠো রোদের মত !!
~ধ্রুপদী কবিতা~
বস্তুতঃ এই নদীর দেশে কবিতা নাকি অভাগীর ছায়া । তাই
সূর্যালোক থেকে চতুর রঙের এক পুরুষ এসে জলচৌকিতে
দাঁড়ায় ! এসব দর্পণে একান্তে দেখছিল নীল মাছি ****
ওই অবাক দর্শনটুকু ওর চোখের জ্বালায় অঘোর হিমে এক দেহ
আগুন সাজিয়েছে । বস্তুতঃ আপাময় ওই ঢেউয়ের ভেতর
অপ্রস্তুতে ঘেমে উঠেছিল কৃষ্ণকোকিল
সঠিক বিন্যাসে নিপাট বিজ্ঞাপন দেখায় অবাধ্য বিষক্রিয়া —
তাই জাদুদন্ড ঠেকিয়ে মৃত্যু এসে আবিষ্কার করে পরবর্তী রহস্য !
চরিত্র নিয়ে ধুন্ধুমার ওই বোকাবাক্সে , —
এই দেশে রক্তের রঙ লাল হোলো কিভাবে , বলুন পিতামহ ?
বস্তুতঃ এই নদীর সঙ্গে অষ্টাদশী নারীর অথবা ওই কবিতার সঙ্গে
একপাত্র ধেনো ; চমৎকার কম্বিনেশন !
বস্তুতঃ পথের নির্দেশ হাড়কাটাগলি নয়তো বারদুয়ারী !!
~প্রহর কথা~
প্রহর ভাঙা সময়ে নষ্ট বিসুখ
যে ভাবে পিছিয়ে এসে ; পারি বলে দিতে
নির্ঘুম হবার একমাত্র কথা ****
তবুও গভীরে ঘোরে ভিন্নশ্রেনীর এক অচ্ছুৎ ছায়া , —
সেই জন্মান্তরের ছায়া আমাকে মধ্যেরাত থেকে তুলে
সহস্র রাতের গল্প শোনায় !
কিন্তু কি-ভাবে আসি আর যাই
সময় থাকে চুপ ; নিভৃত মননে ভাঙে স্মৃতি ছবিগুলো
আমি-তো এভাবেই চলি শরীর জমি খুঁজে
আমি-তো প্রাণচিহ্ন নিয়ে কোথাকার দহন পীড়ায় জ্বলছি !
এখন চুপনীরবে অতলান্তে ডুবে আছি কথা-শব্দহীন
আমার সাথে প্রতিরাতে সহবাস করে
আমার ঈশ্বর !!