মিলি সুলতানা এর কবিতাগুচ্ছ
কবি মিলি সুলতানা
অরূপ রঙ্গে বন্দী মন
তোমার রূপের অরূপ রঙ্গে সত্যিই আমি পাগল
শতাব্দী আগে রূপের বিভায় বন্দী হয়েছি
তোমার অভিমানে গুচ্ছ গুচ্ছ অশোক পুস্প।
কেউ কেউ চতুরতা দিয়ে খায় পৃথিবীকে,
মৃন্ময়ীর গোপন ডানায় রাত্রিকালের স্নিগ্ধ বাতাস।
আমি শপথ নিয়েছি বৃষ্টির কাছে, বৃক্ষের কাছে নমনীয় হব।
গগনে মেঘের সংসার দেখে ঝর্ণারা বিরক্ত হয়।
পরমা সুন্দরী নারী যৌবনের প্লাবনে অহংকারী হয়।
তার দুঃখ মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত
ছড়িয়ে যায়।
শিউলীফুলের খবর এখন আর কেউ রাখেনা।
মনোবেদনায় ভুগি
ধুঁকে ধুঁকে বসবাসের জগতটাকে
আপন করে নিয়েছি।
আকাশে সোনালী পাখিদের হাঁসফাঁসে
চমকে উঠিনি।
বিশুদ্ধ বাতাসে বারূদের তীব্রতায়
বুক কাঁপেনি।
ডাস্টবিনে নবজাত ভ্রূণের কান্নায়
থমকে যাইনি।
পথ চলতে বিষাক্ত সাপ দেখে
পিছু হটিনি।
ধর্ষিতা নারীর নগ্ন লাশ দেখে
দু'হাতে মুখ ঢাকিনি।
নৃশংসতার স্বর্গরাজ্য দেখে
আহাজারি করিনি।
প্রহসনের দীর্ঘায়ু দেখে
অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
খাপ খাইয়ে নিয়েছি নিজেকে।
যদিও এই জগতে আমি অচল মানুষ।
অস্থির কুহক
মৃত্যুনদীর দু'ধারে মাছরাঙা পাখির ছুটাছুটি।
বেগুনি পোশাকের বোতাম বাতিঘরের
কাছে গিয়ে থামে
শরীরময় ছড়িয়ে আছে সুদূরপন্থী হাওয়া।
চোখেমুখে আলস্য নিয়ে
পৃথিবী লিখেছে চন্দ্রিমার রাত।
হন্তদন্তভাবে জীবিকার পথে নিরবিচ্ছিন্ন ঘুরি,
চোখের আড়ালে হারিয়ে গেছে শরৎ হেমন্ত
নতুন দৃশ্য দেখব বলে ঘুম ভেঙ্গে উঠতে চাইনা।
মৃত্যু তো প্রেয়সীর মত আদর করে
বাতাসে সুগন্ধি নিয়ে সন্ধ্যারতি আরম্ভ হয়।
শিল্পের শিরায় শিরায় আসে উত্তেজনা,
মোহময় মিথ্যেগুলি চঞ্চল দৃষ্টির মতো,
জোনাকির মতো উড়ে যায়।
নীলরঙা বলাকা
প্রজাপতিরা বাতাসে এসে উড়ে এসে
মুছে দেবে পুরোনো নি:শ্বাস।
রৌদ্রের প্রতিমার আরেক নাম
আলোর শস্য,
দুপুরের অস্থিরতায় মলিন হাসছে কুহক।
উদাস আঙুলে ভিজা চুলের জট খুলেছে
কোন এক অবলা রমণী।
কুয়াশা ঢাকা নিঝুম রাতে স্বপ্নরা আসেনা
বাঁশীতে ফুঁ দিয়ে বলাকা গান গেয়েছে।
আকাশের বুকে মেঘশিশুদের ঘূর্ণিঝড়
বলাকা হৃদয় কেবল দিন গুনছে।
বোবা যুগের পথে আর ফিরে যাওয়া হয়না
মিহিন কাঁচের জ্যোৎস্না
শুকনো পাতার এমন নিঃসঙ্গ।
কোমল ঠোঁটের নিচে নীলরঙা হাসি
এক ঝলক হেসে বাবলা কাঁটার ঝোঁপে
জোনাকীরা মিলিয়ে যায় !
ভালবাসার রক্তে নেশাময় ভ্রমর হুল ফোটায়।