মেঘবতীকে বলেছি
মেঘবতীকে আমি বলেছি,
তোমার কণ্ঠ দিয়ে চিরে দাও;
তোমার দৃষ্টি দিয়ে আমাকে বিদ্ধ করো;
তোমার তপ্ত রক্ত -অধরের কারুকাজ দিয়ে
একটি চুম্বন এঁকে দাও আমার ললাট বিন্দুতে।
মেঘবতী তুমি সিক্ত করো;
অগ্নি দগ্ধ কদমের হৃদয়।
তোমার কৃষ্ণ কুন্তলে;
আমার বদনের অজস্র বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দাও।
মেঘবতীকে আমি বলেছি -
তোমার প্রেম শ্রাবণে শ্যামল ভূমিতে শুধু নয়,
যেখানে সূর্য শুষে নেয় শীতলতা।
তুমি বর্ষণ করো প্রেমের অমৃত খা খা মরুভূমিতে
হাজার তৃষ্ণার্ত চাতকিনী আকাশ পানে থাকে চেয়ে।
মেঘবতী তুমি মায়াবতী হও; মৃত অরণ্যে।
আমি মেঘবতীকে বলেছি -
তোমার প্রেম সুধা দিয়ে আমাকে স্পর্শ করো ;
তোমার মিষ্টি ঠোঁটে মিলন সুখ দাও আমার ঠোঁটে।
যে শব্দটি এখনো বলোনি।
আমার বাড়ির আঙ্গিনার কুসুম বাগানে
নিবৃত যতনে একটি চারা রোপণ করেছি।
যোগীনি বেশে অপেক্ষা করি
কখন ফুটিবে ফুল তোমার সৌরভ নিয়ে।
ভ্রমরের গুঞ্জন ধ্বনি ছন্দে ছন্দে
মাতাল বাতাস কানে কানে বলবে,
যে শব্দটি এখনো বলোনি তুমি।
পূর্ণিমা চাঁদ হেসে হেসে বলে,
"এখনো কেন ঘুমাওনি মেঘনা রায় তুমি? "
চাঁদ আমায় বলে, সবাই তো প্রেম খোঁজে,
ভালোবাসা বুঝো কি তুমি?
প্রকৃতি হও তুমি, আকাশ, সমুদ্র, অরণ্য
বিচ্ছেদের ভাষা বুঝে না কখনো।
কেউ কোনদিন মরুভূমির ভিতর তপ্ত রোদে
হাঁটবে না কোন নারী প্রেমে।
সাগরের উত্তাল তরঙ্গের আঘাত সহ্য করে
কিনারে এসে বলবে না,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তবে কেন একলা তুমি রাত জাগা পাখি?
শরতের শিশিরে গা ভেজাও।
চাঁদ আমাকে বলে, আমারও ইচ্ছে করে
তোমার সাথে রাত জাগি,
কোন প্রেমিকের আকাশ কাঁপানো প্রতিধ্বনি শুনি,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
প্রেমের জন্য যা কিছু বলো তা সমাপ্তিহীন গান
কেড়ে নেয় সবকিছু এ গল্পের শেষ নাই জেনো।
চাঁদ বাঁশবাগানের আড়ালে লুকায়
আমি ফুল ফুটাতে চেষ্টা করি চারা গাছটায়।
শুনতে চাই, যে শব্দটি
এখনো বলোনি আমায়।
প্রেমের বাঁশরি
কানে বাজে বাঁশি জগতে যাঁরা নারী বিনিতা গোয়ালিনী
নারীর প্রেমে উম্মাদ নর রাধিকা কৃষ্ণের হ্লাদিনী।
যমুনায় উত্তাল ঢেউ, দুরন্ত বাতাস!
নদীর পাড় ধরে রাধা নামে বাঁশি বাজায়, গোয়ালা সে গিরিধারী গোপিনীর হৃদয়
করতে হরণ সম্মোহনী বাঁশরি বাজায়।
কে এলো গো জগতে মানুষের জ্বালা নিভাতে?
প্রেমিক হয়ে কেড়ে নিল হাজার নারীর মন।
শৈশবেই পরিচয়, মন বিনিময়
ঈশ্বরের সকল গুণের আধার তুমি,
তবে কেন এতো দেরি?
তোমার রাধা আয়ান ঘোষের ঘরে।
হে গোয়ালা! তুমি ঈশ্বরের পুরুষ সত্ত্বা,
প্রকৃতি সত্ত্বার যুগলরূপ, তবে কেন বিরহ? বাঁশিতে আগুন ঝরে, তোমারই আরেক শক্তি রূপের,
রাধিকার তরে? চুপটি করে থাকো প্রিয়ে,
শুনো আমার বিরহ সুর,
তোমার লাগিয়া মুরালি কাঁদে দিবা নিশি মোর।
হৃদয়ের ক্ষত রাখিয়া হৃদয়ে হাস্যমুখে কৃষ্ণ রাধাকে বলে,
" সংসারের ঈশ্বর আমি অবতার রূপে একজন মানুষ,
পিতা মাতার আজ্ঞা পালন করি, তুমি আমার শক্তি স্বরূপা
দেবতালয়ের প্রতিশ্রুতি হেতু তুমি লক্ষ্মী রাধা রূপে নববধূ।
থাকো আর কিছু দিন নপুংসক স্বামী আয়ানের ঘরে,
জগত সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি"।
বর্ষার উচ্ছ্বাসে শ্রাবণ ধারায় সাগরে মিশে জল
আলাদা কি করা যায় কোনটা সাগরের কোনটা বৃষ্টির জল?
তেমনি তুমি আমি একই মানবাত্মা আর পরমাত্মার রূপ
নিজের সাথে নিজের কি করে বিয়ে হয়?
এ প্রেম এ বিলাপ জগতের শুভ্র আত্মার মুরালি সুর,
রাধা কৃষ্ণের নয়নের জলে সাজিল নিধুবন
চির বিরহ যমুনার কুল।
রাধা শুধু গোয়ালিনী নয় সকল গোপিনীর রাসলীলায়
অংশীভূত দীব্য শক্তির মূলীভূত আধার।
এ প্রেম প্রচণ্ড ব্যাকুলতা, যমুনা শান্ত হবার নয়,
রাধিকার প্রেম মেঘের উপর ভেসে অশ্রু বিসর্জন হয়।
জগতের হৃদপিণ্ড দাপড় যুগে আবির্ভাব,
প্রেমের রমনীয় উদ্যান করেছেন রচনা বৃন্দাবন ধাম।
ঊষর ধূসর জগতের মাঝে প্রেম
আর মানবতার বীজ করেছেন রোপণ,
সে স্বয়ং ভগবান অবতার রূপে মানুষ দেবকী নন্দন।
কখনো ছলে কখনো বল'এ
স্থাপন করেছেন শান্তি ও ন্যায়।
কেবল রাধা শুনেছে তাঁর বাঁশি নিঝুম রাতে, একবুক দীর্ঘ শ্বাসে।
কি যে গোপন ব্যথা হারানোর ভয়,
প্রাণের ভাষা রাধিকার হলো জীবন্ত।
বিনয় করে বলিলেন রাধা,
" এ বাঁশি আর কখনো বাজাবে না তুমি,
হৃদয়ে রক্তের ধারা বয়!
" শুনিয়া মর্মোক্তি রাধার, ভাঙিল বাঁশি
উচ্চ ন্বরে কাঁদিয়া উঠিল যমুনার জল।
কুঞ্জ বনের কুসুম ঝরিয়া পড়িল,
পাখিরা উড়িল আকাশে ত্যাগ করিল বৃন্দাবন।
আকাশ কাঁদিয়া পুস্প বৃষ্টি করিল বর্ষণ
ঈশ্বরের সত্বা করিল ত্যাগ নিষ্কাসিত করিল প্রাণ প্রেম রূপিণী রাধা, রম্য বাগ স্তব্ধ হলো
বিলিন হলো পরমাত্মার রূপ কৃষ্ণের দেহে।
উদ্ভাসিত জগত অলৌকিক আলোর আভায়,
দুটি হৃদয় মুখোমুখি জীবাত্মা আর পরমাত্মা;
কৃষ্ণ এবং আরাধ্য মানব, রাধা রূপী।