গল্পকার : মোহাম্মদ জসিম
বৈবাহিক সুখ মন্ত্রণালয়
প্রতিটি বেডরুমে ঢুকে পড়েছে মনখারাপ, দম্পতিরা
নিচ্ছেন এন্টি ডিপ্রেশন ড্রাগস...
সকলেরই
দাবী—তার ভিতরে ভালবাসার কমতি নেই, যদিও তাদের সঙ্গী
টি তাদের সাথে একমত হতে পারছে না।
রাষ্ট্রের
বৈবাহিক সুখ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় গবেষণায় নামলো এই অদ্ভুতঅ-সুখের কারন উদ্ঘাটনে। জারী
করলো নতুন পরিপত্র। মধ্যবর্তীকালীন
বিবাহেরআয়োজন হবে, প্রত্যেক
পুরুষ ও নারী এতদিন বয়ে বেড়ানো সঙ্গীটিকেই পুনরায় বিয়েকরবে। যদি কেউ সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীকে বিয়ে করতে
সম্মত না থাকে, সেক্ষেত্রেস্বেচ্ছায় সে
তার সঙ্গীকে পরিত্যাগ করতে পারবে।
ফল
হলো বিস্ময়কর! খুব অল্পসংখ্যক দম্পতিই পুরনো মানুষটির হাত ধরতে রাজি হলো।
যেমন খুশি তেমন সাজো
ছেলেটি
মঞ্চে এসে দাঁড়ালো। বললো—আমি
মানুষ সেজেছি।
তার
কথায় চমকিত হবার মতো কিছু ছিলো না। তার
সাজপোশাকেও কোন বিশেষত্ব নেই।সাদামাটা স্কুলড্রেস পরনে। তবু কেন যেন বিচারকরা হতচকিত হলেন, নড়েচড়েবসলেন।
দ্বিতীয়
প্রতিযোগীটি যখন মঞ্চে এলো বিচারকরা আবারও নড়ে বসতে বাধ্য হলেন। সেবলেছিলো—আমি
ধর্ষক সেজেছি। তার পোশাকও
অবিকল প্রথম ছেলেটির মতো।
তৃতীয়জন
মঞ্চে এলো, বললো—আমি খুনি সেজেছি।
চতুর্থজন
বললো, আমি দূর্নিতীগ্রস্থ রাজনীতিবিদ।
পঞ্চমজন
বললো, আমি দিনমজুর এবং ভোটার।
বিচারকগন
একটু অবাক, তারা দেখছেন তাদের সামনে একইরকম হাত পা চোখওয়ালামানুষ—যেমন মানুষ দেখে তারা অভ্যস্ত, এবং
তাদের সাজপোষাকও অবিকল একরকম। অথচতারা এসেছেন যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতায়, যে
সবচেয়ে ভাল,
ব্যতিক্রমএবং কৌতুহলউদ্দীপক ঢঙে সাজবে তাকেই
প্রথম ঘোষনা করবেন।
বিচারকদের
একজন বললেন, এ কেমন সাজ! সবাই তো অবিকল এক।
আরেকজন
মন্তব্য করলেন, মানুষটিকে প্রথম করা হোক।
অন্যরা
প্রতিবাদ করলেন, কেননা নিয়মানুযায়ী যে ভাল সাজবে সে প্রথম হবে, আর,
এখানে
সবার সাজই একরকম। অতএব সবাই
বিজয়ী।
বিচারকদের
বিতর্ক থামে না। প্রতিযোগিরাও
অপেক্ষা করছেন।
বিভ্রান্ত
বিচারকমন্ডলী শেষপর্যন্ত কাউকেই বিজয়ী করতে পারলেন না। তারা ফিরেগেলেন যার
যার বাড়িতে, যে যার নিজস্ব মুখোশ ও সাজপোষাকের ভেতরে।
সে
রাতে কারোরই ভাল ঘুম হলো না। ভাবছিলেন
শুধু, মানুষ দেখতে অপরাধীর মতো, অপরাধীও
অবিকল মানুষের মতো।
কবিতা
—কে
আপনি?
—
আমি
শব্দ। অভিধান থেকে পালিয়ে এসেছি।
—
কেন?
মানে,
আমার
কাছে কেন!
—
কবিতা
হতে। আপনি তো কবি, তাই না!
খুব
সাবলীলভাবে চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ায় সে, যেন অনন্তকাল এভাবেই বসে ছিলামআমরা। তার
কপালে বিন্দুর চেয়ে সামান্য বড় টিপটিকে এই প্রথম মনে হলো পৃথিবীরশ্রেষ্ঠ বিস্ময়।
না—প্রেম
পার্কের
নির্জন কোনটিতে...
আজই
প্রথম দেখা, প্রথম ছোঁয়া, প্রথম চুম্বন।
আশ্চর্য
অনুভূতি—অপার্থিব আনন্দ। অজানা
শিহরন ক্রমশ জ্বরের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে।
হাত
চলে যায় হাতে, কোমরে, বুকে।
বুকে
হাত দিয়ে নায়কটি অবাক, হাত দু'টো বিবশ। বুকটি পুরুষের মতো সমতল।
নায়কের
চোখে প্রশ্নবোধক। তার হাত স্তন
খুঁজে পায়নি।
নায়িকাটি
হাসে, উল্টে দেয় হতাশ প্রশ্নবোধকটিকে। "ভেবেছিলাম, হৃদয়টা খুঁজবে তুমি। তাই ওগুলো বাড়িতেই রেখে এসেছিলাম"।
ফাঁসি
পুলিশ
আমাকে সার্চ করে জামার পকেটে পেল তিন-চারটে মানুষ। তিন? নাকি চার? আকস্মিকভাবে
পুলিশের মুখোমুখি হওয়ায় আমি একটু নার্ভাস হয়েপড়েছিলাম,
যে
কারনে সংখ্যাটি নিয়ে দ্বিধা তৈরি হলো। পুলিশের
খাতায় চারটেইলেখা হলো।
ফলে,
সন্দেহ
ও কৌতুক নিয়ে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে হাজতে নিয়ে গেল।
আমার
সঙ্গে যে ছোট হাতব্যাগটি ছিলো, তার মধ্যে তন্ন তন্ন করে কিছু একটাখুঁজলো তারা। তাদের
হাতানোর ভঙ্গিটি বলছে, তারা আসলে কি খুঁজছে সে বিষয়েতারা নিজেরাও নিশ্চিত নয়।
আমি
মাদক নেই না, অতএব তেমন কিছু যে পাবে না তা তো জানা। অস্ত্র নেই, পরিধেয় বস্ত্র নেই, চিরুণি
আয়না চশমার খাপ—কিছুই নেই। এমনকি
দেয়াশলাই কিংবাসিগ্রেটের প্যাকও। একটা পতন্ডুলিপি ছিলো, দর্শনের
নতুন যে বইটি লিখছিলাম, তার। ওরা পান্ডুলুপিটি নেড়েচেড়ে দেখলো, পুলিশের এসআই
বললেন—বইটি সম্ভবতরাষ্ট্রের
জন্য ক্ষতিকর কিছু হবে।
রাষ্ট্র
সবসময়ই এত সন্দিহান কেন থাকে আমি জানি, এজন্যই ''সম্ভবত"
শব্দটি তার খুব প্রিয়।
প্রশাসনের
তৎপরতায় আমি মুগ্ধ। আধাঘন্টার
মধ্যেই আমাকে নেয়া হলো ডিবি অফিসে, তারও ঘন্টাখানেক বাদে এলো প্রাথমিক
তদন্ত রিপোর্ট। এদেশে এত
দ্রুত কাজ হয়জেনে আমি খুশি হলাম, স্বভাবসুলভ
কারনেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম সাধারণ মানুষএসবের
সুফল পাচ্ছে কিনা!
তদন্ত
রিপোর্টটি বেশ চমৎকার। আমার পকেটে
পাওয়া চারজন মানুষের একজন ধর্ষক, একজন খুনি, তৃতীয়জন
আত্মহত্যা করেছেন এবং শেষেরজন নিখোঁজ।
বললাম—ধর্ষকটি
আমার ভাতিজিকে রেপ করেছিলো। তারা
আমাকে প্রশ্ন করলো—আপনি সাহায্যকারী ছিলেন না তো!
একজন
দার্শনিক এবং গল্পকার হিসেবে আমাকে যথেষ্ট সময় নিয়ে মানুষ পড়তে হয়। এই চারজনকে পড়ছিলাম কদিন ধরে।
যেহেতু
আমি ধর্ষনের কারন বলতে পারছি না, খুন কিংবা আত্মহত্যার পেছনেও আমারকোন ভূমিকা নেই—সেহেতু আমি কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। কোর্টে আমার আইনজীবিওকিছু বলতে পারলেন না। রাষ্ট্রপক্ষ
হেসেখেলেই অঙ্ক কষে দেখিয়ে দিলেন এইসবমানুষের
পরিনতির পেছনে আমার হাত আছে। ফলে
বিচারক একটু মুচকি হেসে আমারমৃত্যুদন্ডাদেশে
সই করে কলমটা ভেঙে ফেললেন। মনে
হলো তিনি খুব তৃপ্ত, অবশ্যরাষ্ট্রকে
সন্তুষ্ট করতে পারা আসলেই তৃপ্তিকর একটি ঘটনা।
আমার
ফাঁসির আয়োজনটিও বেশ রাজকীয় ছিলো। তখন
গলায় ফাঁস আর পিছমোড়া করে বাঁধাহাত নিয়ে আমি
দাঁড়িয়ে আছি ফাঁসিমঞ্চে। হঠাৎই
মনে হলো আমার সামনে এসেদাঁড়িয়েছেন—ঈশ্বর
অথবা শয়তান। তার মুখে
চওড়া একটা হাসি। যদিও,
আমার
ধারনাএটা নিতান্তই হ্যালুসিনেশন। কেন না আমি কোনদিনই ধর্মে বিশ্বাস করিনি।যুক্তি ও
দর্শনই আমার কাছে ঈশ্বরপ্রতিম।
জানতে
চাইলাম, আপনি কে?
সে
বললো, আমি রাষ্ট্র। একটু
বিরতি নিয়ে সে আবারও বলতে লাগলো, Mr. Philosopher. You are such an idiot! You don't know, Every man has two options. He may agree with the state or go to hell.