রহমান হেনরী'র দুটি কবিতা
রহমান হেনরী'র দুটি কবিতা

।। প্রতিবেশী ।।

যে যার দুয়ারে আঁটা খিল।
ভালো হোক, মন্দ হোক— এ নগরে, পাওয়াই মুস্কিল;
তবু যারা আছে, নিকট ও দূর, সকলেই ভালো—
বাড়ির ভেতরে কত আলো
জ্বেলে দিয়ে, সিঁড়িপথ ধু ধু অন্ধকার

একজন তো আমাকে অনেক ভালোবাসে!

প্রতিদিন, পাকে ও প্রকারে ফেলে, খুন করতে চায়,
কিন্তু আমি এমন তাজ্জব; তারই গলায়
কাটাচিহ্ন দেখি। রক্ত দেখি, আর
তারই কাছে ছুটে যাই— সাহসে, তরাসে।

সীমারের মতো দয়া; সেই ভয়ানক
আমাকে আশংকা করে, পালিয়ে বেড়ায়;
কিন্তু আমাকে আরও খুন করতে চায়—

তবে, তাই-ই হোক!

হত্যাস্ত্র জোগাড় করি। চুপিচুপি রেখে আসি— তারই দুয়ারে;
সে তখন অত্যধিক খুন করতে চায়
আর পালিয়ে বেড়ায়;

হায় প্রতিবেশী, আহা রে, আহ্ হা রে!

রে আমার আততায়ী, ভাই, বন্ধু— সুপ্রতিবেশী!
ভয়: তোর প্রেমিকার নাম? সে কি ঋদ্ধা? কৃষ্ণকেশী?

।। অন্ধকার : পরোক্ষ গোধূলি ।।

..............
বাইরে প্রচণ্ড চাঁদ, মাঠ ডাকে— আয়!
নগ্ন-প্রকাণ্ড রাত স্নানরত তীব্র জ্যোৎস্নায়...
ভেতরে প্রচুর মৃত্যু, মুগ্ধ যন্ত্রণায়
ভেতরে জোনাকিস্বপ্ন, শিশিরশীতল ঘুম,

অন্ধকারও আছে; অপেক্ষায়


আশ্চর্য প্রেমিকা তুমি, পাখির ডানার স্বপ্নে নামো প্রতিদিনই।
সময়ের কাঁটায় কাঁটায়, কী ভাবে যে আসো!
তথাপি প্রতীক্ষাগীতে কাটে দিন, বিরহব্যাকুল শীতমাসও...
সংগোপন সঙ্গদানে করেছ তো অতিশয় ঋণী—

তোমার নামার শব্দে নামে ঘ্রাণ, স্মৃতিরাজহাঁসও...


তবে কি আমারই মতো নীরবে এসেই ফিরে যেতে
ভালবাসো? অলখে আঘাত পেতে পেতে
তোমারই গজল শুনি— নৈঃশব্দ্যের সহজ-সম্ভবে;
প্রশ্নপ্রধান গানে ভিজে ওঠা মাঠে, ফিরে কেন আসা তবে
মনোটোনাস প্রার্থনায় মেতে?


নাচের মুদ্রায় উড়ে যাও... আহা! আমারও ডানার লোভ হয়,
ফাল্গুনের এত অন্ধকারে কেন যে শরীরে জাগে জ্বর
কী সুন্দর অক্টোপাস রাত্রি এলে, আমাকে কেবল ডাকে ভয়;
কেন ভয় শিখিয়েছ? তেড়ে আসছে ভয়ের হাঙর...

রাত্রির কাছে রেখেছ কেন ফেলে? রাত্রি তো আমার বউ নয়!


একাকী আঁধার শুয়ে আছে নিঃসাড়
জীবনের সাথে মৃত্যুর অভিসার...
এ রকম রাতে একটি কল্পবেলা
ভালবাসা ছিল বাকি সব অবহেলা

কালো পিপীলিকা ঘিরেছে অস্থি, হাড় ...


রাত্রি, তুমি জেগে ওঠো যার গানে—
আমি বাঁচি সেই বৃষ্টির কল্যাণে;
বৃষ্টি আসেনি, বৃষ্টি আসে না, ধুলো ...
বিমূর্ত আজ অবাক সন্ধ্যাগুলো!

পথে পথে ঘুরি বৃষ্টির সন্ধানে


ফুটেছে গুঞ্জার লাল, সংকুচিত তৃষ্ণা জেগে ওঠে;
বিভিন্ন অগ্নিতে দগ্ধ রাত্রিগুলি কুঁচবর্ণে ফোটে...
বিপুল বিশাল রাত্রি ফুলে ওঠে, দুলে ওঠে ক্ষোভে;

এহেন গুঞ্জারকাল উঠে যাচ্ছে গণ্ডারের ঠোঁটে!
অফুরন্ত অন্ধকারবেলা নামে লোভে ও প্রলোভে...


গতকাল তাকে স্মরণ করিনি, গতকাল ছিল ঘোর,
গতকাল ছিল মৃতবুধবার, জন্মের অগোচর;
মৃতবুধবার মৃত্যুরই মতো অচেতন শুয়ে থাকা—
মেঘের ওপরে বজ্র সাজিয়ে শূন্যবৃত্ত আঁকা...

জন্ম অবধি আঁকছি তো ছবি, গতকাল ছিল ছাড়
গতকাল ছিল খুব বাড়াবাড়ি ধূমায়িত সন্ধ্যার;
প্রতিসন্ধ্যার অনেক স্মৃতি নিউরনে জমা রাখি
গতকাল ছিল শূন্যবৃত্তে শূন্যেরই আঁকাআঁকি

গতকাল ছিল রক্তগোধূলি, আলুথালু শঙ্কার—
এই ‘বার’ শুধু একবারই আসে, আসবে না ঘুরে আর...


বৃষ্টির মতো ঝমঝম সুরে রাত নেমেছিল, নামে...
সেই রাত্রিকে স্বাগত জানাই সেজদা ও প্রণামে;
রাত নেমে এসে হাত পেতেছিল, করেছিল প্রার্থনা।

উপাস্য যদি উপাসনারত, ডাকি তাকে কোন নামে?
পত্রের ছলে তোমাকেই সেই রাত্রি দিয়েছি, খামে...

১০
রাত্রি আমার স্বপ্ন খামার রাত্রি আমার বউ
রাত্রি এলেই উথলে ওঠে নির্জনতার মৌ
রাত্রি আমার হা-হাহাকার রাত্রি আমার সুখ
অবিনশ্বর প্রাণ খুঁজে হই রাত্রিতে উন্মুখ

রাত্রি খুঁড়েই দেখছি নিজের ছিন্নভিন্ন বুক
..............

।। কবিতাগ্রন্থ: অন্ধকারবেলা(২০০৪); প্রকাশক: বলাকা, চট্টগ্রাম।।



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান