কবি - রহমান হেনরী
পত্র এসেছে একা
পত্র লেখোনি, পত্র এসেছে একা—
ডাকঘর কি ইন্ধন দিতে পারে?
ঘরহীন সেও, রয়েছে অন্ধকারে।
দীর্ঘরাতের মৌন আঁধার ফুঁড়ে
পত্র এসেছে— প্রেম মেনেছে যারে,
তার দুয়ারেই স্বয়ং দিয়েছে দেখা।
প্রবাহহীন বাতাসে উড়ে উড়ে
রপ্ত করছে তোমার কণ্ঠ, ঘ্রাণ—
কে বলে পত্র বধির-নিষ্প্রাণ?
আঁধারের ব্যুহ ছিন্ন, ছত্রখান—
পত্র লেখোনি, পত্র এসেছে তবু,
বলছে: ‘‘আমাকে গ্রহণ করো, প্রভু!’’
যারা গীবতকারী, বন্ধুত্বের মুখোশতলে শত্রু,
কেবল তাদের মুখেই তোমার গল্প শুনেছি: বিকৃত—
বহুযুগ আগে বিদেহী, ধংসপ্রাপ্ত, ধূলিস্মাৎ
কোনও নারী বা প্রার্থনাগার কিংবা ভূখণ্ড তুমি।
উত্তরমেরু থেকে দক্ষিণমেরু, পুব ও পশ্চিম
কোথাও আর নাম নিশানা নেই;
কেউ দেখেনি তোমাকে, শোনেনি কণ্ঠস্বর—
একটা শুধু রূপকথার ভেতর— প্রচলিত আছে: তোমার গল্প;
আর প্রবঞ্চকদের মুখে মুখে গুঞ্জন। সূচনামাত্রই
অজগরের প্যাঁচে ভিতর, ক্রমশ, গুটিয়ে গেছে তোমার অস্তিত্ব।
আহ, কিংবদন্তী! অনস্তিত্বপ্রবণ সমুদ্রসৈকতে,
কেবলই: জল, পলিমাটি ও পাথরনুড়ি নাড়ছি
আর অপেক্ষা করছি— সেই মাহেন্দ্র মুহূর্তের, যখন,
আরেকবার, তোমাকে আমি পুনর্নিমাণ করতে পারবো।
.
জুলাইস্মৃতি
.
হয়তো কারও বাতাস-মাখা চুলে
জলঋতু পাঠিয়েছিলো গান—
গানের কলি: গুনগুনিয়ে ওড়ে...
তাহার যদি জাগার কথা ভোরে;
অনেক বেলা ঘুমিয়ে থাকে ভুলে।
আমার শুধু হৃদয়ে আনচান
ধারণ করে, ফাঁপর-লাগা মনে:
সজলমেঘ, আকাশ খুঁজে মরা—
আকাশ তবু পাই না কোনওখানে।
হয়তো কারও গোপন বনে বনে,
সমগ্রকাল অনাশ্রাবণ, খরা—
খবর খাঁটি: এ মনোমেঘ জানে।
.
পঞ্জিকা-দাগানো গান
খুব বেশি দেরি নেই—
এই তো, সামান্য ক'টা ঋতু— পেরোলেই
তরীও হারাবে জল; সাঁতারের খেই—
পাহাড়চূড়াটি নেমে, খুঁজে নেবে— সমতল ভূমি;
বলো, আসছো তো তুমি?
বিল-কেন্দ্রের দিকে, নেমে যাবে জল—
মাঠে মাঠে রৌপ্যরেণু মেলে দেবে শাড়ি;
গাঁদাফুল কনে হবে— গ্রামের গম্বুজে।
দলবেঁধে নেমে আসবে: পাখির দঙ্গল,
শীতের মাছের তেল সুস্বাদু, বুঝে—
পাখির আকাঙ্ক্ষা হবে: খুবই মাছাণ্বেষী;
তোমার কি দেরি হবে, বেশি?
বন্ধ্যা শীতের মাঠ— নাড়ার আগুনে করে ফিকে,
হাত ধরে হেঁটে যাবো, রংঘন ফাল্গুনের দিকে।
আবার খেলবে হাওয়া, সব চাওয়া—
অলিরও বাসনা হবে: পুষ্পমৌসুমী।
কবে আসছো গো, তুমি?
.