রেবেকা ইসলাম'র ৫টি কবিতা
কবি: রেবেকা ইসলাম
.
সুখদর্শন
একটা ডট বিন্দুর ওপর দাঁড়িয়ে আছি যেন
প্রতিদিন ইচ্ছেগুলো ভেসে যায়
কখনো আবদ্ধ থেকে যায় ঘুলঘুলির ভেতর,
তাই বাঁধভাঙা অসুখী একাকী এই নগরের
অতি আপনজন হয়ে যাই,
গোধূলির সহাস্য বিদায়ের পর
অন্ধকার নেমে আসে পায়রার সাদা বুকে
রাত গভীর হতে গভীরতর হয়,
আকাশ তলিয়ে যায় আকাশের রূপে
জোছনার আলোয় ভিজে যায় কবির মন
চাঁদের আলো গলে গলে পড়ে
তারপর জমে যায় অসংখ্য বুকের ভেতর,
শব্দদূষণের এই অনাথ শহরে
মধ্যেরাতে একাকী হেঁটে বেড়ানোর আনন্দ পেতে
এক অনাবিল সুখসাগর অনুধাবনে
বেড়িয়ে পড়ি সংসার সমুদ্র ফেলে।
স্বপ্নদ্রষ্টা
অবরুদ্ধ মেঘেদের তুমুল নিদারুণ কষ্টে
অনিঃশেষ অব্যক্ত শোকে
স্তব্ধ হয়ে গেছে একাকী বটবৃক্ষের শরীর,
অসাড় হয়ে আছে নিস্তেজ ডালের কামনা,
পাতাদের হাহাকার কেউ শোনে না
ক্ষীণ দৃষ্টিভঙ্গির এই ভঙ্গুর সমাজে,
বোঝে না,কোথাও কেউ নেই,
অভিমানী নদীটি একলা চলতে গিয়ে
চকিতে ফিরে ফিরে চায়,
দুকুল ছাপিয়ে বেদনার গান শোনায়,
নেই বাতাসে আহির ভৈরবের সুর
দূরান্ত থেকে ভেসে আসে না মধুবন্তীর আহ্বান;
শুধু দিনান্তে পরিযায়ী পাখিদের কেউ কেউ
তৃষ্ণার্ত ডালে ডালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে
পালকের কোমল স্পর্শ বুলিয়ে যায়,
আর অস্পষ্ট স্বপ্ন দেখায়।
বোধ
যেদিন খড়কুটো হয়ে উড়ে গেলাম
সেদিন তুমি দৌড়েছিলে
আমাকে ধরতে পিছু পিছু,
তোমাকে আটকে দেয় হিংসুটে বাতাস
ধরতে ব্যর্থ তোমার পীত করতল
আলগা করুণ মুষ্ঠিযুগল
তোমার চোখে সেদিন হতাশার মৃত চাঁদ,
আলো নেই অন্ধকারে কবিতারা
ওষ্ঠের ভাঁজে ভাঁজে গ্রীষ্মকাল,
ছন্দের অভাবে তছনছ বিকেলে
আটকেছিল তোমার মন,
আর এমনি দৃশ্যে তুমি বন্দি হলে
ক্যানভাসের চৌকোণে
বন্দী করলো কোন এক আরাধ্য তুলি
তুমি তা জেনেও জানো না
বুঝেও বোঝো না।
আমাকে একা ফেলে
পড়ি মরি করে দ্রুত দৌড়ে এসেও
অহংকারী ট্রেনটাকে ধরা গেল না
সে চলে গেল , হ্যাঁ সে চলে গেল
দাম্ভিকতার ধূলিকণা ছড়িয়ে
অবহেলার হুইসেল বাজাতে বাজাতে
অবজ্ঞার ধূসর ঝাণ্ডা উড়িয়ে
কালো মিশমিশে ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে
আমাকে ব্যঙ্গ করে,উপহাসের অট্টহাসি হেসে।
আমার মুষ্ঠিবদ্ধ আঙ্গুলগুলো শিথিল হয়ে এল
নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে ক্রমাগত ওঠা নামা
উষ্ণ গরম, ওতে চৈত্রমাসের উত্তাপ
বুকের মরুভূমিতে সারি সারি যন্ত্রণার ক্যকটাস
দুচোখে হতাশার টুকরো টুকরো মেঘ
একটা সময় ট্রেনটা রেখায় রূপ নিল
তারপর ছোট্ট একটি বিন্দু হয়ে মিলিয়ে গেল
আমাকে একা ফেলে এই জং ধরা জংশনে।
মানুষ
মুখ থুবড়ে পড়ে গেল হঠাৎ
ঝাঁকড়াচুল ছেলেটা,
বাদামি চৌকো মুখ, শুষ্ক খড়খড়ে ঠোঁট
কালো রাজপথে রক্তের উদ্দাম খেলা,
শুরু হলো পাখিদের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি
আকাশের বুকে উড়ে গেল অশান্ত মেঘ
স্বশব্দে ধেয়ে আসলো বাতাস
পাতাদের সংসারেও অস্থিরতা
রক্তে রেঙে চলে গেল অভিমান করে সকাল,
আসলো তপ্ত ঝাঁজালো দুপুর
সূর্যতাপের শক্তিতে প্রতিবাদী রাগান্বিত
ছড়িয়ে দিল আগুনের তাপ
অস্থির চঞ্চল প্রকৃতি......
কিন্তু মানুষ, হায় মানুষ!
কেউ বসে ,কেউ দাঁড়িয়ে,কেউ চলমান
নির্বিকার নিশ্চুপ নিথর
অন্ধ বধির সবাই।