রোদ্দুর নিপা'র গুচ্ছ কবিতা
রোদ্দুর নিপা'র গুচ্ছ কবিতা
ক্যানভাস

 

একটি সুখের খোঁজে

অনুভূতির কোচড়ে পেয়েছি সহস্র মৃত্যু,

উবে গেছে কবেই ঘুঘুর ডাক

 

ঝরঝর ঝরে গেছে বিবেকের কপাটেরা,

স্বপ্নগুলো বৃদ্ধ হচ্ছে রোজ

 

থেমে যেতে যেতে স্থির হতে দাঁড়িয়ে থাকে

রক্তবাহী হৃৎকম্পন

রাতদুপুরে অস্থিমজ্জায় অপেক্ষার শেষ দাহে

স্মৃতিঘ্রাণ ভুলে ধুলোমাখা ঋণ,

সময়তরঙ্গে অবহেলিত সেতার

অনিয়মের ধারাপাতে

নগরের থোঁকা থোঁকা অদ্ভুত আঁধার

 

রাত এগুতে থাকলে ঢাকা পড়ে নীল নক্ষত্রের দেশ,

সোডিয়াম আলোর চাঁদরে

 

বিবর্ণ অতীত ক্যানভাস

কোলাহল শিরোনাম লিখে  ক্রন্দন উৎসব

 

 

শরৎ

 

বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আড়মোড়া ভেঙে,

ছেঁড়া ছেঁড়া বরফের মেঘ বিস্তীর্ণ জলের উপর নীলের সাথে ঝুলে থাকে স্থির শূন্যতায়

কখনও মাছরাঙা ডানায় দিগন্তবিস্তৃত

জলদ খুনসুটি

 

রঙিন স্বপ্নের আঁচড়ে গগনক্যানভাসে

 আঁকা শরৎ চিঠি যাযাবর পথিক হয়ে ঘুরে বেড়ায়

ডাকঘর ভুলে গেছে আবর্ত আনমনা মন

 

ঘাসের ডগায় শিশির আলপনা নরম রোদে মিশে এক রুপোর সুতোয় বোনা

রোদছায়ার দ্বন্দ্বে পার্বণের দোপাট্টা ছুঁয়ে ঘুড়ি উড়ে বেড়ায় মেলে দিয়ে ঘাসফড়িংয়ের ডানা

একরাশ সাদা কাশফুল দূর নদীতীরে, হেলেদোলে অনিন্দ্য দোলনায়

 

 

স্নায়ুচিত্রে ঘুম

 

একা পাখি ক্লান্ত যখন,

শূন্যতার নগরে নুয়ে পড়ছে বিবশ দুটো ডানা!

শিরায় ঝরছে রক্ত, মগজে ধ্রুপদী

 

তার নীলকণ্ঠের সরু ধ্বনি বিঁধে যাচ্ছে বুকের ভেতর

আহত ডানার ঝাপটায় কাকে খোঁজে পাখিমন

অজস্রবার এই মহাশূন্যে?

 

আলোর রসনায় একাকীত্ব সাথী

ভ্রষ্টস্মৃতি নিয়ে বোবা সময়

ঘুণে ধরা কাঠের ফ্রেমে বন্দী,

পরাধীনতায় ক্লান্ত, ভীষণ ক্লান্ত!

 

সাদাপাতা ছেয়ে যাওয়া কালের ধ্বনি

ভালোবাসা বৃষ্টি, মেঘেদের চিৎকার!

প্রেমের নায়রি উন্মুখ, উদ্বেল কলাবিদ্যায়

ডানা হতে ডানার দূরত্ব মাপে উত্তাপের ধ্যান

 

তবু দোলনচাঁপার পাপড়ি

শিস দিয়ে যায়,

ছড়ায় আনাড়ি প্রেমকাব্য

লোকালয়ের ধোঁয়ায় আড়ষ্ট পাখিচোখ

স্নায়ুচিত্রে ঘুম দেখে এই পৃথিবীর;

ধোঁয়ার পদাবলী তখন খুব মেঘ করে আসে

চোখে জাগে আকাশের বোকা অভিমান!

 

 

 

কথামালা

১.

দেখেছো কি ধ্বংসাবশেষ?

বিধ্বংসী হৃদয়?

হাতে নেওয়া এক প্রাণ?

জেনেছো কি তা?

জন্ম টা সকলের, আনন্দের!

চলে যেতে হয়

নিজের গতি মেনে...??

 

২.

অন্ধকার দেয়ালের মাঝে ভেসে থাকে তোমার ফটোগ্রাফ

রোজ আবছা আলোয় বাঁধে মন স্মৃতি খেলাঘর

ইচ্ছে করে আঁধার ঘোচায় নি..

তোমার রঙ পড়ে আছে ঐ এক কোণে!

 

৩.

নির্ঘুম রাতে তোমার অতীত ঠোঁটের গাঁথুনি কানে বাজে!

যতেœ রাখা আছে তোমার  প্রণয় বাতুলতা

শরৎ রাতের হাওয়া,

অবহেলা শিরোনামে এসে-

 কোলাহল মুছে দিয়ে রেখে যায় নিঃসঙ্গতা!

 

৪.

মেঘবৎ চোখে দেখি তোমার

 প্রিয় উত্তরী আর

 নিহত নক্ষত্র আকাশ

ঢুলান খাচ্ছে বারান্দায়,

চোখের জল  কপোল পেরিয়ে

অঁন্ধকারে  খুঁজছে আপন গতি!

 

৫.

নিয়তির কাঁধে হেঁটে হারিয়ে যায় বারবার

সময় তার নিয়মে  চলে

 আমাকে ভেঙ্গে!

খোঁজার কেউ নেই বলেই যাযাবর ডাকনাম!

তাই স্মৃতির সিন্দুকে তোলা থাক

ভগ্নাংশে অবিভাজ্য আস্থার হাত গুলো!

 

 

অসুখ

 

বহুদিন হল মাথার কোষে কোষে

গনগন করে অনেক গুলো অসুখ

আজকাল,তাই অসুখ খুঁজে বেড়াই,

একটা অসুখের  সন্ধান দিতে পার ?

সহস্র কোটা ছুঁবো...

টুপ করে ঝরে যাওয়া নীল জীবনের

ওপর একটু অসুখের দাবী তো রাখতেই পারি!

এ আর এমন কি চাইলাম?

 

শিষ  দেয়নি আজ ভোরের মুখর পাখি,  তার কি অসুখ হয়েছে?

কিছু অসুখ যন্ত্রণা বীণায় ছিন্ন সুর তোলে না!

কিছু অসুখ পৃথিবীর মতোই একরকম হাসায়

 কি সে হাসির শব্দ!

যেন অসুখের শোকে সুখেরা সুখী হাসি হাসে!



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান